ই’তিকাফের বিধান ও সদক্বায়ে ফিত্র

S M Ashraful Azom
ই’তিকাফ ঃ ইবাদতের উদ্দেশ্যে নিয়্যত সহকারে মসজিদে অবস্থান করাকে ইসলামী পরিভাষায় ই’তিকাফ বলে। ই’তিকাফকারী নারী-পুরুষের অবশ্যই মুসলমান ও বিবেকবান হওয়া পূর্বশর্ত। পুরুষকে স্ত্রী সহবাস ইত্যাদি থেকে এবং নারীকে হায়েয-নিফাসের অপবিত্রতা হতে পবিত্র হতে হবে।ই’তিকাফের জন্য মসজিদ ঃ ই’তিকাফের জন্য জামে মসজিদ হওয়া শর্ত নয়, বরঞ্চ যে মসজিদে ইমাম ও মোয়াযযিন নিয়োজিত আছেন এবং পাঁচ ওয়াক্ত নামায জামাআত সহকারে আদায় হয়, সে সব মসজিদে ই’তিকাফ করা জায়েয। (বাহারে শরীয়ত ও তাহতাবী)তবে মসজিদুল হারাম, মসজিদে নববী সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম অত:পর বায়তুল মুকাদ্দাস, অত:পর যেখানে জামাত বড় হয় সেখানে ইতিকাফ করা ভাল। মেয়েদের জন্য মসজিদে ই’তিকাফ করা মাকরূহ্ তারা ঘরে একটা নির্দিষ্ট কক্ষে ই’তিকাফ করবে। (বাহারে শরীয়ত ও তাহতাবী শরীফ)পবিত্র রমযান শরীফের শেষের দশদিন ই’তিকাফ করা সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ আলাল কেফায়া অর্থাৎ মহল্লাবাসীর কেউ যদি ই’তিকাফ করে তাহলে সবার পক্ষ থেকে আদায় হয়ে যাবে। কিন্তু যদি কেউ ই’তিকাফ না করে, তাহলে সকলেই সমানভাবে গুনাহগার হবে। (আলমগীরী, দূররে মুখতার)ই’তিকাফ আদাযের জন্য ২০ রমযান সূর্যাস্তের পূর্বে মসজিদে ই’তিকাফের নিয়্যতে প্রবেশ করে ঈদের চাঁদ উদয় হওয়ার পর বের হবেন। কেউ যদি ২০শে রমযান সূর্যাস্তের পর মসজিদে প্রবেশ করে তবে কিছু সময় কম হওয়ার দরুন তার ই’তিকাফ সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ হিসেবে আদায় হবে না।ই’তিকাফ অবস্থায় যা মাকরূহ ঃ ১. ই’তিকাফকারী চুপ থাকা। ইবাদত মনে করে চুপ থাকা মাকরূহে তাহরীমী (গুনাহ) তবে স্বাভাবিক কারনে চুপ থাকা মাকরূহে তাহরীমি নয়। ২. বেহুদা বা অযথা কথাবার্তা বা অনর্থক কোন কাজ করা। মসজিদে দুনিয়াবী কথাবার্তা বলা পুণ্যসমূহকে নষ্ট করে দেয়, যেমনিভাবে আগুন কাঠকে ভস্মীভূত করে দেয়। (তাফসীরাতে আহমদি)ই’তিকাফ অবস্থায় কি কি করা ভাল ঃ ১. পাঁচ ওয়াক্ত নামায জামাআত সহকারে আদায় করা। জামাআত অকারণে ছেড়ে দিলে গুনাহগার হবে। কেননা জামাআত সুন্নাতে মুআক্কাদাহ। ২. ইশরাক, দ্বোহা, আউওয়াবীন, শাফীউল বিতর ও তাহাজ্জুদ ইত্যাদি নামায আদায় করা। ৩. কুরআন শরীফ তেলাওয়াত করা। ৪. হাদীস শরীফ অধ্যয়ন করা। ৫. কুরআন হাদীসের বিশুদ্ধ তাফসীর ও ব্যাখ্যাগ্রন্থবলী অধ্যয়ন করা। ৬. নবী ও ওলীগনের জীবনী পাঠ কর্ া ৭. ধর্মীয় পুস্তিকা পাঠ করা। ৮. অধিক পরিমাণে দুরূদ শরীফ পাঠ করা। ৯। তাসবীহ-তাহলীল ইত্যাদি পাঠ করা। অর্থাৎ সর্বদা ইবাদতে মগ্ন থাকা। (তাহতাবী ও দুররে মুখতার)কেউ মান্নতের ই’তিকাফ পালনকালে মৃত্যুবরণ করলো, কিংবা মৃত্যুকালে তার দায়িত্বে মান্নাতের ই’তিকাফ থেকে যায়, তবে প্রতিদিনের পরিবর্তে একজনের ফিতরা পরিমাণ অর্থ বা আহার্য্য কোন ফক্বীর-মিসকীনকে প্রদান করতে হবে যদি মান্নতকারী ওসীয়ত করে যায় মান্নতকারীর জন্য ওসীয়ত করে যাওযা কর্তব্যও বটে। ওসীয়ত না করলেও ওয়ারিশগণের কেউ তা আদায় করা জায়েয ও উত্তম।ই’তিকাফকারী ভুল বশত: দিনের বেলায় কিছু খেয়ে ফেললে ই’তিকাফ নষ্ট হবে না। (আলমগীরী)ইতিকাফকারী প্রস্রাব-পায়খানা করতে মসজিদ হতে বের হওয়া অবস্থায় কর্জদাতা তাকে আটকে ফেললে তার ই’তিকাফ নষ্ট হয়ে যাবে।ই’তিকাফ নষ্ট হওয়ার কারণসমূহ ঃ ১. শরীয়ত অনুমোদিত প্রয়োজন ছাড়া ই’তিকাফকারী মসজিদ বা ঘর থেকে বের হলে। ২. স্বামী-স্ত্রী পরস্পর যৌনসঙ্গমে লিপ্ত হলে। ৩. স্বামী-স্ত্রী পরস্পর চুম্বন করলে বা কামভাব নিয়ে স্পর্শ করলে। ৪. জানাযার নামায পড়তে বের হলে ৫. রোগী দেখতে বের হলে ৬. পাগল হয়ে গেলে বা বেহুশ থাকা অবস্থায় রোযা রাখা সম্ভব না হলে। ৭. খাবার মসজিদে নেয়া সত্বেও বাইরে এসে খেলে। ৮. ওজু ও গোসলের জন্য ভেতরে ব্যবস্থা থাকা সত্বেও বাইরে বের হলে ই’তিকাফ ভঙ্গ হবে।যেসব প্রয়োজনে ই’তিকাফের স্থান হতে বের হওয়া বৈধ ঃ ১. ভিতরে পায়খানা প্রস্রাবের ব্যবস্থা না থাকলে। ২. পুরুষের জন্য ই’তিকাফ কৃত মসজিদে জুমআর ব্যবস্থা না থাকা অবস্থায় জুমার নামায আদায়ের জন্য যাওয়া। ৩. অপবিত্র হলে গোসলের জন্য (ভেতরে ব্যবস্থা না থাকলে) অবশ্য, পায়খানা-প্রস্রাব করতে গিয়ে মুস্তাহাব গোসল করে ফেললে ক্ষতি নেই। ৪. খাবার আনার ব্যবস্থা না থাকলে ঘরে গিয়ে আহার করা। ৫. আযান দিতে মিনার পর্যন্ত যাওয়া। ৬. মসজিদ ভেঙ্গে পড়লে যালিমদের অত্যাচারের আশঙ্কায় নিরাপত্তার জন্য অন্য মসজিদে গিয়ে ই’তিকাফ সম্পন্ন করা জায়েয এবং সে উপলক্ষে বের হওয়াও জায়েয।সদক্বা-এ ফিতর ঃ  নিসাব পরিমাণ অর্থ সম্পদের অধিকারী নারী বা পুরুষের সদক্ব্-াএ ফিতর আদায় করা ওযাজিব। নিসাব হচ্ছে সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ বা সাড়ে বায়ান্না তোলা রৌপ্য বা এর সমপরিমাণ নগদ অর্থ।কর্জমুক্ত ও প্রয়োজনীয় অর্থ ব্যতীত নিসাব (সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ বা সাড়ে বায়ান্না তোলা রৌপ্য বা এর সমপরিমাণ নগদ অর্থ) এর মালিকগণ নিজের ও নিজের পোষ্য নাবালেগ সন্তানদের পক্ষ হতে এ সদক্বা প্রদান করবেন। ফিতরার ন্যূনতম পরিমাণ হল- অর্ধ সা: (২ কেজি ৫০ গ্রাম) পরিমাণ গম বা আটা বা এর সমমূল্য।যার উপর সদক্বা-এ ফিতর ওয়াজিব তাকে অবশ্যই এটা আদায় করতে হবে। এমনকি অনাদায়ী থাকাবস্থায় দরিদ্র হলেও এটা ক্ষমা করা হবে না। একজনের ফিতরা একজন গরীবকে দেয়া জায়েয। তেমনিভাবে কয়েকজন মিসকিনকে বন্টন করে দেয়াও জায়েয়।ঈদুল ফিতর-এর নামায ঃ ঈদুল ফিতর এর ৬ তাকবীর বিশিষ্ট দুই রাকআত নামায আদায় করা প্রত্যেক প্রাপ্ত বয়স্ক (নাবালেগ) ক্রীতদাস ও অন্ধ ব্যক্তির উপর ঈদুল ফিতরের নামায ওয়াজিব নয়। বিনা কারণে এ নামায পরিত্যাগ করা গোমরাহী ও বিদআত।ঈদের নামাযের পর খোৎবা প্রদান করা সুন্নাত, কিন্তু শ্রবণ করা ওয়াজিব। এ সময় কথা বলা সম্পূর্ণ নিষেধ, এমনকি তাসবীহ-তাহলীল ও কুরআন শরীফ তেলাওয়াত করাও নিষেধ।খতীব ঈদের খোতবা প্রদানের পূর্বে মিম্বরে না বসা সুন্নাত এবং প্রথমে খোৎবার পূর্বে ৯ বার, দ্বিতীয় খোতবার পূর্বে ৭ বার উচ্চস্বরে  এবং মিম্বর থেকে অবতরণের পূর্বে ১৪ বার আল্লাহ আকবার চুপে চুপে পাঠ করা সুন্নাত
ট্যাগস

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top