সেবা ডেস্ক: টানা চতুর্থ মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকার একটি বড় ধরনের সংকটে আছে। ইতোমধ্যে সরকার পতনের ডাক দিয়েছে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিএনপি-জামায়াতের বিভিন্ন শ্রেণি পেশার লোকেরা। সব কিছু মিলিয়ে একটি চাপের মধ্যে আছে সরকার।
সংকট উত্তরণের পথ কি-এ নিয়ে চলছে নানামুখী নানা আলাপ আলোচনা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে বৈঠক শুরু করেছেন এবং তিনি যথেষ্ট ছাড় দিয়ে সংকট উত্তরণের একটি উপায় বের করার চেষ্টা করছেন। শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতি কি হবে তা বলার মতো সময় এখনও হয়নি।
তবে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য এ ধরনের সংকট নতুন নয়৷ তার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তিনি বারবার সংকট অতিক্রম করে এই জায়গায় এসেছেন৷ ৪৩ বছর আওয়ামী লীগের সভাপতিত্ব করেছেন। ২০ বছরের বেশি তিনি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের সংকট তাকে মোকাবেলা করতে হয়েছে। তার রাজনৈতিক জীবন যেন চড়াই উতরাই প্রতিকূলতাকে জয় করেই তিনি আজকের জায়গায় পৌঁছেছেন। আর এ কারণেই রাজনীতিতে তিনি এক অনন্য মর্যাদার অধিকারী।
শেখ হাসিনার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে যে সংকটগুলো সৃষ্টি হয়েছিল তার দিকে একটু খতিয়ে দেখা যাক;
১৯৮ সালের ১৭ মে শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন। স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের সিদ্ধান্ত ছিল প্রচণ্ড ঝুঁকিপূর্ণ। বাংলাদেশে যেন তিনি না আসতে পারেন সেজন্য তৎকালীন সামরিক জান্তা জিয়াউর রহমান নির্দেশনা দিয়েছিল। এমনকি তাকে হত্যারও হুমকি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু শেখ হাসিনা এসব হুমকি উপেক্ষা করে জনগণের ভালবাসায় সিক্ত হয়ে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেছিলেন।
এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের সময়ও শেখ হাসিনা বারবার সংকটে পড়েছিলেন, বিপর্যস্ত হয়েছিলেন। কিন্তু সেই সংকট তিনি কাটিয়ে ওঠেন। বিশেষ করে ১৯৮৬ সালের মে মাসে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর তাকে ব্যাপক সমালোচনা করা হয়েছিল, অনেকে তার রাজনৈতিক অধ্যায়ের সমাপ্তি দেখেছিল। কিন্তু সেখান থেকে তিনি তার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা দিয়ে আবার জনপ্রিয়তার শ্রেষ্ঠত্বের আসনে আসীন হন।
১৯৮৮ সালে শেখ হাসিনাকে হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছিল চট্টগ্রামে। ২৪ জানুয়ারি তাকে টার্গেট করে গুলি করা হয়েছিল। কিন্তু শেষপর্যন্ত তিনি অলৌকিকভাবে বেঁচে যান। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অভাবনীয় ভাবে পরাজিত হয়। পরাজয়ের পর অনেকেই শেখ হাসিনার রাজনীতির সমাপ্তি দেখেছিল। কিন্তু শেখ হাসিনা তার নিজস্ব প্রজ্ঞাই সেই প্রতিকূলতাকে কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছিলেন। ২০০১ এর নির্বাচনের নির্বাচনে বিপর্যস্ত হওয়ার পর আওয়ামী লীগের পরিসমাপ্তি দেখেছিল কেউ কেউ। আওয়ামী লীগ সে সময় এক গভীর সংকটে নিপতিত হয়েছিল। বিশেষ করে অক্টোবরের নির্বাচনের পর সারা দেশে যেভাবে বিএনপি-জামায়াতের তাণ্ডব চলেছিল, তাতে আওয়ামী লীগ নিধন সময়ের ব্যাপার মাত্র হচ্ছিল। কিন্তু সেখান থেকেও ঘুরে দাঁড়ান শেখ হাসিনা।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল। সেখান থেকে তিনি অলৌকিকভাবে বেঁচে যান এবং রাজনৈতিক প্রতিহিংসার জবাব তিনি শান্তির বার্তার মাধ্যমে দিয়েছিলেন। ২০০৭ সালে এক এগারো সরকার এসে শেখ হাসিনাকে রাজনীতি থেকে মাইনাস করতে চেয়েছিলেন। তখনও হয়েছিল তাকে ঘিরে ভয়ঙ্কর ষড়যন্ত্র। তাকে কারাগারে আটকে রেখে তার রাজনৈতিক জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু সেই চেষ্টাও শেষ পর্যন্ত সফল হয়।
২০০৮ সালের নির্বাচনে বিপুল বিজয় ক্ষমতা গ্রহণ করেন শেখ হাসিনা। ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই সংঘটিত হয়েছিল বিডিআর বিদ্রোহ। সেই বিডিআর বিদ্রোহের মাধ্যমেও সরকারের পতনের চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু শেখ হাসিনা অন্তত সাহসিকতার সাথে পরিস্থিতি সামাল দিতে সক্ষম হন।
২০১২ সালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সময় শেখ হাসিনাকে বড় ধরনের ঝুঁকি নিতে হয়েছিল। সেই ঝুঁকি তিনি কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছিলেন। ২০১৩ সালে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন করে শেখ হাসিনাকে হটানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু সেই চেষ্টাও সফল হয়নি।
২০২৩ সালের নির্বাচনের আগেও এক দফা ঘোষণা এবং বিদেশি হস্তক্ষেপের মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু সেই পরিকল্পনাও ভেস্তে গেছে।
বিভিন্ন সময় সংকট থেকে উত্তরণ করেছেন শেখ হাসিনা তার রাজনৈতিক বিশ্বাস, দৃঢ়তা এবং সাহসিকতার মাধ্যমে। এবারের সংকট থেকে তিনি কিভাবে উত্তরণ পান সেটি দেখার বিষয়।
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।