সাধারণ চিনিযুক্ত কোমল পানীয়ের সাথে তুলনা করতে গেলে অনেকেই ডায়েট অর্থাৎ চিনিমুক্ত পানীয়টি বেছে নেন। কেউ বা আর্টিফিশিয়াল সুইটনারের ভয়ে ডায়েট পানীয়ের থেকে দূরে থাকেন। আসলে এ দুইয়ের মাঝে কোনটি ভালো? ডায়েট পানীয় থেকে অনেকেরই আকর্ষণ সরে গেছে ইদানিং। এর কারণ হলো, চিনির বিকল্প আর্টিফিশিয়াল সুইটনারের সাথে ক্যান্সারের ঝুঁকি জড়িত আছে বলে মনে করেন তারা। ব্যাপারটা কিন্তু আসলে এতো সহজ নয়। আর্টিফিশিয়াল সুইটনারের সাথে ক্যান্সারের সম্পর্ক নিয়ে যত গবেষণা আছে তার বেশিরভাগই পুরনো এবং অতিরঞ্জিত। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, স্যাকারিন এবং ক্যান্সারের সম্পর্ক নিয়ে ইঁদুরের ওপর করা ৫০টি গবেষণা থেকে দেখা যায়, এর মাঝে মাত্র একটি গবেষণায় স্যাকারিনের সাথে ব্লাডার ক্যান্সারের সম্পর্ক দেখা যাচ্ছে। কিন্তু ওই ধরণের ইঁদুরের পেটে এমন একটি প্যারাসাইট থাকে যার কারণে এদের ক্যান্সার হবার সম্ভাবনা এমনিতেই বেশি। ১৯৯৬ সালে জার্নাল অফ নিউরোপ্যাথলজি অ্যান্ড এক্সপেরিমেন্টাল নিউরোলজিতে প্রকাশিত এক জরিপে অ্যাসপারটেম এবং ব্রেইন টিউমারের মাঝে সম্পর্ক দেখানো হয়। এই জরিপে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ মানুষের বয়স ছিলো ৭০ এর উপরে। কিন্তু অ্যাসপারটেম আমেরিকায় ব্যবহার বৈধ করা হয় ১৯৮১ সালে। সে সময়ে এসব মানুষেরা তাদের মধ্যবয়সে পৌঁছে গিয়েছিলেন এবং তারা অ্যাসপারটেমের মূল ভোক্তাদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না। ফলে এই জরিপকে তেমন একটা মূল্য দেওয়া যায় না। আর্টিফিশিয়াল সুইটনার খাওয়ার ফলে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে, দিন শেষে এমন কোনো সিদ্ধান্তে আসার মত যথেষ্ট প্রমাণ গবেষকদের হাতে নেই। কিন্তু পানীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে তারা বিশুদ্ধ পানিই পান করতে বলেন। কারণ ক্যান্সারের ঝুঁকি না থাকলেও, চিনিযুক্ত কোমল পানীয় পান করতে গেলে দেখা দেয় অনেক স্বাস্থ্যঝুঁকি। সাধারণ এক ক্যান পেপসিতে থাকে ৪১ গ্রাম চিনি। এ ধরণের চিনিযুক্ত কোমল পানীয়ের সাথে হৃদরোগ, ওবেসিটি এবং টাইপ টু ডায়াবেটিসের ঝুঁকি জড়িত। ডায়েট পানীয় পান করতে গেলে ক্যান্সারের ঝুঁকির কথা চিন্তা না করলেও আরেক ধরণের সমস্যা আছে। ডায়েট পানীয় স্বাদে মিষ্টি হলেও এতে সে পরিমাণ ক্যালোরি থাকে না। ফলে আমাদের মস্তিষ্ক বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে এবং আরও বেশি পরিমাণে ক্যালোরি গ্রহণ করার প্রবণতা দেখায়। দীর্ঘ সময় ধরে ডায়েট পানীয় বা আর্টিফিশিয়াল সুইটনার গ্রহণ করতে থাকলে সময়ের সাথে সাথে চিনির প্রতি আকর্ষণ তো কমেই না বরং অতিরিক্ত ক্যালোরিযুক্ত খাদ্য গ্রহণের ইচ্ছে বাড়ে। এ সবের মানে কি দাঁড়ালো? ডায়েট পানীয় বা সাধারণ পানীয় কোনোটাই সম্পূর্ণ নিরাপদ নয়। বরং বিশুদ্ধ পানি পান করাটাই সবচাইতে সুবিধাজনক।