ঈদের ছুটিতে শহরের বাড়ি ছেড়ে নাড়ীর টানে গ্রামের বাড়িতে যাওয়া খুবই আনন্দের ব্যাপার। তবে অল্প দিনের এই ভ্রমণে দৈনন্দিন খাওয়া-দাওয়া, ঘুম আর বিশ্রামের স্বাভাবিক রুটিন ঠিক থাকে না। শরীর স্বাস্থ্যের ওপর কিছুটা হলেও এর প্রভাব পড়ে। ভ্রমণে ও গ্রামের বাড়ির পরিবেশে খাপ খাইয়ে নিতে প্রায় সবারই কিছুটা সমস্যা হয়। ভ্রমণকালে বাসে, ট্রেনে বা
লঞ্চ-স্টিমারে বমি হতে পারে। পুরো ছুটির সময়টাতে ডায়রিয়া, আমাশয়, এসিডিটি আর অন্যান্য ইনফেকশন হবারও সম্ভাবনা থাকে। সুতরাং ছুটির এ সময়টাতে গ্রামের বাড়িতে যাওয়া, থাকা আর ফিরে
আসার ব্যাপারে একটু
সাবধান ও সতর্ক
থাকতে হবে।
যা যা করা বিশেষ প্রয়োজন
১. আগে থেকেই ডাক্তারের কোন প্রেসক্রিপশন মত ওষুধ চলতে থাকলে সে সব ওষুধ তো নিতেই হবে। এ ছাড়া আরও কিছু প্রয়োজনীয় ওষুধ সাথে নিয়ে গ্রামের বাড়ির দিকে রওনা দেয়া ভালো। কারণ গ্রামে প্রয়োজনের সময় প্রয়োজনীয় ওষুধ নাও পাওয়া
যেতে পারে। খাবার স্যালাইন, এন্টাসিড, রেনিটিডিন, প্যারাসিটামল, বমির ওষুধ, এন্টিহিস্টামিন, স্যাভলন, এন্টিবায়োটিক মলম, ব্যান্ডেজ-ইত্যাদি সাথে নিতে হবে। হাত ধোয়ার সাবান কিংবা হ্যান্ড স্যানিটাইজার নিতে পারেন সাথে। মশার কয়েলও নিতে পারেন রাতে মশার কামড় থেকে
বাঁচতে। পথে পান করার জন্য পর্যাপ্ত পানি নিতে হবে।
২. বাস, ট্রেন, নৌকা, লঞ্চ, স্টিমার- যে কোন বাহনে চড়ার পর অনেকেরই বমি হতে পারে। এ সমস্যার নাম ‘মোশান সিকনেস’। মোশান সিকনেস পুরোপুরি প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। তবে কিছু টিপস মেনে চললে উপকার পাওয়া যাবে। যেমন: গাড়ির ভেতরে তাকিয়ে না থেকে গাড়ির বাইরে তাকিয়ে থাকলে বমি বমি ভাব কম হবে। চলন্ত গাড়িতে বই পত্রিকা পড়তে থাকলেও অনেক সময় বমির উদ্রেক হয়। এরূপ হলে গাড়িতে বই পত্রিকা না পড়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকলে বমি বমি ভাব কমে যেতে পারে। জানালার পাশে সিট নিয়ে জানালা একটু খুলে রাখলেও ভালো ফল পাওয়া যাবে। হালকা ভাবে দু’চোখ বন্ধ করে একটু তন্দ্রাচ্ছন্ন ভাব আনলেও উপকার পাওয়া যাবে। গাড়িতে আড়াআড়ি ভাবে বা যে দিকে গাড়ি চলছে সে দিকে পেছন দিয়ে না বসলেও বমি বমি ভাব কম হবে। যাত্রা শুরুর একটু পূর্বে ভর পেট খেলেও বমি হতে পারে। সুতরাং যাত্রার শুরুর আগে ভরা পেটে খাবেন না। হালকা নাস্তা করলে মন্দ নয়। কিছু ওষুধ আছে যেগুলো বমি হওয়া প্রতিরোধ করতে পারে। ডাক্তারের পরামর্শে তা সেবন করতে পারেন গাড়িতে ওঠার পূর্বে। আদা কিংবা চ্যুয়িং গাম চিবালেও উপকার পাওয়া যাবে।
৩. রাস্তার পাশের দোকানের
খাবার বা অপরিচিত লোকের কাছ থেকে কোন খাবার না খাওয়াই ভালো। বাসা থেকে পানি নিয়ে বের হওয়া উচিত্। বাইরের পানি নিরাপদ নাও হতে পারে। এরূপ খাবার বা পানীয় থেকে ডায়রিয়া বা আমাশয় হয়ে উত্সবের আনন্দই মাটি হয়ে যেতে পারে।
৪. খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই
সাবান দিয়ে ভালো করে হাত ধুয়ে নিতে হবে। ঘন ঘন
খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। এতে পেট
খারাপ হতে পারে। বদহজমও হতে পারে। অনেক বাচ্চাই গ্রামের পশু পাখি, যেমন
গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগি- ইত্যাদির গায়ে হাত দিতে চায়। তাদেরকে এসব থেকে বিরত রাখতে হবে। ছুঁয়ে ফেললে ভালো করে হাত ধুয়ে দিতে হবে। পুকুর বা জলাশয়ের পানিতে বাচ্চারা যেন একা একা না নামে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। কারণ একা একা নামলে বাচ্চারা পানিতে ডুবে যেতে পারে। রৌদ্র থেকে রক্ষা পেতে ছাতা বা ক্যাপ ব্যবহার করতে হবে। রাতে ঘুমানোর সময় মশার কামড় থেকে
বাঁচতে মশারি বা মশার কয়েল ব্যবহার করতে হবে। আপনজনের সঙ্গে ঈদ উদযাপনের জন্য সকলের ভ্রমণ ও অবস্থান স্বাস্থ্যকর হোক।