শেরপুরের পুরাকীর্তি ধ্বংসের পথে অভাব শুধু সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের

S M Ashraful Azom
সংস্কার ও প্রয়োজনীয় রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ধ্বংসের পথে শেরপুরের পুরাকীর্তিসমূহ। ইতোমধ্যে অনেক পুরাকীর্তি ধ্বংস হয়ে গেছে। আবার অনেক পুরাকীর্তির ঐতিহাসিক গুরুত্ব ও মূল্য অনুধাবন না করে অজ্ঞতাবশত ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। বর্তমানে যেসব পুরাকীর্তি ধ্বংসের মুখোমুখি এবং অবিলম্বে সংস্কার ও রক্ষা করা প্রয়োজন সেগুলো হচ্ছে, পৌনে তিনআনী জমিদারদের নির্মিত রঙমহল, রঘুনাথ জিউর মন্দির, প্যারীমোহন মন্দির, গোপীনাথ অন্নপূর্ণা মন্দির, তারামণি চৌধুরানীর মঠ ও পুষ্পরথ।
পৌনে তিনআনীর রঙমহল
উনিশ শতকের শুরুতে পৌনে তিনআনীর জমিদার কিশোরী মোহন চৌধুরীর আমলে রঙমহল ও গোপীনাথ অন্নপূর্ণা মন্দির নির্মিত হয়। অনুপম কারুকার্য খচিত রঙমহলের প্রবেশ মুখে তিনটি খোলাদ্বার, ভেতরে টানা লম্বা করিডোর। করিডোরসহ ভেতরের সব দেয়ালের অর্ধেকটা জুড়ে বিরাজ করছে ফ্রেসকো ও ফুল লতা পাতা আঁকা চীনা পাথরের রঙিন টালি। রঙমহলের পাশেই শান বাঁধানো পুকুর। দীর্ঘদিন রঙমহলটি কৃষি প্রশিক্ষণালয়ের প্রশাসনিক ভবন হিসেবে ব্যবহূত হয়েছে। বর্তমানে পরিত্যক্ত। ইট চুন সুরকির গাঁথুনির ভবনটির ছাদ দিয়ে পানি পড়ে। সংস্কার করা না হলে ভবনটি যে কোনো সময় ধসে পড়তে পারে।
রঘুনাথ জিউর মন্দির
১৭৭১ খ্রিস্টাব্দে আড়াইআনীর জমিদার মোদ নারায়ণ চৌধুরী রঘুনাথ জিউর মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন। চুন সুরকির গাঁথুনির মন্দিরটির তাজমহল সদৃশ দ্বিতল ভবন ছিল। কিন্তু ১২৯২ ও ১৩০৪ বঙ্গাব্দের দু’দফা ভূমিকম্পে সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়। পরে ১৩৩৬ বঙ্গাব্দে বর্তমান এক গম্বুজবিশিষ্ট মন্দিরটি নির্মাণ করা হয়। স্থানীয় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের আর্থিক অনুদানে মন্দিরে নিত্যপূজা ও অন্যান্য ধর্মীয় ক্রিয়াকর্ম অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বর্তমান মন্দিরটি প্রায় ৯০ বছরের পুরনো। এর ছাদ দিয়ে বৃষ্টির পানি পরে। গাঁথুনিও দুর্বল হয়ে পড়েছে।
প্যারীমোহন মন্দির ও গোপীনাথ অন্নপূর্ণা মন্দির
প্রায় শত বছরের পুরনো মন্দির দুটিতে এখনো নিত্য পূজাসহ অন্যান্য ধর্মীয় অনুস্ঠান নিয়মিত পালিত হয়। চুন-সুরকির গাঁথুনির মন্দির দুটির বাঁধন দুর্বল হয়ে পড়েছে, খানিকটা দেবেও গেছে।
তারামণি চৌধুরানীর মঠ
নয়আনী জমিদার হর চন্দ্র চৌধুরীর মাতা পুণ্যবতী মহিলা তারামণি চৌধুরানীর স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে শেরী মহাশ্মশানে মঠটি নির্মাণ করা হয়। দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়া মঠটি ধ্বংসের মুখে। জনৈক ভূ-খাদক মঠটিকে গ্রাস করার চেষ্টা করছে।
পুষ্পরথ
জমিদার মাতা তারামণি চৌধুরানীর নির্দেশে ১৬ চাকা বিশিষ্ট ৩ স্তরের কাঠের অনুপম দৃষ্টিনন্দন পুষ্পরথটি নির্মিত হয়। শত বছরের পুরনো রথটি মুক্তিযুদ্ধের সময় আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরবর্তীকালে কিছু সংস্কার করে সচল করা হয়। উচ্চতা বেশি হওয়ায় বর্তমানে ওপরের অংশ খুলে রেখে রথ টানা হয়। আর্থিক সংকটের কারণে রথটি যথাযথভাবে সংস্কার করা সম্ভব হচ্ছে না।
উল্লেখ্য, প্রতিটি মন্দির পরিচালনার জন্য জমিদার আমলে প্রয়োজনীয় দেবোত্তর সম্পত্তি লিখিতভাবে বরাদ্দ ছিল। কিন্তু পাকিস্তান আমলে ঐ সব দেবোত্তর সম্পত্তির ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে ভূমি অফিসের একশ্রেণির অসত্ কর্মচারীর যোগসাজশে অনেকেই আত্মসাত্ করে। কিছু সম্পত্তি সরকারও অধিগ্রহণ করে। কিন্তু এর জন্য মন্দির কর্তৃপক্ষকে কোনো ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়নি।











#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top