সিলেটে পৈশাচিক নির্যাতনের পর শিশু হত্যার ভিডিওচিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘আমার ছেলে চোর নয়-এলাকার মানুষ জানে। আমি এর যথাযথ বিচার চাই’

S M Ashraful Azom
পৈশাচিক উল্লাস, নির্মম নির্যাতনের পর শিশুটিকে হত্যাকাণ্ডের দৃশ্যাবলী ধারণ করে তা আবার সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে প্রচার। না দৃশ্যটি কোন ছায়াছবির কাহিনী নয়। সিলেট শহর তলীর বাস্তব ও চাঞ্চল্যকর কাহিনী। ছায়াছবির কাহিনীকেও যেন হার মানিয়েছে। সে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্য। দেখলে যে কারো  চোখে জল এসে যাবে। ব্যথায় বুক ভরে যায়।
 
 
শেখ সামিউল আলম রাজন (১৩) নামের ওই শিশুটিকে চুরির অভিযোগে পাষণ্ডরা ঠিক কতটা সময় ধরে পিটিয়েছে তা বলা যাচ্ছে না। তবে তাকে নির্যাতন করার প্রায় আধাঘণ্টা একটি ভিডিও ক্লিপ এখন অনেকের হতে। বিষয়টি নিয়ে সিলেট জুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। বিভিন্ন মহল থেকে দাবি উঠেছে এ পৈশাচিক হত্যাকরীদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক বিচার করা হোক।
 
ভিডিও দেখা গেছে, রাজনকে নির্যাতনের সময় ঘাতকরা সিলেটের আঞ্চলিক ভাষায় তাকে বলে তোকে কীভাবে মারব বল, আমাদের সব পদ্ধতি জানা আছে। এই বলে তারা রোল দিয়ে তার পায়ে নির্মমভাবে মধ্যযোগীয় কায়দায় পেটাতে থাকে। এ সময় রাজন কাঁদতে কাঁদতে মিনতি করে বলে, আড্ডি‘র মধ্যে মার দিওনা, একটা মেরেছো খুশি আছি। তবুও তাদের প্রাণে একটু দয়া জাগেনি। বরং ঘাতকদের একজন বলে, একটা খেয়ে খুশি, দুটা খেলে ডবল খুশি! এই বলে তারা উল্লাসে ফেটে পড়ে।
 
লোমহর্ষক এই নির্যাতনের ভিডিও চিত্র ফেসবুকের মাধ্যমে সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। নির্যাতনকারীরাই সেটি পরিকল্পিতভাবে তুলে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছে। লাইভ নির্যাতনের এই ভিডিওটিও তারা নিজেরাই ফেসবুকে আপ লোডকরেছে।
 
এ সময় শিশুটির স্পর্শকাতর অঙ্গে বারবার খোঁচানো হয়েছে। রোলার দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। বন্ধ মার্কেটের একটি পিলারের সাথে তাকে পিছমোড়া করে বেঁধে রাখা হয়। বাঁধন খুলে মাটিতে ফেলেও তাকে নানাভাবে নির্যাতন করা হয়। টানা ২৮ মিনিটের ভিডিওটিতে দেখা গেছে নির্যাতন সইতে না পেরে শিশুটির আর্তচিৎকার। এ সময় ছায়ছবির দৃশ্যের মত অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে ঘাতকরা। একপর্যায়ে শিশুটি পানি খাওয়ার জন্য বারবার অনুরোধ করে। তারপরও নির্যাতনকারীদের এতটুকু দয়া হয়নি। তারা তাকে শরীরের ঘাম খেতে বলে। এর পর রাজনকে হাতের বাঁধন খুলে রশি লাগিয়ে হাঁটতে দেওয়া হয়। ঘাতকরা ভেবেছিল রাজন বুঝি হাঁটার শক্তি হারিয়ে ফেলছে।
 
 
কিন্তু ভয়ে ভয়ে হাঁটতে থাকা শিশুটিকে উদ্দেশ্য করে তারা বলে হাড়গোড় দেখি এখনো ঠিক আছে। আরও মারো এরপর রাজনের বাঁ হাত খুঁটির সঙ্গে বেঁধে রেখে আরেক দফা পেটানো হয়। এ ভাবে দফায় দফায় শিশুটির নখে, মাথা, পেট ও উরুসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে রোল দিয়ে আঘাত করা হয়। এক সময় বাঁ হাত ও ডান পা ধরে মুচড়াতেও দেখা যায়। ভিডিওটি এতটাই নির্মম আর পৈশাচিক যে কেউ দেখলে শিহরে উঠবে।
 
এরপর তারা তাকে হত্যা করে। এই অপরাধ কর্মে ৫/৬ জন জড়িত ছিল। ভিডিওটি জালালাবাদ থানা পুলিশ উদ্ধার করেছে। 
 
সিলেট-সুনামঞ্জ রোডের কুমারগাঁও বাসস্টেশন এলাকার বড়গাঁওস্থ সুন্দর আলী মার্কেটের একটি ওয়ার্কশপের সামনে বারান্দার খুঁটিতে বেঁধে রেখে নির্যাতন ও হত্যা করা হয়।
 
রাত ১১টার দিকে একটি মাইক্রোবাস থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। পরে খবর পেয়ে থানায় গিয়ে পরিবারের সদস্যরা লাশ সনাক্ত করেন।
 
এ ঘটনায় সিলেট মহানগর পুলিশের জালালাবাদ থানায় পুলিশ বাদী হয়ে হত্যা মামলা করে। মামলায় রাজনের লাশ ফেলার সময় হাতেনাতে আটক মুহিত ও তার ভাই কামরুল ইসলাম (২৪), তাদের সহযোগী আলী হায়দার ওরফে আলী (৩৪) ও চৌকিদার ময়না মিয়া ওরফে বড় ময়নাকে (৪৫) আসামি করা হয়েছে।
 
মামলার অন্য আসামিদের গ্রেফতার করতে গতকাল শনিবার রাতে কুমারগাঁও এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে যৌথবাহিনী অভিযান চালালেও কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি।
 
মামলার তদন্তকারী অফিসার জালালাবাদ থানার (ওসি-তদন্ত) আলমগীর হোসেন জানান, আসামিদের ধরতে তারা জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। পুলিশ হেড কোয়ার্টারসহ বিভিন্ন স্থানে এ সম্পর্কে বার্তা পাঠানো হয়েছে।
 
উল্লেখ্য, রাজনের বাড়ি কুমারগাঁও বাসস্টেশন পার্শ্ববর্তী সিলেট সদর উপজেলার কান্দিগাঁও ইউনিয়নের বাদেআলী গ্রামে। রাজনের বাবা শেখ আজিজুর রহমান পেশায় একজন মাইক্রোবাস চালক। তার দুই ছেলের মধ্যে রাজন বড়। অনন্তপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করা রাজন সবজি বিক্রি করত। 

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top