সেবা ডেস্ক: রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার চরম অবনতির খবরের মধ্যেই এক নজিরবিহীন ঘটনার সাক্ষী হলো দেশবাসী।
![]() |
| রাতে এভারকেয়ার হাসপাতালে খালেদা জিয়াকে দেখতে গেলেন তিন বাহিনী প্রধান |
মঙ্গলবার দিবাগত রাতে হঠাৎ করেই হাসপাতালের ভিআইপি জোনে উপস্থিত হন দেশের সামরিক বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা। নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে বেগম জিয়াকে দেখতে হাসপাতালে প্রবেশ করেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল এম নাজমুল হাসান এবং বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খান।
রাত গভীর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালের পরিবেশ যখন থমথমে, ঠিক তখনই তিন বাহিনী প্রধানের এই আগমন রাজনৈতিক ও সাধারণ মহলে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) থেকে এই পরিদর্শনের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। দেশের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী, যিনি বর্তমানে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে লড়াই করছেন, তার শয্যাপাশে সশস্ত্র বাহিনীর প্রধানদের উপস্থিতি কেবল সৌজন্যতা নয়, বরং জাতীয় গুরুত্বের একটি বড় বার্তা বহন করে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এর আগেই বেগম জিয়াকে ‘অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’ হিসেবে ঘোষণা করেছিল, আর মঙ্গলবারের এই ভিজিট সেই রাষ্ট্রীয় মর্যাদারই বহিঃপ্রকাশ।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, তিন বাহিনী প্রধান চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং বেগম জিয়ার চিকিৎসার খুঁটিনাটি খোঁজখবর নিয়েছেন। তারা বেশ কিছুক্ষণ হাসপাতালে অবস্থান করেন। তবে এই পরিদর্শনের সময় ভেতরে ঠিক কী আলোচনা হয়েছে বা তারা বেগম জিয়ার সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে পেরেছেন কি না, সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি। তবে তাদের আগমনে হাসপাতালের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয় এবং নেতাকর্মীদের মধ্যে এক ধরনের উদ্বেগ ও কৌতূহল লক্ষ্য করা যায়।
এদিকে মঙ্গলবার দুপুরের একটি ঘটনা পরিস্থিতিকে আরও আবেগঘন করে তুলেছে। হাসপাতালের সামনে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করার সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন বিএনপি চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন। একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসক সচরাচর এতটা আবেগপ্রবণ হন না, কিন্তু বেগম জিয়ার বর্তমান অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি। রুদ্ধশ্বাস কণ্ঠে তিনি বলেন, খালেদা জিয়া চিকিৎসকদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা গ্রহণ করছেন। দেশি-বিদেশি চিকিৎসকরা আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। আপনারা সবাই ধৈর্য ধরুন এবং দোয়া করুন।
ডা. জাহিদের এই কান্না উপস্থিত সাংবাদিক এবং দলীয় নেতাকর্মীদের হৃদয়ে কম্পন ধরিয়ে দেয়। তিনি বার বার অনুরোধ করেন, কেউ যেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোনো গুজব না ছড়ান। তার এই আকুতি থেকেই বোঝা যায়, পরিস্থিতি কতটা স্পর্শকাতর। তিনি জানান, বেগম জিয়ার ফুসফুসে ইনফেকশন ধরা পড়েছে এবং তিনি বেশ জটিল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। তবে আশার বাণী শুনিয়ে তিনি বলেন, আল্লাহ চাইলে তিনি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবেন। চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্য থেকে একটি বিশেষ চিকিৎসক দল আজ রাতেই ঢাকায় পৌঁছানোর কথা রয়েছে। বিদেশি চিকিৎসকরা পর্যবেক্ষণ করার পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে তাকে এই অবস্থায় বিদেশে স্থানান্তর করা সম্ভব কি না।
বেগম খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরেই আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, লিভার ও চোখের সমস্যায় ভুগছেন। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তিনি দীর্ঘ বন্দিজীবন থেকে মুক্তি পান। এরপর চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি উন্নত চিকিৎসার জন্য তিনি লন্ডনে গিয়েছিলেন এবং সেখানে ১১৭ দিন চিকিৎসা শেষে গত ৬ মে দেশে ফিরেছিলেন। কিন্তু গত ২৩ নভেম্বর হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে পুনরায় এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত এক সপ্তাহে তার অবস্থার ক্রমাবনতি হলে তাকে সিসিইউ এবং পরবর্তীতে বিশেষ কেবিনে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়।
মঙ্গলবার রাতে তিন বাহিনী প্রধানের এই ঝটিকা সফর এবং দুপুরে চিকিৎসকের কান্নাজড়িত কণ্ঠ—সব মিলিয়ে এভারকেয়ার হাসপাতাল এখন দেশের সব খবরের কেন্দ্রবিন্দু। রাজনৈতিক ভেদাভেদ ভুলে সাধারণ মানুষ এখন তাকিয়ে আছে চিকিৎসকদের পরবর্তী ঘোষণার দিকে। যুক্তরাজ্য থেকে আসা চিকিৎসক দলের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে বেগম জিয়ার চিকিৎসার পরবর্তী ধাপ। তবে ডা. জাহিদের মতো দেশবাসীও আশায় বুক বেঁধেছে যে, নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আসা ‘আপোষহীন নেত্রী’ খ্যাত বেগম খালেদা জিয়া হয়তো এবারও মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে আসবেন। গুজব এড়িয়ে সবাই এখন মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে তার সুস্থতার জন্য প্রার্থনা করছেন।
সূত্র: /সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশ্যে আপোষহীন
- নিয়ে আরও পড়ুন


খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।