শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতির চিরন্তন প্রেরণার উৎস: রাষ্ট্রপতি

Seba Hot News
0

সেবা ডেস্ক: রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতির চিরন্তন প্রেরণার উৎস।‘রাজনীতিতে তিনি (বঙ্গবন্ধু) ছিলেন নীতি ও আদর্শের প্রতীক’।

শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতির চিরন্তন প্রেরণার উৎস রাষ্ট্রপতি



মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, বাংলাদেশকে জানতে হলে বাঙালির মুক্তি সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানতে হবে, বঙ্গবন্ধুকে জানতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আর জাতির পিতার আদর্শকে ধারণ করে জাতি এগিয়ে যাক ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার পথে, নোঙর ফেলুক বঙ্গবন্ধুর ‘সোনার বাংলায়’।

রাষ্ট্রপতি ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকী’ ও ‘জাতীয় শিশু দিবস’ উপলক্ষে দেওয়া এক বাণীতে এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, ১৭ মার্চ ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকী’ ও ‘জাতীয় শিশু দিবস’। বাঙালি জাতির ইতিহাসে ১৭ মার্চ একটি অবিস্মরণীয় দিন। ১৯২০ সালের এই দিনে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গোপালগঞ্জের নিভৃতপল্লী টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন।

রাষ্ট্রপতি বলেন, বঙ্গবন্ধু আমাদের মাঝে এসেছিলেন বলেই আমরা স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখেছি এবং স্বাধীনতা অর্জন করেছি। আর এজন্যই আজ আমরা স্বাধীন দেশের নাগরিক।

তিনি জাতির পিতার ১০৪তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে মহান এ নেতার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে বলেন, গ্রামের কাদা-জল, মেঠো পথ আর প্রকৃতির খোলামেলা পরিবেশে বেড়ে ওঠা বঙ্গবন্ধু শৈশব থেকেই ছিলেন অত্যন্ত মানবদরদি। কিন্তু অধিকার আদায়ে আপসহীন। পরোপকার আর অন্যের দুঃখকষ্ট লাঘবে তিনি ছিলেন সদা তৎপর। জীবনের প্রতিটি ক্ষণে যেখানেই অন্যায়-অবিচার, শোষণ-নির্যাতন দেখেছেন, সেখানেই প্রতিবাদ করেছেন। মাত্র ১৪ বছর বয়সে ব্রিটিশবিরোধী সভা-সমাবেশে অংশ নেন তিনি। এছাড়া গরিব ছাত্র-ছাত্রীদের লেখাপড়ার খরচ চালাতে ‘মুসলিম সেবা সমিতি’ পরিচালনা করেন। চল্লিশের দশকে এই তরুণ ছাত্রনেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক ও মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর সংস্পর্শে এসে সক্রিয় রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন।

মো. সাহাবুদ্দিন জানান, ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের কিছুদিন পরই তরুণ নেতা শেখ মুজিব বুঝতে পেরেছিলেন, ব্রিটিশ পরাধীনতার কবল থেকে মুক্তি পেলেও বাঙালি নতুন করে পশ্চিমাদের শোষণের কবলে পড়েছে। শাসকগোষ্ঠী প্রথম আঘাত হানে বাঙালির মায়ের ভাষা ‘বাংলা’র ওপর। বাংলা ভাষার দাবিতে ধর্মঘট পালনকালে ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ বঙ্গবন্ধু সচিবালয় গেট থেকে গ্রেফতার হন। এভাবে আন্দোলন-সংগ্রাম ও কারাভোগের মধ্যদিয়েই তিনি বাঙালির অধিকার আদায়ের পথে এগিয়ে চলেন। ১৯৪৮ সালে ‘সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’, ‘৫২’র ভাষা আন্দোলন’, ‘৫৪’র যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন’, ‘৫৮’র সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলন’, ‘৬৬’র ৬-দফা’, ‘৬৯’র গণঅভ্যূত্থান’, ‘৭০’র নির্বাচন’সহ বাঙালির মুক্তি ও অধিকার আদায়ে পরিচালিত প্রতিটি গণতান্ত্রিক ও স্বাধিকার আন্দোলনে তিনি নেতৃত্ব দেন। এজন্য তাকে বহুবার কারাবরণ করতে হয়েছে। সহ্য করতে হয়েছে অমানুষিক নির্যাতন। কিন্তু বাঙালির অধিকারের প্রশ্নে তিনি (বঙ্গবন্ধু) কখনো শাসকগোষ্ঠীর সঙ্গে আপস করেননি।

রাষ্ট্রপতি বলেন, বঙ্গবন্ধু ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বাঙালির আবেগ ও আকাঙ্ক্ষকে ধারণ করে বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা করেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’, যা ছিল মূলত স্বাধীনতার ডাক। একটি ভাষণ কীভাবে গোটা জাতিকে জাগিয়ে তোলে, স্বাধীনতার জন্য মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে উৎসাহিত করে, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ তার অনন্য উদাহরণ। এ ভাষণে বঙ্গবন্ধু শুধু স্বাধীনতার ডাকই দেননি বরং মুক্তিযুদ্ধের রূপরেখা ও ভবিষ্যৎ করণীয় সম্পর্কেও দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন।

তিনি উল্লেখ করেন, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী অতর্কিতে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর আক্রমণ চালালে ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে জাতির পিতা ঘোষণা করেন বাঙালি জাতির বহুকাঙিক্ষত স্বাধীনতা। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দীর্ঘ ৯ মাস সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ‘আমরা অর্জন করি স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ’।

রাষ্ট্রপতি বলেন, মুক্তিযুদ্ধকালীন পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি অবস্থায় শাসকগোষ্ঠী তাকে (বঙ্গবন্ধু) প্রহসনমূলক বিচারের মাধ্যমে ফাঁসির হুকুম দিয়েছিল। অকুতোভয় বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘ফাঁসির মঞ্চে যাওয়ার সময় আমি বলব, আমি বাঙালি, বাংলা আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা’। দেশ ও জনগণের প্রতি তার অসামান্য অবদানের জন্য বাংলা, বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু আজ এক ও অভিন্ন সত্তায় পরিণত হয়েছে।

মো. সাহাবুদ্দিন জানান, স্বাধীনতার পর পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে জাতির পিতা ১০ জানুয়ারি স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতির পুনর্গঠনে তিনি সর্বশক্তি নিয়োগ করেন। দেশকে ‘সোনার বাংলা’ হিসেবে গড়ে তোলার সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। কিন্তু স্বাধীনতাবিরোধী ঘাতকচক্র ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তাকে সপরিবারে হত্যার মাধ্যমে বঙ্গন্ধুর সেই স্বপ্নপূরণ হতে দেয়নি। কিন্তু হায়েনার দল বুঝতে পারেনি জীবিত বঙ্গবন্ধুর চেয়ে লোকান্তরের বঙ্গবন্ধু অনেক বেশি শক্তিশালী।

রাষ্ট্রপতি বলেন, বঙ্গবন্ধু জলে-স্থলে-আকাশে বাংলাদেশের অবস্থান সুদৃঢ় করতে চেয়েছিলেন। তিনি (বঙ্গবন্ধু) আমাদের শিখিয়েছেন কীভাবে শত বাধা বিপত্তি পেরিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছা যায়। ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে তিনি বলেছিলেন, ৭ কোটি মানুষকে দাবায়ে রাখতে পারবা না। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যে দেশ স্বাধীন হয়েছিল, অনেক চড়াই-উৎরাই পার হয়ে সেই বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশ। সব আশঙ্কা ও নেতিবাচক ধ্যানধারণাকে ভুল প্রমাণ করে জাতির পিতার অসমাপ্ত স্বপ্ন বাস্তবায়ন করে চলেছেন তার সুযোগ্য উত্তরসূরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার বলিষ্ঠ ও দূরদর্শী নেতৃত্বে আজ ‘আমরা দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছি একটি উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার অভিমুখে।

Post a Comment

0Comments

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

Post a Comment (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top