আজ ১৫ রমজান। ৩ হিজরীর এই ১৫ রমজানে জন্ম গ্রহণ করেন প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের প্রিয় নাতি হযরত আলী রাদিআল্লাহু তা’আলা আন্হু ও হযরত ফাতিমা রাদিআল্লাহু তা আল আন্হার জ্যেষ্ঠ পুত্র হযরত ইমাম হাসান রাদি আল্লাহু তা ‘আলা আন্হু। সেদিন ছিল ৬২৫ খৃস্টাব্দের ১ এপ্রিল। হযরত হাসান রাদিআল্লাহু তা ‘আলা আন্হুর চেহারা ও অঙ্গসৌষ্ঠব ছিল নানা হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের মতো। তাঁর শৈশবের অধিকাংশ সময় কেটেছে নানার স্নেহছায়ায়। প্রিয় নবী (সাঃ) মসজিদুন নববীতে লোকজনের সাথে যে সমস্ত কথাবার্তা বলতেন, তা তিনি গৃহে ফিরে এসে তাঁর আম্মাজান হযরত ফাতিমাতুস যাহরা (রা:)-এর নিকট নানাজানের ভংগীতেই বলে দিতেন। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের নাম মুবারক আহমদ-এর সাথে যেমন মুজতাবা যুক্ত রয়েছে তেমনি ইমাম হাসানকে হাসান মুজতাবাও বলা হয়। মুজ্তাবা শব্দের অর্থ নির্বাচিত, মনোনীত। হযরত ইমাম হাসান (রা:) নানাজান হযরত মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর সর্বাধিক স্নেহ-পরশ লাভ করেছেন। তাঁর কনিষ্ঠ ভ্রাতা হযরত ইমাম হুসাইন (রা:) বড় ভাই হাসানের খুবই আদরের ছিল। প্রিয় নবী (সা:) যখন ইন্তেকাল করেন তখন হাসানের বয়স মাত্র ৮ বত্সর। আর তিনি মাতৃহারা হন সাড়ে আট বছর বয়সে।
হযরত উমর রাদিআল্লাহু তা’আলা আন্হুর খিলাফতকালে যোগ্যতার ও মর্যাদার ক্রম অনুযায়ী যে ভাতা তালিকা বা দীওয়ান প্রস্তুত করা হয়, তাতে হযরত হাসান (রা:) ছিলেন তৃতীয়। প্রথমে ছিলেন হযরত আব্বাস ইবনে আবদুল্লাহ (রা:), দ্বিতীয় ছিলেন হযরত আলী ইবনে আবু তালিব (রা:), আর তৃতীয় ছিলেন হযরত হাসান ইবনে আলী (রা:)। এই তালিকাভুক্ত প্রত্যেকে বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের সমপরিমাণ বার্ষিক পাঁচ হাজার দিরহাম ভাতা পেতেন। হযরত উসমান (রা:)-এর খিলাফতকালে তিনি ৩০ হিজরীতে সংঘটিত তাবারিস্তান অভিযানে বিশেষ অবদান রাখেন। হযরত উসমান (রা:)-এর গৃহবিদ্রোহীরা অবরোধ করলে তিনি আব্বাজান হযরত আলী (রা:)-এর নির্দেশে ছোট ভাই হযরত হুসাইন (রা:) কে সঙ্গে নিয়ে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। বিদ্রোহীদের বাধা দিতে গিয়ে তিনি আহতও হন। হযরত আলী (রা:)-এর শাহাদতের পর তিনি খলিফা নির্বাচিত হন এবং ৭ মাস ২৬ দিন অতি দক্ষতার সাথে খিলাফতের দায়িত্ব পালন করেন। পরে হযরত মুয়াবিয়া রাদিআল্লাহ্ তা’আলা আন্হুর সঙ্গে এক সোলেহ করে তিনি খিলাফতের দায়িত্ব ত্যাগ করেন। তিনি ৫০ হিজরীতে ইন্তেকাল করেন। তাঁর বর্ণিত হাদিসের সংখ্যা মাত্র ১৩। কবি হিসাবেও তাঁর খ্যাতি ছিল। তাঁর বর্ণিত একটি দু’আ রয়েছে। যার বাংলা অর্থ এইরূপঃ হে অল্লাহ্, আপনি যাদেরকে পথ প্রদর্শন করেছেন আমাকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করে আমাকে পথ দেখান। আপনি যাদেরকে ক্ষমা করেছেন তাদের অন্তর্ভুক্ত করে আমাকে ক্ষমা করেন, আপনি যাদের অভিভাবকত্ব করেন তাঁদের অন্তর্ভুক্ত করে আমার অভিভাবকত্ব করেন। আপনি আমাকে যা দান করেছেন তাতে বরকত দান করেন এবং আমাকে রক্ষা করেন সকল মন্দ হতে, কারণ আপনিই সবকিছু নির্ধারণ করেন এবং আপনার উপর কারো আদেশ চলতে পারে না, আপনি যাকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করেছেন সে কখনো লাঞ্ছিত হয় না। আপনি আমাদের রব, আপনি কল্যাণময় এবং মহান।