বাংলাদেশের তরুনী ও নারীদের গাইনি বিশেষজ্ঞের কাছে যাওয়া এবং তাকে নিজেদের সমস্যার কথা বলাটা সবার জন্যে সহজ কাজ নয়। সামাজিক বিধি, কুসংস্কার এবং লজ্জাবোধ ডাক্তারের সাথে সঠিকভাবে কথা বলার বাধা হয়ে দাঁড়ায় যাতে করে অনেক ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয় এবং প্রায়শই ডাক্তার রোগীর আসল সমস্যা ধরতে পারেন না। ‘মায়া আপা কী বলে’ এই বিভাগে পাওয়া প্রশ্নগুলো আমরা বিশ্লেষণ করে দেখেছি যে অনেক নারীরা, বিশেষ করে কম বয়স্করা, তাদের সাস্থ্য সমস্যাগুলো খুলে বলতে আড়ষ্ট বোধ করে।
আমাদের প্রশ্নোত্তরগুলোর উপর ভিত্তি করে আমরা কিছু নির্দেশনা ঠিক করেছি যেগুলো মেনে চললে গাইনি বিশেষজ্ঞের কাছে গেলে আপনি অনেক সহজে আপনার সমস্যার কথা তাকে খুলে বলতে পারবেন, এবং এতে ডাক্তারেরও আপনাকে সঠিক চিকিৎসা দেয়া অনেক সহজ হবে।
১। আপনার সঠিক বয়স জেনে নিন এবং ডাক্তারের কাছে সেটি লুকাবেন না। যেকোনো ডাক্তারই আপনার বয়স জানতে চাইবেন কারণ ডাক্তার আপনার বয়স আন্দাজ করে নেয়াটা সঠিক মনে করেন না। আপনার বয়স বিবেচনা করে উনি কিছু অসুখের সম্ভাবনা বাদ দেন এবং অন্য কোন অসুখের সম্ভাবনা বেশি তা ঠিক করেন।
২। একা কথা বলার চেষ্টা করুন - কোন কোন ডাক্তার তার চেম্বারে কেবল রোগীকে ঢুকতে দেন। তাদের মতে এভাবে রোগীরা তাদের সমস্যা নিয়ে কথা বলতে নিরাপদ বোধ করেন এবং অনেক সুক্ষ বিষয় তখন সামনে আসে। তবে অনেক ডাক্তার রোগী যার সাথে এসেছে তাকেও চেম্বারে আসতে দেন। আপনার ক্ষেত্রে এমনটি হলে এবং তার জন্য আপনার কথা বলতে সমস্যা হলে তাকে বাইরে যেতে বলুন। ডাক্তার অবশ্যই আপনার ইচ্ছার প্রতি সম্মান দেখিয়ে উনাকে বাইরে বসতে বলবেন।
৩। ডাক্তারের কাছে গেলে রোগীরা সাধারণত অনেকগুলো সমস্যা নিয়ে যান। তাই কোন কোন জিনিসের জন্য আপনার সবচেয়ে বেশি কষ্ট হচ্ছে তা ঠিক করে নিন। আপনার সবচেয়ে কষ্টকর সমস্যাগুলোর কথা আগে বলুন। যদি আপনার প্রস্রাবের সময় জ্বালা-পোড়া, তলপেটে হালকা ব্যথা বোধ, এবং মাঝে মধ্যে মাথাব্যথা হয় তাহলে মাথাব্যথার কথাটা আগে না বলে প্রস্রাবের জ্বালা-পোড়ার কথাটা আগে বলুন।
৪। আপনার মাসিক নিয়মিত হচ্ছে কিনা তা বোঝার চেষ্টা করুন। আপনার মাসিক কি নিয়মিত প্রতি মাসে হচ্ছে? সব নারীদের মাসিক চক্র এক রকম নয়। কারও কারও মাসিক প্রতি ২১ দিন পর পর হয়, আবার কারও কারও টা ৩৫ দিন পর পর হতে পারে। আপনার মাসিক অনিয়মিতভাবে হলে সেটা ডাক্তারকে বলুন।
৫। গাইনি বিশেষজ্ঞের কাছে যাওয়ার সময় অবশ্যই আপনার শেষবার মাসিক শুরু হওয়ার তারিখ মনে করে যাবেন। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গাইনি বিশেষজ্ঞ নিশ্চয়ই আপনাকে এটি জিজ্ঞেস করবেন। এই তথ্যটি থেকে গাইনি বিশেষজ্ঞ আপনার মাসিক চক্র এবং আপনি সে সময় কোন পর্যায়ে আছেন সে সম্পর্কে ধারনা লাভ করেন, কারণ অনেকগুলো উপসর্গ আপনার মাসিক চক্রের সাথে সম্পর্কযুক্ত। তাই ডাক্তারের কাছে যাওয়ার আগে তারিখটি খুব ভাল করে মনে করার চেষ্টা করুন। যদি শেষবার আপনার মাসিক কখন হয়েছে সেটি বিশেষ ভাবে খেয়াল না করে থাকেন, তাহলে এই প্রশ্নগুলো নিজেকে জিজ্ঞেস করুন - সেটি মাসের শুরুতে, শেষে নাকি মাঝখানে হয়েছিল? এর কারণে আপনি কোন পারিবারিক অনুষ্ঠান, ক্লাস বা অফিস যাওয়া বন্ধ রেখেছিলেন কিনা? এই ঘটনাগুলোর তারিখ খুঁজে বের করলেই আপনার মাসিক কখন শুরু ও শেষ হয়েছিল তা জানতে পারেবেন।
৬। ডাক্তারের কাছে প্রসব সম্পর্কিত কোন তথ্য লুকাবেন না। আপনার সন্তান কয়টি, তাদের ডেলিভারি কীরকম হয়েছিল (স্বাভাবিক না সিজারিয়ান), কোন মৃত সন্তান হয়েছিল কিনা, মেন্সট্রুয়াল রেগুলেশন বা এম আর (MR) করেছিলেন কিনা, গর্ভপাত করে ছিলেন কিনা, করলে কোন ধরনের পিল সেবন করে গর্ভপাত (abortion) ঘটিয়েছিলেন, আপনার প্রজননতন্ত্রে বা অন্য কোথাও কোন অপারেশন হয়েছিল কিনা এবং আপনি বিবাহিত না অবিবাহিত এ সব ই জানা জরুরী। বিবাহিত নারীরা স্বাভাবিক যৌন জীবন যাপন করছেন বলে ধরে নেয়া হলেও যদি আপনি অবিবাহিত হন তবু ভয় বা লজ্জার কারণে আপনার যৌন জীবন সম্পর্কিত কোন তথ্য গোপন করবেন না। গাইনি বিশেষজ্ঞরা পেশাদার ডাক্তার এবং অনেক ধরনের রোগী তারা পান, তাই উনি আপনার অবস্থাটা বুঝবেন। একারণে আপনার গর্ভপাত (abortion) বা যৌন সঙ্গীর সংখ্যা যাই হোক না কেন প্রশ্ন উঠলে তথ্যগুলো সততার সাথে ডাক্তারকে জানান।
৭। ঢিলেঢালা কাপড় পড়ুন। ঢিলে কোন সালোয়ার-কামিজ বা সাধারণ শাড়িই যথেষ্ট। আপনি বিবাহিত বা অবিবাহিত যাই হন না কেন, গাইনি ডাক্তার আপনার তলপেট পরীক্ষা করতে চাইতে পারেন। আপনার যোনিপথের কোন রকম অস্বস্তির কথা ডাক্তারকে বললে উনি আঙ্গুল ব্যাবহার করে বা কোন যন্ত্র দিয়ে একটি পার-ভ্যাজাইনাল এক্সামিনেশন (per-vaginal examination) করে দেখবেন। তাই এসময় শাড়ি, ম্যাক্সি, বা ঢিলেঢালা সালোয়ার পরে থাকলে সেটি খুলতে সুবিধে হবে।
৮। আপনার যোনির চারপাশটা যথাসম্ভব ভালভাবে শেভ করে নিন। গাইনি ডাক্তার একটি পার-ভ্যাজাইনাল পরীক্ষা করতে চাইতে পারেন, তাই দয়া করে ডাক্তারের কাছে যাওয়ার আগে পরিষ্কার হয়ে গোসল করে নিন। এটি ভদ্রতা। এটি চিকিৎসার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ, কারণ প্রদাহময় জায়গা পরীক্ষা করতে হলে যোনির চারপাশের চুলের জন্য তা ভাল করে পরীক্ষা করা যায় না।
৯। প্রাসাঙ্গিক কোন তথ্য নিজে থেকে ডাক্তারকে জানাতে ভুলবেন না। আপনার ডায়াবেটিস, হাঁপানি, উচ্চ রক্তচাপ, হাইপোথায়রয়েডিজম (hypothyroidism), বা হৃদরোগ থেকে থাকে - তা ডাক্তারকে জানান। আপনার যদি কোন বড় অপরেশন হয়ে থাকে, আপনি যদি হেপাটাইটিস বি পজেটিভ হন বা কোন ক্রনিক রোগ থেকে থাকে তাহলে আপনার গাইনোকলোজিস্ট এর কাছে সেটা শেয়ার করুন। যেহেতু তিনি আপনার এ সম্পর্কিত সমস্যাগুলো নিয়েই আলোচনা করবেন তাই ওনার এ বিষয়ে ওয়াকিবহাল থাকা আবশ্যক। আগে থেকেই এগুলো আপনি যদি আপনার গাইনি বিশেষজ্ঞকে জানিয়ে দিতে পারেন তাহলে এর চেয়ে ভাল আর কিছু হতে পারেনা।
তাই যখনই গাইনি বিশেষজ্ঞের কাছে যাবেন এ সাধারণ বিষয়গুলো অনুসরণ করবেন। যা আপনার এবং আপনার ডাক্তারের মাঝে সম্পর্কটা আরো সহজ ও ফলপ্রসু করে তুলবে।