প্রধানমন্ত্রী শেখ
হাসিনা বলেছেন, মানুষ খুন করা, সম্পদ ধ্বংস, জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে মারা
কোনো আন্দোলন নয়, রাজনীতিও নয়। এটা স্রেফ মানুষ খুন। যারা এটা করে তাদের
বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের সোচ্চার হতে হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের সম্মানে আঘাত
করে কেউ কিছু বললে আমার সহ্য হয় না। আর দেশে মানুষ হত্যার রাজনীতি যারা
করতে চায়, তাদের আর এসব করতে দেয়া হবে না। তিনি দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলেন,
মানুষ পুড়িয়ে কেউ কোনো দিনই ক্ষমতায় আসতে পারবে না। জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস,
চোরাচালান ও মানুষ পুড়িয়ে হত্যার অপরাজনীতির বিরুদ্ধে সাংবাদিক সমাজকে
সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
বাংলাদেশ
ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুলের সভাপতিত্বে সভায়
আরো বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী,
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আলতাফ মাহমুদ, প্রেসক্লাবের সভাপতি মো.
শফিকুর রহমান, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব আবদুল জলিল
ভুইয়া, প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম চৌধুরী। অনুষ্ঠান
পরিচালনা করেন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব কুদ্দুস আফ্রাদ। ইফতার
মাহফিল শেষে জাতীয় প্রেসক্লাবের দ্বিতীয় তলায় সাংবাদিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে
প্রায় ঘণ্টাব্যাপী খোলামেলা কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। ইফতার মাহফিলে
কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক, প্রধানমন্ত্রীর
রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, অর্থ উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান, সাবেক
মন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া, তথ্য সচিব মর্তুজা আহমেদসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের
সম্পাদক, বিরোধী দলের নেতৃবৃন্দ, সংসদ সদস্যবৃন্দসহ বিভিন্ন পেশাজীবী
নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
গতকাল
বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিউজে) যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ইফতার মাহফিলে প্রধান
অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। সাংবাদিকদের গঠনমূলক সমালোচনার আহ্বান
জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা নিরপেক্ষ ও গঠনমূলকভাবে সমালোচনা করুন।
আপনাদের কাছে নিরপেক্ষতা চাই, অন্য কিছু চাই না। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সব
সময়ই সাংবাদিকদের কল্যাণের কথা চিন্তা করে, আবার সাংবাদিকরা আওয়ামী লীগেরই
সবচেয়ে বেশি সমালোচনা করেন। সমালোচনা ভালো, আমাদের দৃষ্টি খুলে দেয়। তবে
একটা কথা মনে রাখতে হবে, জাতির পিতা বাংলার মানুষকে একত্রিত করে স্বাধীনতা
এনে দিয়েছিলেন। সেই স্বাধীনতার লক্ষ্য যেন অর্জন হয়। লক্ষ্যটা হলো
দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলা। অর্থনৈতিকভাবে দেশকে এগিয়ে নেয়া ও
স্বাবলম্বী করা।
সাংবাদিকদের
কল্যাণে গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৮ম ওয়েজ
বোর্ড দিয়েছি, আগামীতে ৯ম ওয়েজ বোর্ড যেন হয় সে বিষয়টি দেখব। টেলিভিশনে
যারা কর্মরত রয়েছেন, তাদের বিষয়টিও দেখতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের মানসিকতায়
পরিবর্তন আনতে হবে। ৩৫৬টি দৈনিকসহ অনেক ইলেকট্রনিক মিডিয়া আছে। প্রত্যেক
সাংবাদিক ও মালিকরা এক টাকা করে হলেও সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টে জমা দিন।
কিছু অর্থ ‘সিড’ মানি হিসাবে জমা দেন। যে যার সামর্থ্য অনুযায়ী দেন। সবাই
মিলে দিলে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। সাংবাদিকদের আবাসন সমস্যা প্রসঙ্গে
তিনি বলেন, সাংবাদিকদের আবাসিক ব্যবস্থার জন্য প্লট দিয়েছিলাম. জানি না
প্লট মালিকরা বিক্রি করে দিয়েছেন কি না। এভাবে প্লট না দিয়ে সব প্লট এক
জায়গায় নিয়ে এসে ফ্ল্যাট করে দিলে ভালো হতো। বহু সাংবাদিকের থাকার ব্যবস্থা
হতো। ভবিষ্যতে সেই ব্যবস্থা যেন হয়, সে বিষয়টি দেখব।
শেখ
হাসিনা বলেন, প্রেস কাউন্সিল শক্তিশালী করার চিন্তাভাবনা করছি।
সাংবাদিকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও করা হবে। গণমাধ্যমের একটা নীতিমালা যেন
করা হয়, সে ব্যবস্থা নিয়েছি। আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে চাই না। নীতিমালার
ভিত্তিতে থাকলে ভালো হয়। এ সময় প্রধানমন্ত্রী জাতীয় প্রেসক্লাবকে
আন্তর্জাতিক মানের প্রেসক্লাবে উন্নীত করতে যত রকম সহযোগিতা প্রয়োজন তা
দেয়ার আশ্বাস দিলে শত শত সাংবাদিক হাততালি দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন
জানান।
অনালইন
গণমাধ্যমের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা চাই দেশের সংবাদমাধ্যম
আরও শক্তিশালী হোক। আমরা গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করতে চাই না। তবে কোনো কিছু
করতে গেলে নীতিমালা প্রয়োজন। শৃঙ্খলার জন্যই নীতিমালা।
প্রধানমন্ত্রী
বলেন, আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে, দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে।
আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধি পেয়েছে। রেমিটেন্স বেড়েছে। আমরা ঘোষণা দিয়েছিলাম
নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু করব। কাজ শুরু করে দিয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী
বলেন, আন্তর্জাতিকভাবে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থার
অগ্রগতি হচ্ছে। এটা হঠাত্ করে আসেনি। আমাদের নীতি ও লক্ষ্য থাকায় আমরা
দেশকে সবদিক থেকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছি। তিনি বলেন, আমরাই বেসরকারি
খাতে টেলিভিশন, রেডিও দিয়েছি। এতে অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি
হয়েছে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে টিকে থাকার দক্ষতাও বাড়ছে। আগে সাংবাদিকদের
নামে মামলা হলেই গ্রেফতার করা হতো। সে আইনটাও আমরা পরিবর্তন করেছি। আমাদের
কাছে যারাই সহযোগিতার জন্য আবেদন করেছে, সরকারে থাকি আর বিরোধী দলে থাকি
তাদের জন্য কাজ করেছি।