অচলাবস্থা নিরসনের দ্বারপ্রান্তে ইরান

S M Ashraful Azom
ইরানের পরমাণু ইস্যু নিয়ে একটি চূড়ান্ত বোঝাপড়ায় আসার জন্য ছয়টি ক্ষমতাধর দেশ শেষবারের মতো মঙ্গলবার পর্যন্ত সময় নিয়েছে। এর আগে এ নিয়ে দু’পক্ষই কয়েকটি ডেডলাইন হাতছাড়া করে। পরমাণু ইস্যু নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে ইরানের ১৩ বছর ধরে চলা অচলাবস্থা নিরসনের সম্ভাবনা এখন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি।
 
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রশাসনের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা বলেছেন, 'আমরা এখন একটি সমঝোতায় পৌঁছাতে যাচ্ছি।' এর আগে ৩০ জুন এরকম একটি পরমাণু ইস্যুতে একটি চূড়ান্ত সমঝোতায় পৌঁছানোর সময়সীমা পার হয়ে গেলেও হাল ছেড়ে দিতে রাজি হয়নি কোন পক্ষ।
 
পরমাণু সমঝোতার মাধ্যমে ইরানের সবচেয়ে বড় লাভ অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞাগুলোর যাঁতাকল থেকে মুক্তি পাওয়া। অন্যদিকে পশ্চিমা দেশগুলো চায় সন্দেহমূলক প্রতিটি পরমাণু স্থাপনায় আন্তর্জাতিক পরিদর্শকদের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা।
 
এ নিয়ে উভয়পক্ষের বিশেষজ্ঞরা শেষ সময়ে এসে রাতদিন কাজ করে যাচ্ছেন। শনিবার তারা দীর্ঘ সময় আলোচনা করেন। আলোচকরা বিষয়টি নিয়ে রবিবার ফের ভিয়েনায় বৈঠক করেন। এ ব্যাপারে প্রাথমিক সমঝোতা অনুসারে ইরান পরমাণু কর্মসূচি সীমিত করেছে কী না জাতিসংঘের পরমাণু নজরদারি সংস্থা আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ) তার সত্যতা নিরূপণ করবে।
 
বৃহস্পতিবার আইএইএর প্রধান ইয়োকিয়ো আমানো তেহরান সফর করেন। তিনি ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির সঙ্গে বৈঠক করে সেদেশের কিছু সামরিক স্থাপনা পরিদর্শনের অনুমতি চেয়েছিলেন কিন্তু তার এ প্রচেষ্টা সফল হয়নি বলে সংস্থাটি পরে এক বিবৃতির মাধ্যমে জানায়। কিন্তু পি ফাইভ প্লাস ওয়ান নামে পরিচিতি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচটি স্থায়ী সদস্য ও জার্মানি নিয়ে গঠিত হয় ছয় বিশ্বশক্তি এতে দমে যায়নি।
 
শনিবার ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাওয়াদ জারিফ বলেন, যে উভয়পক্ষ আগের যে কোন সময়ের চেয়ে একটি সর্বাত্মক সমঝোতা চুক্তির অনেক কাছে অবস্থান করছে। উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ২৪ নভেম্বর জেনেভায় ইরান ও ছয়টি দেশের মধ্যে সম্পাদিত প্রথম সমঝোতা চুক্তির (জয়েন্ট প্ল্যান অব একশন) পরিণত রূপ হল এ বছর এপ্রিলের গোঁড়ার দিকে সম্পাদিত মতৈক্য। তবে ফ্রেমওয়ার্ক বা সমঝোতা চুক্তি হলেও কম্প্রিহেন্সিভ বা সর্বাত্মক  চুক্তির জন্য জুন পর্যন্ত সময়সীমা ঠিক করেছিল দু’পক্ষ। অনিশ্চয়তাকে মাথায় রেখেই দু’পক্ষ ওই সময়সীমা নির্ধারণ করে। এখন সর্বশেষ ৭ জুলাই পর্যন্ত সময়সীমাটি বাড়ল।
 
এপ্রিলে ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তি হওয়ার পর ওবামা ও রুহানি উভয়ই তাকে স্বাগত জানিয়েছিলেন। ওবামা একে 'এক ঐতিহাসিক শুরু' বলে অভিহিত করেন। রুহানি বলেন যে, ইরান সমঝোতার শর্তাবলি মেনে চলবে। কিন্তু তারপরও উভয় নেতার কাছ থেকে তাদের আগের অবস্থানের কথা প্রতিধ্বনিত হয়েছে।
 
ওবামা সম্প্রতি বলেন যে, ইরানের পরমাণু ক্ষমতা পুরোপুরি খর্ব করা না হওয়া পর্যন্ত কোন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার নয়। অন্যদিকে ইরান সর্বাত্মক চুক্তির জন্য নিষেধাজ্ঞা পুরোপুরি না হোক উল্লেখযোগ্য অংশ প্রত্যাহারকে শর্ত দিয়েছে। কয়েকদিন আগে রুহানি স্পষ্ট জানিয়ে দেন ইরান পরমাণু কর্মসূচির অধিকার ত্যাগ করবে না। আমেরিকা ও পশ্চিমের দেশগুলো বরাবর বলে আসছিল ইরানের পরমাণু কর্মসূচির লক্ষ্য বোমা তৈরি করা। এর জবাবে ইরান বারবার বলেছে যে, সামরিক নয় বরং চিকিৎসা ও বিদ্যুৎ উৎপাদনের মতো শান্তিপূর্ণ বেসামরিক কাজে ব্যবহার করাই তাদের পরমাণু কর্মসূচির লক্ষ্য।
 
কিন্তু পশ্চিমা দেশগুলো ইরানের এ বক্তব্য অগ্রাহ্য করে দেশটির বিরুদ্ধে একের পর এক অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে গেছে। পরিস্থিতি এতটা জটিল দিকে মোড় নিয়েছিল যে, মনে হচ্ছিল মধ্যপ্রাচ্য হয়তো আরেকটা যুদ্ধ এড়ানো গেলো না।
 
যুদ্ধবিরোধী ইমেজ নিয়ে ক্ষমতায় আসা ওবামা বিরোধ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে সামরিক শক্তি প্রয়োগের চেয়ে সবসময়ই কূটনীতিকে প্রাধান্য দিয়ে এসেছেন। তিনিই প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট যিনি গত ৩৪ বছরের মধ্যে (২০১৩ সালে) ইরানের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন।
ট্যাগস

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top