প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী শিল্প উদ্যোক্তাদেরকে গ্যাসভিত্তিক শিল্প স্থাপন থেকে সরে আসার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, আমাদের গ্যাসের মজুদ অনেক বেশি নয়। তাই গ্যাসভিত্তিক শিল্প থেকে সরে আসা দরকার। বহুমুখী জ্বালানি ব্যবহার করে শিল্প স্থাপনে পরিকল্পনা গ্রহণ করা যেতে পারে। এসময় তিনি শিল্পে তরল গ্যাস (এলএনজি), বিদ্যুত্ বা কয়লার উপর ভিত্তি করে শিল্প স্থাপন করার করার পরামর্শ দেন। তরল গ্যাস সহজলভ্য করতে আরও এলএনজি পোর্ট আর করা হবে বলে জ্বালানি উপদেষ্টা উল্লেখ করেন।
রবিবার রাজধানীর একটি হোটেলে বিনিয়োগ বোর্ড আয়োজিত ‘বিনিয়োগের বহুমুখী দিক’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বিনিয়োগ বোর্ডের নির্বাহি চেয়ারম্যান ড. এস এ সামাদের সভাপতিত্বে দুটি পৃথক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সহ-সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন এবং মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির ভাইস প্রেসিডেন্ট আনিস এ খান। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আনিসুল হক।
ড. তৌফিক-ই- ইলাহী চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় তুলনামূলকভাবে কম হলেও সামাজিক সূচকে ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জন করেছে। যা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নেও ভূমিকা রাখছে। তিনি বলেন, শিল্প উন্নয়নের স্বার্থে বিশেষায়িত শিল্প অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। সেখানে ২৪ ঘণ্টা বিদ্যুতের সরবরাহ দেয়া হবে। এছাড়া সারা দেশেই ক্লাস্টার করে করে শিল্পগুলোকে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত্ দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
আনিসুল হক তার বক্তব্যে বলেন, আমাদের দেশে বর্তমানে যে বৈদেশিক বিনিয়োগ আসছে তার বেশিরভাগই সেবা খাতে। কিন্তু বাংলাদেশের প্রয়োজন অনুযায়ী কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে শিল্প খাতে বেশি বিনিয়োগ প্রয়োজন। এতে প্রবৃদ্ধিতেও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। সিটি কর্পোরেশন মেয়র আনিসুল হক আরও বলেন, শিল্পে বিনিয়োগ বাড়াতে হলে জমি, গ্যাস-বিদ্যুত্ ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা লাগবে। এছাড়া বিনিয়োগ সংক্রান্ত কাজে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কমাতে হবে। যে কোন কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার ব্যবস্থা করতে হবে। বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রমেও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অস্বস্তি আছে। তা দূর করতে হবে।
শফিউল উসলাম মহিউদ্দিন বলেন, বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাধা হলো জমির স্বল্পতা, অর্থায়নের স্বল্প সুযোগ, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, রাজনৈতিক অস্থিরতা, দক্ষ শ্রমিকের অভাব এবং দীর্ঘমেয়াদি নীতিমালার অভাব। এক্ষেত্রে দেশের সর্বত্র অব্যবহূত জমি খুঁজে বের করে শিল্পে আওতায় দিতে হবে। জেলাভিত্তিক শিল্প অঞ্চল এবং বিনিয়োগ বোর্ড অফিস করা যেতে পারে।
দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে ত্রুটিমুক্ত এবং টেকসই অবকাঠামোর পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদি সরকারি নীতিমালা চান উল্লেখ করে উম্মুক্ত আলোচনায় বক্তারা বলেন, গ্যাস-বিদ্যুত্ ও রাস্তা ঘাট উন্নয়নের পাশাপাশি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকলে বিনিয়োগ বাড়বেই। তবে শিল্প সংক্রান্ত বিভিন্ন নীতিমালা স্বল্পমেয়াদি হলে উদ্যোক্তারা বিপাকে পড়ে যান। তাই দীর্ঘমেয়াদি নীতিমালা নিতে হবে। পাশাপাশি বৈদেশিক বিনিয়োগ বাড়াতে বাংলাদেশের ব্র্যন্ডিং ইমেজ বাড়াতে হবে। দূতাবাসগুলোতে কমার্শিয়াল বিভাগকে কার্যকরী করতে হবে। বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ওয়ান স্টপ সার্ভিসের সুবিধা দেয়ারও দাবি জানান বক্তারা।