সীমান্তে জনতার প্রতিরোধ

S M Ashraful Azom
সীমান্তে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিএসএফ’র বাড়াবাড়ি সীমা ছাড়িয়ে গেছে। প্রায় প্রতিদিনই বিএসএফ’র বৈরী আচরণের শিকার হচ্ছে বাংলাদেশীরা। মারধর, নির্যাতন, গুলতি দিয়ে মারবেল ও ঢিল ছুঁড়ে অন্ধ করে দেয়া থেকে শুরু করে গুলি করে হত্যা পর্যন্ত অবলীলায় করে যাচ্ছে। এর কোন প্রতিকারই বাংলাদেশের মানুষ পাচ্ছে না। বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিজিবিও কার্যকর কোন প্রতি-উত্তর দিতে পারছে না। সীমান্তে এ বাহিনীর কার্যকর উপস্থিতি পরিলক্ষিত হচ্ছে না। ফলে সীমান্তবাসীকে যেন অনেকটা নিজেদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিজেদেরই করতে হচ্ছে। সাধ্যানুযায়ী বিএসএফকে প্রতিহত করার প্রক্রিয়া অবলম্বন করতে হচ্ছে। গত শুক্রবার বিএসএফ সাতক্ষীরা সীমান্তে বিজিবিকে ফাঁকি দিয়ে সাতক্ষীরা সীমান্তের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়ে বাংলাদেশীদের ওপর হামলার চেষ্টা চালায়। জনতা পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তুললে দিশেহারা হয়ে অনুপ্রবেশকারী, হামলাকারী বিএসএফ সদস্যরা একটি অস্ত্র ও নৌকা ফেলে পালিয়ে যায়। পরদিন দুই দেশের সীমান্ত বাহিনীর এক পতাকা বৈঠকে ক্ষমা চেয়ে অস্ত্র ও নৌকা ফেরত নেয়। বিজিবি ভারতীয় বাহিনীর এই অনুপ্রবেশ ঠেকাতে না পারলেও সাধারণ মানুষ ঠিকই তাদের ঠেকিয়ে দিয়েছে। তাদের পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছে। বিজিবির চোখ ফাঁকি দিয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বিএসএফের ঢুকে পড়া আবারও সীমান্তে বিজিবির দুর্বল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার প্রমাণই সুনির্দিষ্ট করলো।সীমান্তে ভারত মরণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করবে না, সীমান্তহত্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনবে বলে প্রতিশ্রুতি দিলেও তা রক্ষা করছে না। আমরা দেখছি, প্রায় প্রতিনিয়ত তার সীমান্ত রক্ষী বাহিনী কর্তৃক বাংলাদেশের মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঢুকে বাংলাদেশীদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে, আহত-নিহত করছে। এর কোন প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না। আমরা প্রতিনিয়ত ভারতের সাথে সৎ ও বন্ধুত্বসুলভ সম্পর্কের কথা বলে তার একের পর এক দাবি পূরণ করেছি। অন্যদিকে ভারত সীমান্তসহ অন্যান্য বিষয়ে একচোখা নীতি অবলম্বন করে তার কোনো স্বীকৃতিই দিচ্ছে না। সে এমন আচরণ করে বুঝিয়ে দিচ্ছে, বন্ধুত্বে নয়, সে দাদাগিরিতে বিশ্বাসী। আমাদের সরকার ও তার পররাষ্ট্রনীতিও যেন তা অনেকটা মেনে নিচ্ছে। তা নাহলে সীমান্তে ভারতীয় বাহিনীর অত্যাচার দিন দিন যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে, তা নিয়ে কেন কোনো ধরনের টুঁ শব্দ করা হচ্ছে না। সীমান্তে বিজিবি’র কার্যকর উপস্থিতিইবা কেন কম পরিলক্ষিত হচ্ছে, প্রশ্নের যথাযথ উত্তর দেশের মানুষ পায় না। এ কথা বহুবার বলা হয়েছে, সীমান্তে বিজিবির যতটা বাহাদুরী দেখানোর প্রয়োজন তা সে দেখাতে পারছে না। দেশের অভ্যন্তরে রাজনৈতিক দমন-পীড়নে নিয়োজিত করলে সেখানে তার ব্যাপক বীরত্ব দেখা যায়। এমনকি তার গুলিতে মানুষের মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। দুঃখের বিষয়, যে সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর দায়িত্ব সীমান্ত অটুট রেখে দেশের মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, সেই বাহিনী দ্বারাই দেশের অভ্যন্তরে মানুষকে মরতে হচ্ছে। কিছু দিন আগে দিনাজপুরের বিরামপুর সদরে চোরাচালানকারীর সাথে বন্দুক যুদ্ধে বিজিবির গুলিতে দু’জন নিহত হয়। বিজিবির দাবী নিহত দু’জন চোরাচালানের সাথে জড়িত ছিল। স্থানীয় লোকজনের দাবি, এ দু’জন অত্যন্ত নিরীহ ব্যক্তি ছিলেন। এ থেকে সাধারণ মানুষের মনে ক্ষোভ জন্মায়। অনেকে যদি এ মন্তব্য করে, সীমান্ত দিয়ে অবৈধ অস্ত্র, মাদকসহ অন্যান্য মালামালের চোরাচালান এবং বিএসএফের অত্যাচার ঠেকানোর মুরোদ বিজিবির নেই, কেবল দেশের ভেতরে ব্যাটাগিরি দেখাচ্ছে, তাহলে কি খুব বেশি দোষ দেয়া যাবে? বিজিবি এমনকি মিয়ানমার সীমান্তে নিজ সদস্যদেরই রক্ষা করতে পারেনি। গত শুক্রবার সাতক্ষীরায় যখন বিএসএফকে সাধারণ মানুষ রুখে দিল, তখন বিজিবি কোথায় ছিল? তারা থাকলেও কি করে বিএসএফ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঢুকে গ্রামবাসীকে তাড়া করতে পারলো? বলাবাহুল্য, এসব ঘটনা সীমান্তে বিজিবি’র দুর্বলতাই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে। সীমান্তের বাংলাদেশীরা বিজিবি’র সামর্থ্য সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হয়ে গেছে। তাই তারা নিরস্ত্র অবস্থায়ই বিএসএফের আক্রমণকে প্রতিহত করা শুরু করেছে। সাতক্ষীরা তার অন্যতম উদাহরণ হয়ে থাকল। এজন্য সাতক্ষীরা সীমান্তের জনতাকে অবশ্যই ধন্যবাদ দিতে হবে। সীমান্তে বিজিবি’র সক্ষমতা নিয়ে নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বহুদিন ধরেই বলে আসছেন। বাহিনীটির কমজোরির বিষয় নিয়েও অনেক প্রশ্ন রয়েছে। সর্বশেষ মিয়ানমারে নায়েক রাজ্জাককে ধরে নিয়ে অপমানজনক অবস্থায় ছবি তুলে তা প্রকাশ করা এবং ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে বিএসএফ কর্তৃক প্রায় প্রতিদিন মানুষ আহত-নিহত হওয়ার ঘটনা যথাযথভাবে প্রতিহত করতে না পারা বিজিবির সক্ষমতার বিষয়টিকে আরও প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, সীমান্তের মানুষকে বিএসএফ যখন তুলে নিয়ে যায়, নির্যাতন করে, গুলি করে হত্যা করে, তখন বিজিবি কোথায় থাকে? বিজিবি কেন তা প্রতিহত করতে পারে না? এসব প্রশ্নের সদুত্তর পাওয়া যাবে কিনা জানি না, তবে একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর এই দুর্বল অবস্থান কোনভাবেই কাম্য নয়। আমরা চাই, বিজিবি তার শক্তি-সামর্থ্য নিয়ে সীমান্তকে সুরক্ষিত এবং সীমান্তের মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। সীমান্ত অরক্ষিত রেখে দেশের অভ্যন্তরে নিরাপত্তা বিধানের নীতি গ্রহণযোগ্য নয় এবং কোনো সচেতন ব্যক্তিও তা আশা করে না। সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর কার্যকারিতা সীমান্তেই দেখাতে হবে। চোরাচালান, অবৈধ অনুপ্রবেশ এবং নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থে সীমান্তে বসবাসকারী বাংলাদেশীদেরও সতর্ক এবং সচেতন থাকতে হবে। 
ট্যাগস

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top