খিলক্ষেত মণ্ডপ বিতর্ক: ভারত-আওয়ামী-ইসকন ষড়যন্ত্র নাকি রাজনৈতিক সুবিধাবাদ?

Seba Hot News : সেবা হট নিউজ
0

সেবা ডেস্ক: বাংলাদেশের রাজনৈতিক এবং সামাজিক অঙ্গনে আজকাল একটি শব্দই সবচেয়ে বেশি শোনা যায়—“ষড়যন্ত্র”। কখনও সেটা বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থা RAW-এর নামে, কখনও স্থানীয় রাজনৈতিক দলের নামে, আবার কখনও বা মিশ্র কেমিস্ট্রির মতো ভারত-আওয়ামী-ইসকনের সমন্বয়ে। 

খিলক্ষেত মণ্ডপ বিতর্ক ভারত-আওয়ামী-ইসকন ষড়যন্ত্র নাকি রাজনৈতিক সুবিধাবাদ


খিলক্ষেত রেলওয়ে জমিতে অস্থায়ী পূজা মণ্ডপ অপসারণ ইস্যুতেও এই পুরনো তত্ত্ব নতুন রূপে ফিরে এসেছে।


সম্প্রতি ঢাকার খিলক্ষেত এলাকায় রেলের জমিতে গড়ে ওঠা একটি অস্থায়ী পূজা মণ্ডপ সরানোকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এবং কিছু রাজনৈতিক চ্যানেলে দাবি উঠেছে যে, এটি সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতনের সাম্প্রতিক প্রমাণ। অথচ বাস্তবতা অন্য কথা বলছে। প্রশাসন, রেল কর্তৃপক্ষ এবং স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে— গত বছর দুর্গাপূজার সময় কোনো অনুমতি ছাড়াই অস্থায়ী মণ্ডপ স্থাপন করা হয়। পরে প্রশাসন শর্তসাপেক্ষে পূজা শেষেই মণ্ডপ সরানোর অনুমতি দেয়। কিন্তু শর্ত ভঙ্গ করে সেটিকে স্থায়ী মন্দিরে রূপান্তরের উদ্যোগ নেওয়া হয়, যা সরাসরি রেলওয়ের জমি দখলের শামিল।


এখানেই প্রশ্ন আসে— তাহলে কেন এমন বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে যে দেশে সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন চালানো হচ্ছে?


বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ঘটনার পেছনে রয়েছে বহুমাত্রিক রাজনৈতিক এবং কৌশলগত উদ্দেশ্য। প্রথমত, ভারতের আঞ্চলিক রাজনীতিতে ইসকনকে একটি নরম শক্তি (Soft Power) হিসেবে ব্যবহার করার প্রবণতা নতুন নয়। তাদের মন্দির ও সামাজিক কর্মকাণ্ডকে কেন্দ্র করে ভারত বিভিন্ন দেশে নিজস্ব প্রভাব বিস্তারের নীতি অনুসরণ করে। বাংলাদেশও এই প্রেক্ষাপটের বাইরে নয়। এখানে ইসকনকে অর্থায়ন ও প্রভাবিত করার অভিযোগ নতুন নয়, বিশেষ করে আওয়ামী ঘনিষ্ঠ অংশের মাধ্যমে স্থানীয়ভাবে তা বাস্তবায়িত হয় বলেই বিশ্লেষকরা মনে করছেন।


দ্বিতীয়ত, রাজনৈতিক সুবিধাবাদ। আওয়ামী লীগের দীর্ঘমেয়াদি রাজনীতি সংখ্যালঘু ভোটব্যাংকের উপর অনেকাংশেই নির্ভরশীল। তাই সংখ্যালঘু ইস্যুতে আবেগ তৈরি করা এবং বিএনপি-জামায়াত জোটকে ‘সাম্প্রদায়িক শক্তি’ হিসেবে প্রচার করা আওয়ামী লীগের পরিচিত রাজনৈতিক কৌশল। খিলক্ষেত ইস্যুতেও এই কৌশলের প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করেন।


তৃতীয়ত, আন্তর্জাতিক প্রোপাগান্ডা। ‘বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন হচ্ছে’ এমন আখ্যান ভারতের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটি তাদের দক্ষিণ এশিয়ায় হিন্দুত্ববাদী রাজনীতিকে বৈধতা দেয়। ভারতীয় মিডিয়ায় ইতোমধ্যে এই ঘটনাকে সংখ্যালঘু নির্যাতনের প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করা শুরু হয়েছে। অথচ বাংলাদেশে প্রকৃত পরিস্থিতি হলো—আইন অমান্য করে রাষ্ট্রীয় জমি দখলমুক্ত করার একটি স্বাভাবিক প্রশাসনিক প্রক্রিয়া।


এখানে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন আসে— ইসকন কেন এই ধরনের স্থাপনা স্থায়ী করার চেষ্টা করছে? বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি শুধু ধর্মীয় নয়, বরং অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের কৌশল। কারণ মন্দির প্রতিষ্ঠা মানে সেই এলাকায় স্থায়ী জমি, দখল, প্রভাব, এবং কোটি কোটি টাকার অর্থপ্রবাহ—যা শুধু ধর্ম নয়, একটি বৃহৎ রাজনৈতিক অর্থনীতির অংশ।


তবে বাস্তবতার প্রশ্নে, বাংলাদেশ সরকার ও প্রশাসন এখন পর্যন্ত সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষায় বহুমুখী পদক্ষেপ নিয়েছে। একইসঙ্গে দেশের শান্তিপূর্ণ ধর্মীয় সহাবস্থানও এগিয়ে চলেছে। তাই এই ধরনের গুজব এবং ষড়যন্ত্রমূলক প্রচারণা দেশের সামাজিক স্থিতিশীলতা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জন্য ভয়াবহ।


এই ঘটনা প্রমাণ করে—বাংলাদেশের রাজনীতি এখনো ষড়যন্ত্রতত্ত্বের ফাঁদে আবদ্ধ। ভারতের আঞ্চলিক এজেন্ডা, আওয়ামী লীগের ভোটব্যাংক রাজনীতি এবং ইসকনের বহুমাত্রিক লক্ষ্য মিলিয়ে তৈরি হচ্ছে এক জটিল সমীকরণ। তবে বাংলাদেশের মানুষের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সত্য হলো—এই অপপ্রচার আর ষড়যন্ত্রের খেলায় ক্ষতিগ্রস্ত হবে রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা এবং বহুকষ্টে গড়ে ওঠা সাম্প্রদায়িক সহাবস্থান।


বাংলাদেশ কারো এজেন্ডার ল্যাবরেটরি নয়। এদেশের মানুষই শেষ কথা বলবে।




সূত্র: /সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশ্যে আপোষহীন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top