মোঃ শামীমুল ইসলাম তালুকদার: লাভজনক ভুট্টা চাষের জন্য উপযুক্ত মাটি, অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ বীজ বপনের সেরা সময়। উচ্চ ফলনশীল জাত নির্বাচন, সঠিক বীজহার ও শোধন জরুরি। সুষম সার ব্যবহার, নিয়মিত সেচ ও আগাছা দমন ফলন বাড়াতে সহায়ক। পোকা ও রোগ নিয়ন্ত্রণে দ্রুত ব্যবস্থা নিন। ভুট্টা ধূসর বর্ণ ধারণ করলে কর্তন করুন।
![]() |
লাভজনক ভূট্টা চাষ পদ্ধতি |
ভূট্টার উপযুক্ত জমি/মাটি:
বেলে ও ভারি এটেল মাটি ছাড়া সব ধরনের মাটিতে ভূট্টা আবাদ করা যায়। তবে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা যুক্ত বেলে দোআঁশ ও দোআঁশ মাটি ভূট্টা আবাদের জন্য উত্তম। নিচু রসালো জমিতে ভূট্টা আবাদ না করাই ভালো।
ভুট্টা বীজ বপনের সময়ঃ
মধ্যে অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ। ভূট্টার বীজ বপনের উপযুক্ত সময়।
ভুট্টার জাত নির্বাচনঃ
বর্তমানে কৃষক পর্যায়ে আবাদকৃত সর্বাধিক উচ্চ ফলনশীল জনপ্রিয় ভূট্টার জাত সমূহ
বিঘা প্রতি ৩৩ শতকে শুকনো গড় ফলন। (পরিচর্যার উপর ভিত্তি করে ফলন কম বেশি হতে পারে)
পেট্রোকমঃ
পায়োনিয়ার-৩৩৫৫ বিঘা প্রতি ফলন: ৪২-৪৫ মন)
পায়োনিয়র-৩৩৭৬ (বিঘা প্রতি ফলন: ৪০-৪২ মন)
রাফিদ সীডসঃ
বিজয়-৭১ (বিঘা প্রতি ফলন: ৪০-৪৫ মন)
মহান-২১(বিঘা প্রতি ফলন: ৪০-৪২ মন)
পদ্মা-৫৫ (বিঘা প্রতি ফলন: ৪০-৪৫ মন)
রাসেল সীডসঃ
সম্রাট (বিঘা প্রতি ফলন: ৪০-৪২ মন)
তিস্তা সীডসঃ
ডালিয়া-৪৪৫৫ (বিঘা প্রতি ফলন: ৪০-৪১ মন)
সিভাম-২৩৯ (বিঘা প্রতি ফলন: ৪০-৪২ মন)
জামাল সীডসঃ
মন্ডল- ৩৫ বি ৫৫ (বিঘা প্রতি ফলন: ৪০-৪৩ মন)
পারফেক্ট ৩০ বি ৫১ (বিঘা প্রতি ফলন: ৪২-৪৫ মন)
ব্রাদার্স সীডসঃ
রূপসী বাংলা-৬৬৫৫ (বিঘা প্রতি ফলন: ৪০ মন)
বিজোতা সীডসঃ
বিরাট-৫৫৫ (বিঘা প্রতি ফলন: ৪০-৪২ মন)
ব্রাক সীডসঃ
যুবরাজ (বিঘা প্রতি ফলন: ৪০-৪৫ মন)
আলফা সীডসঃ
রকেট-৫৫ (বিঘা প্রতি ফলন: ৪০-৪২ মন)
ব্যবিলনঃ
সুপার-৫৫ (বিঘা প্রতি ফলন: ৪০ মন)
বাজিমাত (বিঘা প্রতি ফলন: ৪০-৪২ মন)
বায়ারঃ
ডিকাল্ব ৯২১৭ (বিঘা প্রতি ফলন: ৩৮-৪০ মন)
ডিকাল্ব- ৯১৬৫ (বিঘা প্রতি ফলন: ৪০ মন)
ইস্পাহানিঃ
লাকী-৭ (বিঘা প্রতি ফলন: ৪০-৪৫ মন)
এসিআইঃ
ডন-১১১ (বিঘা প্রতি ফলন: ৪০-৪২ মন)
ডিসকোভার-৫৫৫ (বিঘা প্রতি ফলন: ৪০ মন)
ডিসকোভার-৭৭৭ (বিঘা প্রতি ফলন: ৪০-৪১ মন)
অটো ক্রপ কেয়ারঃ
আলাস্কা (বিঘা প্রতি ফলন: ৪০-৪৫ মন)
ফ্যালকন (বিঘা প্রতি ফলন: ৪০-৪২ মন)
ইউনাইটেডঃ
ইউরেকা (বিঘা প্রতি ফলন: ৪০-৪২ মন)
ইউনাইটেড-৫৫ (বিঘা প্রতি ফলন: ৪০-৪২মন)
লালতীরঃ
টারজান-৫৫ (বিঘা প্রতি ফলন: ৪৫-৪৬ মন
PAC-339 (বিঘা প্রতি ফলন: ৪০-৪২ মন)
GT-822 (বিঘা প্রতি ফলন: ৪২-৪৫)
সুলতান (বিঘা প্রতি ফলন: ৪০-৪৩ মন)
নাবা সীডসঃ
নাবা-৫৫ (বিঘা প্রতি ফলন: ৪০-৪২ মন)
থ্রি এসএগ্রোঃ
দূর্জয়-৫৫৭৭ (বিঘা প্রতি ফলন: ৩৮-৪০ মন)
তান্ডব (বিঘা প্রতি ফলন: ৪০ মন)
সরকার এগ্রোঃ
সম্পদ-৯১৫৫ (বিঘা প্রতি ফলন: ৪০-৪৫ মন)
দেশ জেনেটিকঃ
জয়-৫৫৫ (বিঘা প্রতি ফলন: ৪০-৪২ মন)
ফজলু সীডঃ
ফাইজা-৫৫৫ (বিঘা প্রতি ফলন: ৪০-৪২ মন)
ফাতেমা-২৫৫ (বিঘা প্রতি ফলন: ৪০ মন)
বীজহার/বীজের পরিমাণ:
হেক্টর: ২১ কেজি (২৪৭ শতকে)
বিঘায়: ২.৮ কেজি (৩৩ শতকে)
শতকে: ৮৫ গ্রাম
বীজ শোধনঃ
ভূট্টার ফল আর্মি ওয়ার্ম পোকা দমনে ফরটেনজা প্রতি কেজি ভূট্টার বীজে ২.৫০ মিলি হারে সাথে ১০ মিলি পানি দিয়ে বীজ
মিশিয়ে নিবেন। বীজ শোধনের ৮-১২ ঘন্টা পরে বীজ রোপন করা উত্তম।
বীজ বপনঃ
ভুট্টা বীজ সারিতে বুনতে হয়৷ সারি থেকে সারির দূরত্ব ৬০ সেন্টিমিটার বা ২৪ ইঞ্চি এবং বীজ থেকে বীজের দূরত্ব ২৫ সেন্টিমিটার বা ১০ ইঞ্চি
বীজের গভীরতাঃ
ভূট্টার বীজ ২-৩ সে: মি: গভীরতায় রোপন করতে হবে।
বীজ রোপন পদ্ধতিঃ
সারিতে রশি টেনে হাত দিয়ে বীজ রোপন করলে সর্বোচ্চ সংখ্যক চারা গজায় এতে বীজ গজাতে মাটির ঢেলা বাধা গ্রস্ত হয় না।
সার ব্যবস্থাপনাঃ
ভুট্টা গাছের পুষ্টি চাহিদা অনেক বেশি৷ এজন্য অধিক ফলন পেতে হলে ভুট্টা জমিতে সুষম সার দিতে হয়৷
সারের পরিমাণ শতকে
১/ ইউরিয়া ২.৩০ কেজি
২/ টিএসপি ১.৪০ কেজি
৩/ এমপি ১ কেজি
৪/ জিপসাম ৮০০ গ্রাম
৫/ জিংক সালফেট ৪৮ গ্রাম
৬/ বোরন ৪০ গ্রাম
৭/ ম্যাগনেশিয়াম সালফেট ২০০ গ্রাম
জমির ধরন অনুযায়ী কম/বেশি হতে পারে
৮/ গোবর ৪০ কেজি
সারের পরিমাণ (বিঘা প্রতি = ৩৩ শতকে)
১/ ইউরিয়া ৭৬ কেজি
২/ টিএসপি ৪৬ কেজি
৩/ এমওপি ৩৩ কেজি
৪/ জিপসাম ২৬.৪ কেজি
৫/ জিংক সালফেট ১.৫০ কেজি
৬/ বোরন ১.৩০ কেজি
৭/ ম্যাগনেশিয়াম সালফেট ৬.৬০ কেজি
৮/ গোবর ১৩২০ কেজি
টিএসপি সারের পরির্বতে ডিএপি সার ব্যবহার করলে ৪০% ইউরিয়া সার কম প্রয়োগ করতে হবে।
সার প্রয়োগ পদ্ধতিঃ
এক-তৃতীয়াংশ ইউরিয়া এবং অন্যান্য সারের সবটুকু জমি তৈরির শেষ চাষের আগে জমিতে প্রয়োগ করতে হবে। বাকি ইউরিয়া দুই কিস্তিতে জমিতে প্রয়োগ করতে হবে
প্রথম কিস্তি ইউরিয়া সার ৮-১০ পাতা পর্যায়ে
দ্বিতীয় কিস্তি ইউরিয়া সার ৮০-৮৫ দিনে। পুরুষ ফুল ফোটা পর্যায়ে প্রয়োগ করতে হবে
আগাছাঃ
ভূট্টার জমি সবসময় আগাছা মুক্ত রাখতে ভালো। তবে বীজ বপনের ৩০-৪০ দিন পর্যন্ত ভূট্টা ক্ষেত অবশ্যই আগাছা মুক্ত রাখতে হবে।
সেচ ব্যবস্থাপনাঃ
প্রথম সেচঃ
বীজ বপনের ২০- ২৫ দিনের মধ্যে (৩-৫ পাতা পর্যায়ে)
দ্বিতীয় সেচঃ
বীজ বপনের ৪৫-৫০ দিনের মধ্যে (৮-১০ পাতা পর্যায়ে)
তৃতীয় সেচঃ
বীজ বপনের ৮০-৮৫ দিনের মধ্যে (পুরুষ ফুল আসার সময়)
চতুর্থ সেচঃ
বীজ বপনের ১০০-১১০ দিনের মধ্যে (দানা বাঁধার পর্যায়ে) সেচ দিতে হবে৷
পোকাঃ
কাটুই পোকাঃ চারা অবস্থায় কাটুই পোকার আক্রমণ করে থাকে- (ক্লোরোপাইরিফস+সাইপারমেথ্রিন) গ্রুপের কীটনাশক নাইট্রো৫০৫ ইসি/সেতারা ৫৫ ইসি/ক্লোরোসাইরিন৫৫ ইসি/এসিমিক্স ৫৫ ইসি যে কোন একটি কীটনাশক প্রতি লিটার পানিতে ৩ মিলি হারে মিশিয়ে সন্ধ্যায় স্প্রে করে দিবেন।
ফল আর্মি ওয়ার্ম পোকাঃ
কুশির ভিতরে পাতা খেয়ে মল ত্যাগ করে থাকে এ পোকা- ফউলিজেন/সাকসেস/বায়ো স্পিনোসেড/বায়ো বিটিকে/ যে কোন একটি কীটনাশক স্প্রে করতে পারেন।
রোগঃ
পাতা ঝলসানো রোগ:
পাতা ঝলসে বা পুড়ে যাওয়ার মত হলে প্রপিকোনাজল গ্রুপের ছত্রাকনাশক টিল্ট/প্রোটেন্ট/প্রাউড/সাদিদ যে কোন একটি বালাইনাশক প্রতি লিটার পানিতে ১ মিলি হারে মিশিয়ে স্প্রে করে দিবেন।
ফিউজেরিয়াম স্টক রট:
কান্ডের ভিতরে বা গোড়ায় শিকড়ে কালো দাগ পড়ে এমন হলে বিঘা প্রতি ১০-১৫ কেজি পটাশ সার দিবেন এবং কার্বেন্ডাজিম স্প্রে করে দিবেন
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ
ভুট্টার ফুল ফোটা ও দানা বাঁধার সময় কোনো ক্রমেই যেন পানির স্বল্পতা এবং জলাবদ্ধতার সৃষ্টি না হয়।ভুট্টার ধুসর রং ধারন করলেই ক্লে মাড়াই করতে হবে অন্যথায় সবুজ রং এর সময় মাড়াই করলে ফলন অনেক কম হবে।
বীজ রোপনের ৩০ দিনের মধ্যে জমি থেকে অতিরিক্ত চারা তুলে ফেলতে হবে।
চারার বয়স ১ মাস না হওয়া পর্যন্ত আগাছা মুক্ত রাখতে হবে।
জমি বা মাটির ধরন অনুযায়ী সেচের সংখ্যা বেশি হতে পারে।
ডলোচুন শতকে চার কেজি হারে প্রয়োগ করলে ম্যাগনেশিয়াম সালফেট প্রয়োগ করার দরকার নেই।
এছাড়াও
ভূট্টার জমিতে যে কোন ধরনের সমসাময়িক রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণ দেখা দিলে দ্রুত আপনার নিকটস্থ উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা/উপজেলা কৃষি অফিসে পরামর্শের জন্য যোগাযোগ করতে পারেন।
সহকারী শিক্ষক(কৃষি )
জগতপুর উচ্চ বিদ্যালয়
হবিগঞ্জ,সিলেট।
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।