সেবা ডেস্ক: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানিতে এক অভাবনীয় সাফল্য অর্জিত হয়েছে। গত নয় বছরে বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক আমদানি কমলেও বাংলাদেশের রপ্তানি বেড়েছে ২৬.৬২ শতাংশ। এই প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের অভূতপূর্ব সম্ভাবনা এবং আন্তর্জাতিক বাজারে দেশের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধির স্পষ্ট ইঙ্গিত।
![]() |
যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিতে বিশ্বজয়: ২৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি, চীন-ভারতকে পেছনে ফেলে নতুন রেকর্ড |
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি সংস্থা ‘অফিস অব টেক্সটাইলস অ্যান্ড অ্যাপারেল’ (ওটেক্সা)-এর প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্বব্যাপী পোশাক আমদানির পরিমাণ ৫.৩০ শতাংশ কমেছে।
একই সময়ে বাংলাদেশ থেকে পোশাক আমদানি বেড়েছে ২৬.৬২ শতাংশ। একই সময়ে বাংলাদেশের প্রতিযোগী দেশ চীনের রপ্তানি কমেছে ১৮.৩৬ শতাংশ, যা বাংলাদেশের এই খাতে নতুন মাইলফলক স্থাপনের প্রমাণ।
অন্যদিকে, ভিয়েতনাম ও ভারতের রপ্তানি যথাক্রমে ৩২.৯৬ শতাংশ ও ৩৪.১৩ শতাংশ বেড়েছে। ইন্দোনেশিয়ার রপ্তানি কমেছে ১৯.৮২ শতাংশ এবং কম্বোডিয়ার রপ্তানি বেড়েছে ১০.৭৮ শতাংশ। এই তুলনামূলক চিত্রে বাংলাদেশের অগ্রগতি উল্লেখযোগ্য।
একই সময়ে ইউনিট মূল্যের দিকেও বাংলাদেশের উন্নতি লক্ষ্য করা গেছে। বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্রের আমদানিতে ইউনিট মূল্য কমেছে ১.৭১ শতাংশ। চীন ও ভারতের ইউনিট মূল্য যথাক্রমে ৩৩.৮০ শতাংশ ও ৪.৫৬ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
অন্যদিকে, ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়ার ইউনিট মূল্য যথাক্রমে ৬.৬৪ শতাংশ ও ৭.৩৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশের ইউনিট মূল্য বেড়েছে ৭.৩০ শতাংশ, যা আন্তর্জাতিক বাজারে দেশের অবস্থান আরও শক্তিশালী করেছে।
ভবিষ্যৎ প্রসঙ্গে শিল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশ বর্তমানে এমন একটি ইউনিট মূল্য ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক গড় মূল্যের কাছাকাছি।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, ‘যখন আমরা আমাদের নিকটতম প্রতিযোগী যেমন ভিয়েতনাম ও ভারতের সঙ্গে তুলনা করি, তখন স্পষ্ট হয় যে বাংলাদেশের ইউনিট মূল্য আরও বাড়ানোর যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। এই উন্নতি রপ্তানির পরিমাণ না বাড়িয়েও মোট রপ্তানি আয় বাড়াতে সহায়ক হতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘২০২৪ সালে চীন ও ভিয়েতনামের রপ্তানি মূল্য প্রায় সমান ছিল, অথচ ভিয়েতনামের রপ্তানি পরিমাণ ছিল চীনের অর্ধেকেরও কম। কারণ, ভিয়েতনাম উচ্চ মূল্যের পণ্য রপ্তানি করে।’ তিনি মনে করেন, ‘কম দামি পণ্য থেকে বেশি দামি পণ্যের দিকে আমাদের মনোযোগ বাড়াতে হবে।’
এই প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য এক বড় সুখবর। পোশাক খাত দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান উৎস। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে এই সাফল্য দেশের অর্থনীতিতে নতুন গতি সঞ্চার করবে।
শিল্প বিশ্লেষকদের মতে, উচ্চমূল্যের পণ্যে মনোযোগ দিলে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক বাজারে আরও বেশি লাভবান হবে। একই সঙ্গে দক্ষ শ্রমিক, উন্নত প্রযুক্তি ও টেকসই উৎপাদন প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে পারলে বাংলাদেশ আগামী দিনেও এই সাফল্য ধরে রাখতে সক্ষম হবে।
অর্থনীতি নিয়ে আরও পড়ুন
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।