অবশ্য রোভানিয়েমী, অউলু শহরের অনেক মুসলিম হাজার কিলোমিটার দূরের ফিনল্যান্ডের রাজধানী হেলসিংকির স্থানীয় সময়ের সঙ্গে মিল রেখে সেহরি ও ইফতার করেন। হেলসিংকির সময় অনুসরণ করা সম্পর্কে তারা বলেন, এটা নিকটবর্তী শহর, যেখানে রাত আর দিন আছে।
ইরিত্রিয়া থেকে আসা মুসলিম ইউসুফ আবদুল্লাহ এই ফতোয়া অনুসরণ করে হেলসিংকির সময় মেনে রোজা রাখেন। সেই হিসাবে রমজানে তার দীর্ঘতম রোজাটি হয় প্রায় ২০ ঘণ্টার।
উত্তরাঞ্চলীয় শহরগুলোতে এমন মুসলমানও আছেন, যারা নামাজের স্থানীয় নির্ধারিত সময়ের সঙ্গে মিল রেখেই রোজা রাখেন। পাকিস্তানের বেলুচিস্তান থেকে আসা কানিজ ফাতিমা তাদের অন্যতম। সূর্যের অবস্থান পরিবর্তনের কারণে তাদের সর্বোচ্চ ২৩ ঘণ্টাও রোজা রাখতে হচ্ছে। নিজের মতামত তুলে ধরে তারা বলেন, ‘আমরা রোভানিয়েমী থাকি। সারা বছর আমি এখানকার নির্ধারিত সময়ে নামাজ পড়ি। তাহলে রমজানের সময় আমি কেন হেলসিংকির সময় মেনে রোজা রাখব?’ পাকিস্তান থেকে আসার পর থেকে গত চার বছর ফাতিমা এই নিয়ম মেনে চলছেন।
তুরস্ক থেকে সুইডেনে আসা মোহাম্মাদ ইব্রাহিম এখন গ্রীষ্মকালে তুরস্কের ইস্তাম্বুলের সময়সূচি মেনে সেহরি ও ইফতার করেন। কেননা তুরস্কই সুইডেনের সবচেয়ে কাছের মুসলিম প্রধান দেশ। বিষয়টা ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘ইসলাম কঠোর নয়। আর রোজা মানেও খালি উপোস থাকা বা নিজেকে কষ্ট দেওয়া নয়। ফলে, মানুষের নিজের সুবিধামতো বেছে নেওয়ার অধিকার আছে।’
উতস্ইয়কির এবারের রমজান গ্রীষ্মকালে হলেও এক সময় তা শীতকালে চলে যাবে। তখন ‘সূর্য না ডোবার’ সমস্যার পরিবর্তে ‘সূর্য না ওঠার’ সমস্যায় পড়বেন এখানে বসবাসকারী মুসলিমরা। গ্রীষ্মকালে দীর্ঘ সময় ধরে রোজা রাখার পরিবর্তে তখন মাত্র কয়েক ঘণ্টা রোজা রাখতে হবে তাদের। আবার শীতকালের কিছুদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজও পড়তে হবে মাত্র দুই ঘণ্টার মধ্যে। কেননা বছরের ওই সময়ে মাত্র ঘণ্টা দুয়েকের জন্য আকাশে সূর্যের গোধূলির ম্লান আলো দেখা যাবে।
বিষয়টির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ইউরোপিয়ান কাউন্সিল অব ফতোয়া অ্যান্ড রিসার্চের মহাসচিব হুসেইন হালাওয়া জানান, উত্তর মেরু অঞ্চলের মুসলমানরা গ্রীষ্ম ও শীতকালে রোজা-নামাজ পালন নিয়ে সমস্যায় থাকেন। যদিও এ নিয়ে যৌক্তিক কোনো সমাধানে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। তাই উতসইয়কির মতো এমন প্রতিকূল ভৌগোলিক অঞ্চলে নামাজ ও রোজার সময়সূচি নির্ধারণ করা নিয়ে তারা একটি সম্মেলন আয়োজনের চেষ্টা করছেন।
হেলসিংকির বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় মসজিদের ব্যবস্থাপনা পরিষদের অন্যতম সদস্য কামরুল আলম কমল ও জহুরুল ইসলাম সিকদারের মতে, লম্বা দিন রোজা থেকে বিরত থাকার অজুহাত হতে পারে না। তবে দিনে ২০-২২ ঘণ্টা রোযা রাখা বড় চ্যালেঞ্জ। এটা অর্জনে তারা সক্ষম।
হেলসিংকিতে বসবাসকারী প্রবাসী ব্যবসায়ী মোহাম্মদ হান্নান ইসলাম বলেন, রোজার মাসে ফিনল্যান্ডের যেসব অঞ্চলে সূর্য সম্পূর্ণভাবে অস্ত যায় না, সেখানে রোজা পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ আলাদাভাবে প্রত্যেক ব্যক্তি বিশেষের ওপর নির্ভর করে। ইসলাম এ ব্যাপারে অনেকগুলো বিকল্প সুযোগ রেখেছে।
এই প্রসঙ্গে হেলসিংকির বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় মসজিদের ব্যবস্থাপনা পরিষদের অন্যতম সদস্য লিমন চৌধুরী জানান, মাহে রমজানের এ মাসে রাজধানী হেলসিংকির বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় মসজিদে পড়ানো হয় খতম তারাবি। তাছাড়া প্রতিদিনই মুসল্লিদের জন্য ইফতার ও সেহরির বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়েছে। মহিলাদের রয়েছে আলাদা কক্ষ। প্রতিদিন মহিলাসহ দেশি-বিদেশি কয়েক শত ধর্মপ্রাণ মুসল্লি এই আয়োজনে অংশ নেন।
সরকারি হিসাবে ফিনল্যান্ডের মোট জনসংখ্যা ৫৫ লাখ। এদের মধ্যে মুসলিম ৬৫ হাজার।