৪ জুনের
প্রস্তাবিত বাজেটের অর্থবিলে কিছু সংশোধনী এনে তা পাস হয়। রাজস্ব বোর্ডের
(এনবিআর) সংশ্লিষ্ট বিভাগ প্রাথমিকভাবে হিসাব করে দেখেছে—এতে প্রায় ৪ হাজার
কোটি টাকা আয়কর ও ভ্যাট খাতে ছাড় দিতে হবে।অর্থাত্, প্রাক্কলিত রাজস্বের
তুলনায় এই পরিমাণ রাজস্ব কম আদায় হতে পারে।ফলে সরকারের ২০১৫-১৬ অর্থবছরের
রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন আরো কঠিন হতে পারে।
বাজেটে
বড় পরিবর্তন আনা হয়েছে রপ্তানির উতসে কর খাতে।রপ্তানিতে উতসে কর ১ শতাংশ
থেকে দশমিক ৬০ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে।এতে প্রায় ৮০০ কোটি টাকা কর ছাড়
দিতে হচ্ছে।এ ছাড়া চাল, ডাল, গম, চিনি, ভোজ্য তেলসহ বেশ কিছু ভোগ্য ও সেবা
পণ্যের আমদানিতে প্রস্তাবিত ২ শতাংশ অগ্রিম আয়কর প্রত্যাহার করা হয়েছে।এতেও
প্রায় ৬০০ কোটি টাকার কর কম আদায় হবে।এ দুটি খাত ছাড়াও নতুন ৯টি ব্যাংকের
করপোরেট কর আড়াই শতাংশ কমানো হয়েছে।এ ছাড়া, আয়কর খাতে আরো ছোট-খাট কিছু ছাড়
দেয়া হয়েছে।
এ
দিকে, চূড়ান্ত বাজেটে মত্স্য খাতের আয়ে হ্রাসকৃত হারে কর দেয়ার সুযোগ দেয়া
হয়েছে।মত্স্য খাতে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত আয়কে করমুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে।১০
লাখ টাকা থেকে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত আয়ের ওপর ৫ শতাংশ হারে এবং অবশিষ্ট আয়ের
ওপর ১০ শতাংশ কর দেয়ার সুযোগ দেয়া হয়েছে।সব মিলিয়ে বাজেটে কর ছাড় দিতে
হচ্ছে অন্তত ৪ হাজার কোটি টাকা।এর আগে মত্স্য খাতের আয়ে ব্যক্তি শ্রেণির
করদাতাদের অন্যান্য আয়ের মতো স্বাভাবিক হারে কর দিতে হতো।
প্রস্তাবিত
বাজেটে গার্মেন্ট খাতসহ সব ধরনের রপ্তানির বিদ্যমান উতসে কর দশমিক ৩০
শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১ শতাংশ করা হয়।এর পর থেকেই এ খাতের উদ্যোক্তারা এ নিয়ে
দেনদরবার করতে শুরু করেন।শেষ পর্যন্ত তারা এটিকে দশমিক ৬০ শতাংশে নামিয়ে
আনতে সক্ষম হলেন।
অন্য
দিকে, ভ্যাট খাতেও চূড়ান্ত বাজেটে বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হয়েছে।মোবাইল
ফোনের কথা বলাসহ সব ধরনের সেবার ওপর প্রস্তাবিত ৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক
কমিয়ে ৩ শতাংশ করা হয়েছে।ফলে প্রাথমিক লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় প্রায় ৫০০ কোটি
টাকা রাজস্ব আদায় কমে যেতে পারে।ছোট ব্র্যান্ডের সিগাটের ট্যারিফ মূল্য ১৯
টাকা থেকে ১ টাকা কমিয়ে ১৮ টাকা করায় ৩৫০ কোটি টাকা আদায় কমে
যাবে।ই-কমার্সের ওপর থেকে প্রস্তাবিত ভ্যাট প্রত্যাহার করায় এ খাত থেকেও
৩৫০ কোটি টাকার সম্ভাব্য রাজস্ব আদায় হচ্ছে না।
বেসরকারি
বিশ্ববিদ্যালয়, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিক্যাল কলেজ, এ ছাড়া কংক্রিটের
রেডিমিক্স, ইউনান, আয়ুর্বেদিক ওষুধ ও পণ্যের ওপর থেকেও প্রস্তাবিত ভ্যাট
প্রত্যহার করা হয়েছে।সব মিলিয়ে ভ্যাট বিভাগেই প্রাক্কলনের তুলনায় প্রায় ২
হাজার ২০০ কোটি টাকার রাজস্ব ছাড় দিতে হচ্ছে।
চলতি
অর্থবছর প্রায় ৩১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা
হয়েছে ১ লাখ ৭৬ হাজার কোটি টাকা। এনবিআরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা
ইত্তেফাককে বলেন—প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা ছাড় দেয়ার ফলে অর্থবছরের রাজস্বের
লক্ষ্যমাত্রা অর্জন শঙ্কার মুখে পড়বে।
অর্থনীতিবিদরা
বলছেন—কিছু খাতে ছাড় দেয়ার সিদ্ধান্তটি যৌক্তিক হয়েছে।যেমন বেসরকারি
শিক্ষায় আরোপিত ভ্যাট ১০ শতাংশ থেকে নামিয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।তারা
মনে করছেন—এটি সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা উচিত ছিল।শিক্ষা খাতে কোনো ধরনের কর
না রাখার দাবি তাদের।অন্য দিকে, মোবাইল ফোন সেবায় সম্পূরক শুল্ক কমানো এবং
ই-কমার্সের ওপর ভ্যাট প্রহ্যাহারের সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক বলে মনে করছেন
তারা।