কূটনৈতিক রেষারেষির মাঝে
কাঁটাতারের বেড়া নিয়ে আছে বিরোধ।
রয়েছে জাতিগত
বিদ্বেষ। সেই
বিরোধ-বিদ্বেষ
থেকেই ঘটেছিল
প্রশান্ত মহাসাগরীয়
যুদ্ধ। যেখানে
প্রতিপক্ষ দুই প্রতিবেশী চিলি আর
পেরু। এমন
দুটি দেশ
যখন ফুটবলে
মুখোমুখি হয়,
সেটা যুদ্ধের
মতোই হয়
বৈকি?
প্রশান্ত মহাসাগরের তীরে এই দুটি দেশের ফুটবলীয় দ্বৈরথটা লাতিন আমেরিকানদের কাছে পরিচিত ‘ক্লাসিকো দেল প্যাসিফিকো’ নামে। যেখানে ফুটবল-শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই তো থাকেই, সঙ্গে বাড়তি উপাদান হিসেবে যোগ হয় রাজনৈতিক সমস্যার রেষ।
কোপা আমেরিকার প্রথম সেমিফাইনালে বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার ভোর সাড়ে পাঁচটায় আরেকবার মুখোমুখি হবে দুই দল। ম্যাচের সময়টা যত এগিয়ে আসছে, উত্তেজনার পারদও চড়ছে পাল্লা দিয়ে।
দ্বৈরথে বাড়তি মাত্রা যোগ করেছে ‘বাইসাইকেল কিক’ নিয়ে চিরাচরিত বিতর্ক। চিলির দাবি, ১৯১৪ সালে ফুটবলে চোখজুড়ানো এই কিক তাদেরই আবিষ্কার। সেই দাবি উড়িয়ে পেরু বলে থাকে, আঠারো শতকের শেষ দিকে তারাই নাকি প্রথম বাইসাইকেল কিক দেখিয়েছিল ফুটবল মাঠে। সেই বিতর্কের সমাধান হয়নি আজও ।
তার ওপর গত কয়েক দশকে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে দুই দলের মধ্যে কয়েকটি বিস্ফোরক ম্যাচ তো জায়গা করে নিয়েছে ‘প্যাসিফিক ক্লাসিকো’র রূপকথাতেই। ১৯৭৪ বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে চিলি ছিটকে দিয়েছিল পেরুকে। চার বছর পরই সেটির শোধও নিয়েছিল পেরু। শেষ করে দিয়েছিল চিলির ১৯৭৮ বিশ্বকাপ খেলার আশা।
সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সে অবশ্য চিলিই এগিয়ে। শেষ দুটি বিশ্বকাপে খেলেছে তারা। গত বছর ব্রাজিল বিশ্বকাপে জায়গা করে নেয় শেষ ষোলোতেও। অন্যদিকে, ১৯৮২ সালের পর আর বিশ্বকাপেই সুযোগ পায়নি পেরু। দুই দলের সর্বশেষ ১০ ম্যাচের ৯ টিতেই জিতেছে চিলি। পেরুর জয় মাত্র একটি ম্যাচে। স্বভাবতই সেমিফাইনালে চিলিকেই এগিয়ে রাখতে হচ্ছে। তবে পরিসংখ্যানকে খুব একটা পাত্তা দিচ্ছেন না কোয়ার্টার ফাইনালে বলিভিয়ার বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করা পেরুর স্ট্রাইকার পাওলো গেরেরো৷
তিনি বলেন, ‘সবাই চিলিকে ফেভারিট বলছে, বলতে দিন। আমরা আগের ম্যাচগুলো যেভাবে খেলেছি, সেমিফাইনালেও সেভাবেই খেলব।’
তাঁর সতীর্থ ক্লদিও পিজারো তো মাঠে নামার আগেই ম্যাচের উত্তাপ বাড়িয়ে দিয়েছেন। বলছেন, ‘আশা করছি, আয়োজক হিসেবে ওরা রেফারির কাছ থেকে কোনও বাড়তি সুবিধা পাবে না। আমি জানি না চিলি-উরুগুয়ে ম্যাচে এই রকম কিছু হয়েছে কিনা। অনেক কথাই হচ্ছে এসব নিয়ে। তবে আশা করি, আমাদের বিপক্ষে এমন কিছু হবে না।’
চিলি অবশ্য এসব কথায় কান দিচ্ছে না। ফর্ম দারুণ হলেও সেমিফাইনালে সামপাওলির দলকে খেলতে হবে ডিফেন্ডার গঞ্জালো জারাকে ছাড়াই। কোয়ার্টার ফাইনালে উরুগুয়ের বিপক্ষে এডিনসন কাভানির সঙ্গে অশালীন আচরণের জন্য তিন ম্যাচে নিষিদ্ধ হয়ে এবার মতো কোপা অভিযান শেষ হয়েছে জারার। তাঁকে না পাওয়াটা দলের জন্য হবে বিরাট ক্ষতি—এটা মানছেন চিলির মিডফিল্ডার ডেভিড পিজারোও। তবে জারাকে ছাড়াও চিলি ম্যাচ জিততে পারবে বলে আশাবাদী পিজারো।
তিনি বলেন, ‘আমাদের দলটা দুর্দান্ত আর আমরা খুব ভালো ফুটবলও খেলছি। আশা করি এবার ফাইনাল খেলবো আমরাই।’