অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, চূড়ান্তভাবে মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেতে বাংলাদেশের আরো তিন-চার বছর সময় লাগবে। আর এ চূড়ান্ত স্বীকৃতি দেবে জাতিসংঘ। যদিও ২০১৩ সাল থেকেই নিম্ন মধ্য আয়ে রয়েছে বাংলাদেশ।
মাথাপিছু আয়ের ভিত্তিতে ১০৪৬ ডলার পেরুলেই মধ্য আয়ের নিম্ন সারিতে অবস্থান করা যায়। সে ক্ষেত্রে ২০১২-১৩ অর্থবছরেই বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় এ সীমা অতিক্রম করে। এসময় মাথাপিছু আয় ছিল ১০৫৪ ডলার। এই আয় ক্রমেই বাড়ছে। সর্বশেষ তথ্য হালনাগাদ করে বিশ্বব্যাংকও বলেছে বাংলাদেশ নিম্ন মধ্য আয়ের সারিতে চলে এসেছে। তবে এই অর্জনের ধারা পর পর তিন বছর ধরে রাখতে হবে। নইলে এ তালিকার নিচে চলে যেতে পারে বাংলাদেশ।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিন বছরের মধ্যেই মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। অর্থমন্ত্রীও বলেছেন মধ্য আয়ের স্বীকৃতি পেতে আরো তিন-চার বছর লেগে যাবে। তথ্য হালনাগাদ করে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে উপস্থাপন করেছে আন্তর্জাতিক আর্থিক সংস্থা বিশ্বব্যাংক। ২০১৪ সালের বার্ষিক মাথাপিছু আয়ের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটেও বাংলাদেশকে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ (লোয়ার মিডল ইনকাম) হিসেবে উপস্থাপন করা হয়।
মাথাপিছু জাতীয় আয়ের (জিএনআই) হিসাবে ৪টি দেশ ২০১৪ সালে নিম্ন আয়ের তালিকা থেকে নিম্ন মধ্য আয়ের তালিকায় উঠে এসেছে। দেশগুলো হলো বাংলাদেশ, কেনিয়া, মিয়ানমার এবং তাজিকিস্তান।
বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী বার্ষিক মাথাপিছু মোট জাতীয় আয় (জিএনআই) ১ হাজার ৪৬ ডলারের নিচে হলে সেদেশ নিম্ন আয়, ১ হাজার ৪৬ থেকে ৪ হাজার ১২৫ ডলার হলে নিম্ন মধ্য আয়ের দেশ এবং ৪ হাজার ১২৬ থেকে ১২ হাজার ৭৩৫ ডলার আয়ের দেশ উচ্চ মধ্য আয়ের দেশ এবং এর উপরে হলে উচ্চ আয়ের দেশ হিসেবে বিবেচিত হয়।
২০১৪ সালের দেয়া তথ্যানুযায়ী বাংলাদেশের জিএনআই ছিল ১০৮০ ডলার, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে হয়েছে ১১৮৪ ডলার। সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী ২০১৪-১৫ অর্থবছর মাথাপিছু আয় দাঁড়িয়েছে ১৩১৪ ডলারে। পাঁচ বছর আগে ২০১০-১১ অর্থবছরে মাথাপিছু আয় ছিল ৯২৮ ডলার। যা পরবর্তী সময়ে ৯৫৫, ১০৫৪ ও ১১৮৪ এবং বর্তমানে ১৩১৪ ডলার হয়েছে।
আগেই নিম্ন মধ্য আয়ের সীমা অতিক্রম করলেও বিশ্বব্যাংক সম্প্রতি এটি হালনাগাদ করে প্রকাশ করে। বিশ্লেষকরা বলছেন, মাথাপিছু আয়ের দিক থেকে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশের কাতারে আসলেও বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকাতেই থাকতে হবে। এ তালিকা থেকে বের হতে হলে মাথাপিছু আয়ের পাশাপাশি মানব উন্নয়ন সূচক ও অর্থনৈতিক সক্ষমতা সূচকের আরো উন্নতি করতে হবে।
বিশ্বব্যাংকের মানদণ্ড অনুযায়ী বাংলাদেশ নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, গত ৪০ বছর ধরে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকায় রয়েছে। এখান থেকে বেরিয়ে আসাটা এক ধরনের প্রমোশন ও সন্তুষ্টির বিষয়। এ ধরনের স্বীকৃতিতে আত্মগরিমা বাড়ে। গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী এ কথা বলেন।
বাংলাদেশ নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ায় নিম্ন আয়ের দেশের সুবিধাগুলো পাওয়া যাবে কি না- জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে ঘোষণা করলেও এ বিষয়ে চূড়ান্ত স্বীকৃতি দেবে জাতিসংঘ। জাতিসংঘের বোর্ড সভায় এটি অনুমোদিত হতে হবে। আর এ জন্য আরো তিন-চার বছর সময় লাগবে। এর পরে আরো তিন বছর বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের সুবিধাসমূহ পাবে।’
তিনি বলেন, ইউএন সিডিপি কমিটির ফাইনাল ডিসিশন ২০১৮-১৯-এর আগে আসবে না। এজন্য কোনো অসুবিধা হবে না, শেষ হতে আরো চার বছর লাগবে। অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা অনেক কিছু সাহায্য ছাড়া নিজেরাই করছি। এখন সাহায্য জিডিপির ১.৮ শতাংশে নেমে এসেছে। আমি আগে যখন মন্ত্রী ছিলাম, তখন ছিল জিডিপির ৮ শতাংশ।’
বিশ্বব্যাংকের তালিকায় দেখা যায়, সার্কভুক্ত ভারত ও পাকিস্তান নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ২০১৪ সালে মঙ্গোলিয়া এবং প্যারাগুয়ে নিম্ন-মধ্য আয়ের দেশের তালিকা থেকে মধ্যম-মধ্য দেশের তালিকায় উঠে এসেছে। যুদ্ধাবস্থা এবং তেল কোম্পানিগুলো অকেজো হয়ে পড়ায় দক্ষিণ সুদান নিম্ন-মধ্য আয়ের তালিকা থেকে নিম্ন-আয়ের তালিকায় ফিরে গেছে। নতুন জিএনআই র্যাংকিং-এ মালদ্বীপ এবং মঙ্গোলিয়ার উত্থান হয়েছে সবচেয়ে বেশি। যথাক্রমে ১৩ ও ৮ ধাপ এগিয়ে গেছে দেশ দুইটি। অন্যদিকে ওমান ও তিমুর সবচেয়ে বেশি— ১৫ ধাপ পিছিয়েছে।
বিশ্বের ৬৪টি নিম্ন-আয়ের তালিকার দেশে বাস করছে ৩শ ১০ কোটি মানুষ, যা আগের বছরের ব্যবধানে কমেছে সাড়ে ৮ শতাংশ। বিশ্বের সবচেয়ে কম জিএনআই হলো মালাউই, মাত্র ২৫০ ডলার। অন্যদিকে মোনাকোর জিএনআই সবচেয়ে বেশি ১ লাখ ডলার। অর্থাত্ মালাউইর চেয়ে ৪০ গুণ মাথাপিছু আয় করছে মোনাকো। তথ্যে আরো দেখা যায়, আর্জেন্টিনা, হাঙ্গেরি, সিসিলি এবং ভেনিজুয়েলা উচ্চ মধ্য-আয়ের দেশ থেকে উচ্চ-আয়ের দেশের তালিকায় উঠে এসেছে। এ দেশগুলোর মাথাপিছু আয় ১২ হাজার ৭৩৬ ডলারের উপরে।
ভুটানের অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক
গতকাল ভুটানের অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠক প্রসঙ্গে আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, ভুটান বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের ভাল বন্ধু। দুই দেশের অর্থনৈতিক সহযোগিতা আগামীতে আরো জোরদার হবে। কানেক্টিভিটি বাড়াতে অবকাঠামোগত সমস্যা কেটে গেলে ভুটানের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বি-পাক্ষিক বাণিজ্য বাড়বে। তিনি বলেন, ভুটান থেকে ১ হাজার মেগাওয়াট জলবিদ্যুত্ আমদানির বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ভুটান হয়ে নেপাল-ভারত-বাংলাদেশ বিদ্যুত্ সরবরাহ লাইন টানা হবে।
ভুটানের অর্থমন্ত্রী লিয়ন পো ন্যামগে দর্জি বলেন, বাংলাদেশ দীর্ঘদিনের বন্ধু। ১৯৭১ সালে ভুটান বাংলাদেশকে প্রথম স্বীকৃতি দিয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশ ক্রমশ উন্নতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা দরকার। দেশের জন্য অর্থনৈতিক উন্নয়ন অতি গুরুত্বপূর্ণ; কিন্তু সেটা শান্তি ধ্বংস করে নয়।