প্রধানমন্ত্রী ও
সংসদ নেতা শেখ হাসিনা সাম্প্রতিককালে অবৈধভাবে মানবপাচার আশঙ্কাজনক হারে
বৃদ্ধিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, অবৈধভাবে মানবপাচারের বিরুদ্ধে শক্ত
অবস্থা নিয়েছে বাংলাদেশ। মানবপাচারকারীদের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি
গ্রহণ করতে সব আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে
মানবপাচার রোধে এই অঞ্চলের দেশগুলো যাতে সমন্বিতভাবে কাজ করতে পারে,
সেজন্যও আমাদের সর্বাত্মক কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। পাচারকৃত
বাংলাদেশি নাগরিকদের দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনতেও সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে।
প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনার সঙ্গে তার জাতীয় সংসদ ভবন কার্যালয়ে সৌজন্য সাক্ষাত্ করেছেন
বিদায়ী সেনা বাহিনী প্রধান জেনারেল ইকবাল করিম ভূইয়া। বৈঠক শেষে
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের বলেন,
বিদায়ী সেনা প্রধান তার দায়িত্ব পালনকালে বাংলাদেশ সেনা বাহিনীর উন্নয়নে
প্রয়োজনীয় নির্দেশনা ও সমর্থন দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আন্তরিক
কৃতজ্ঞতা জানান। একই সঙ্গে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বরত
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ সেনা বাহিনীতে কৃতিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব
পালনের জন্য জেনারেল ভূইয়াকে ধন্যবাদ জানান। অনুষ্ঠানে সেনা প্রধান
‘বাংলাদেশ সেনা বাহিনীর ইতিহাস’ ও ‘মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর
অভিযান’ শীর্ষক দু’টি বই প্রধানমন্ত্রীকে উপহার দেন।
গতকাল
বুধবার জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনে টেবিলে উত্থাপিত প্রধানমন্ত্রীর
প্রশ্নোত্তর পর্বে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। সরকারি ও বিরোধী দলের সংসদ
সদস্যদের প্রশ্নের জবাব প্রধানমন্ত্রী লিখিতভাবে দেন। অধিবেশনে সভাপতিত্ব
করেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।
২০১৪
সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচন পূর্ববর্তী সময়ে এবং বিগত ৫ জানুয়ারি থেকে তিন
মাসেরও অধিক ধরে হরতাল, অবরোধ ও আন্দোলনের নামে নাশকতা-সহিংসতা চালিয়ে
মানুষ পুড়িয়ে হত্যার বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর অবস্থানের কথা পুনর্ব্যক্ত করে
শেখ হাসিনা বলেন, সরকার যেকোন সহিংসতার ঘটনা প্রতিরোধে বদ্ধপরিকর।
নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড যারা ঘটিয়েছে কিংবা যারা এর হুকুমদাতা, তাদের সবার
বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে এবং হচ্ছে। তিনি বলেন,
ইস্যুবিহীন আন্দোলন করে তারা কেবল দেশের সম্পদের ক্ষতিই করেনি, তাদের এসব
কর্মকাণ্ডে দেশের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বৈদেশিক
বিনিয়োগ অনেকাংশে নিরুত্সাহিত হয়েছে। এ সকল নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড ও
অরাজকতার বিরুদ্ধে সারাদেশে বিপুলসংখ্যক মামলা হয়েছে।
সরকারি
দলের সংসদ সদস্য শরীফ আহমেদের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন,
মানবপাচার একটি আন্তর্জাতিক সমস্যা। মানবপাচারকারীরা আন্তর্জাতিক চক্রের
সঙ্গে জড়িত। এ জন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে আরো উন্নত ও অত্যাধুনিক
প্রশিক্ষণ প্রদানে ‘জাতীয় পরিকল্পনা ২০১২-১৪’ প্রণীত ও বাস্তবায়িত হয়েছে।
মানবপাচার প্রতিরোধে ‘জাতীয় কর্ম পরিকল্পনা ২০১৫-১৭’ এর খসড়া প্রণয়ন করা
হয়েছে, যা শিগগিরই প্রকাশিত হবে। এছাড়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবপাচার
প্রতিরোধ সংক্রান্ত কমিটির সভা প্রতি মাসে অনুষ্ঠিত হয়। মানবপাচার বিশেষ
করে নারী ও শিশু পাচার সংক্রান্ত বিচারাধীন মামলার অগ্রগতি মনিটর করার বিষয়
কমিটিতে পর্যালোচনা হয়। তিনি বলেন, মানবপাচার প্রতিরোধে
জেলা-উপজেলা-ইউনিয়ন পর্যায়ে কাউন্টার ট্রাফিকিং কমিটি গঠন করা হয়েছে।
মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমনে ২০১২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি ‘মানবপাচার প্রতিরোধ ও
দমন’ আইন করা হয়েছে। আইনে মানবপাচারের জন্য সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড ও
যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।
শেখ
হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড সমুদ্রপথে অবৈধভাবে বিদেশ গমনকালে আজ
পর্যন্ত এক হাজার ৭৩৬ জন বিদেশগামী নাগরিককে সাগর থেকে আটক করেছে। সরকারের
নির্দেশনা অনুযায়ী বিজিবির ঐকান্তিক তত্পরতায় ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে
২০১৫ সালের মে পর্যন্ত ১ হাজার ৫০০ নাগরিককে উদ্ধার করা হয়েছে।
আওয়ামী
লীগ ও ওয়ার্কার্স পার্টির চারজন সংসদ সদস্যের পৃথক প্রশ্নের জবাবে
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পুলিশসহ অন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিরলস
প্রচেষ্টা ও দৃঢ়তায় বিএনপি-জামায়াত জোটের সকল অপপ্রয়াস প্রতিহত করে জনজীবনে
নিরাপত্তা ও স্বস্তি বজায় রাখতে আমরা সক্ষম হয়েছি। জনগণও আমাদের পাশে ছিল।
তারা অনৈতিক অবরোধ ও হরতাল মানেনি। অপরাধীদের ধরে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর
হাতে সোপর্দ করে আমাদের সহায়তা করেছে। শেখ হাসিনা বলেন, জনগণের জীবন ও
সম্পদের নিরাপত্তা বিধান ও সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখতে সরকার
দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
সংরক্ষিত
মহিলা আসনের সংসদ সদস্য ফজিলাতুন নেসা বাপ্পির প্রশ্নের জবাবে
প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি অনুষ্ঠিত তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু
ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনের চাহিদা অনুযায়ী সরকারের
বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে বলেন, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে দীর্ঘ সংগ্রামের
মাধ্যমে আমরা দেশকে গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। গণতন্ত্রের
এই অগ্রযাত্রা আমরা অব্যাহত রাখবো ইনশাল্লাহ।
সংরক্ষিত
মহিলা আসনের সংসদ সদস্য ওয়াসিকা আয়শা খানের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী
বলেন, বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ এখন শান্তিপ্রিয় গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র।
বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক গুরুত্বের প্রেক্ষিতে
পরিবর্তিত বিশ্ব ব্যবস্থায় বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক এখন বহুমাত্রিক।
বিশ্বে বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে
এবং বাংলাদেশের এই অবস্থান আরো সুদৃঢ় করার লক্ষ্যে আমাদের সুনির্দিষ্ট
পরিকল্পনাভিত্তিক কর্মকাণ্ড চলমান রয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র
মোদীর সাম্প্রতিক বাংলাদেশ সফরসহ বৈদেশিক সম্পর্কোন্নয়নে সরকারের সাফল্য
তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ-ভারত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক নতুন
মাত্রা লাভ করেছে এবং পারস্পরিক সহযোগিতা ও উন্নয়নের নতুন নতুন ক্ষেত্র
উন্মোচিত হয়েছে। বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে আন্তঃসংযোগ
প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে।
বৈদেশিক
সম্পর্কোন্নয়নে সরকার গৃহিত পদক্ষেপগুলোর কারণে বাংলাদেশ একটি
গণতান্ত্রিক, শান্তিপ্রিয়, প্রগতিশীল ও দায়িত্বশীল রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত
হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এতে বহির্বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি ও
অবস্থান যেমন উন্নত ও সুদৃঢ় হয়েছে। একই সঙ্গে প্রবাসী বাংলাদেশিদেরও প্রভূত
কল্যাণ সাধিত হচ্ছে।
ফজিলাতুন
নেসা বাপ্পির এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট
বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি জাতির পিতাকে হত্যার মধ্য দিয়ে জিয়াউর রহমান
সেনা প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করে। হত্যা, ক্যু ও ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে
অবৈধভাবে ক্ষমতা গ্রহণ শুরু হয়।
সরকারি
দলের সদস্য ফরহাদ হোসেনের এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ভারতের
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সফরের সময় বাংলাদেশের সঙ্গে ২২টি চুক্তি,
সমঝোতা স্মারক ও প্রটোকল স্বাক্ষরিত হয়েছে। তিনি বলেন, ভারতের
প্রধানমন্ত্রী ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরে খুবই ফলপ্রসূ ও
গঠনমূলক দ্বি-পাক্ষিক আলোচনা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী
বলেন, মোদী অভিন্ন নদীর পানি বণ্টনের বিষয়টির মানবিক দিকে প্রাধান্য
দিয়েছেন। একে রাজনীতির ঊর্ধ্বে স্থান দিয়েছেন ও তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি
শিগগিরই সম্পাদনের আশ্বাস দিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বিদায়ী সেনা প্রধানের সাক্ষাত্