প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জলবায়ুর পরিবর্তনকে উন্নয়নের প্রধান অন্তরায় হিসেবে আখ্যায়িত করে তা মোকাবেলায় উন্নত দেশগুলোর অর্থ ছাড় প্রক্রিয়াকে আরো সহজ করার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, বৈশ্বিক পর্যায়ে কিছু অগ্রগতির পরও জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত তহবিলগুলোর বিপুল সম্ভাবনা এখনও পুরোপুরি কাজে লাগানো সম্ভব হয়নি। বৈশ্বিক জলবায়ু অর্থায়ন প্রক্রিয়ায় বিদ্যমান শর্তসমূহ কঠিন ও জটিল। তাই জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত তহবিলগুলোকে ঝুঁকিপূর্ণ দেশসমূহের চাহিদা ও অগ্রাধিকার অনুযায়ী কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে বিদ্যমান বাধা ও অর্থ ছাড়ের ধীরগতি অপসারণ করতে হবে। তবে বাংলাদেশ শুধু সাহায্যের জন্য বসে নেই। নিজস্ব অর্থায়নে ‘বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্ট ফান্ড’ গঠন করে মানুষকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
গতকাল রবিবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘বাংলাদেশ উন্নয়ন ফোরাম-২০১৫’ এর উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। শেখ হাসিনা বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) বাস্তবায়নে উন্নত দেশসমূহকে আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। উন্নয়ন ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় প্রথাগত আর্থিক সহযোগিতার পাশাপাশি বিশ্ব বাণিজ্য ব্যবস্থা যাতে দারিদ্র্য বিমোচন, কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ সার্বিক বৈশ্বিক উন্নয়নে অবদান রাখতে পারে সে বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আরো মনযোগী হতে হবে। উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে প্রতিশ্রুত সহায়তা পেলে বাংলাদেশের কঠোর পরিশ্রমী ও উদ্যমী মানুষ অদূর ভবিষ্যতে উন্নয়নের এক বিস্ময় হিসেবে আবির্ভূত হবেন। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বাংলাদেশের বর্তমান উন্নয়ন ধারা এগিয়ে নিতে তাদের সার্বিক সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য পূরণে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও কর্মসূচি নিয়ে কাজ করছে। আমাদের এ অগ্রযাত্রায় আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগীদের সাথে পেলে আমরা আনন্দিত হব। তিনি বলেন, অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের মাধ্যমে ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ ও ২০৪১ সালে উন্নত সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করার লক্ষ্যে তার সরকার কাজ করে যাচ্ছে। এসডিজি অর্জনে বাংলাদেশের বর্তমান উন্নয়ন ধারা এগিয়ে নিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সহায়তা অব্যাহত রাখবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, এসডিজি অর্জনেও সফল হবে বাংলাদেশ।
শেখ হাসিনা বলেন, আমি আন্তরিকভাবে বিশ্বাস করি, বাংলাদেশ উন্নয়ন ফোরাম বা বিডিএফ ২০১৫ আগামী দিনের দারিদ্র্যমুক্ত, ক্ষুধামুক্ত সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য যৌথ কর্মপন্থা নির্ধারণ ও প্রয়োজনীয় সুপারিশ প্রণয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। তিনি বলেন, রূপকল্প-২০২১’র মূল লক্ষ্য হচ্ছে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তর করা। এ জন্য বাড়াতে হবে মাথাপিছু আয়। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৫ থেকে নিয়ে যেতে হবে ৮ এ। কমাতে হবে দারিদ্র্যের হার। আর এসব লক্ষ্য বাস্তবায়নে টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে সরকার সম্প্রতি সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। বিশ্ব নেতৃবৃন্দের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য বা এসডিজি গ্রহণের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সহস াব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যের (এমডিজি) মত এসডিজি বাস্তবায়নেও সাফল্য অর্জন করতে চায়। তিনি আশা প্রকাশ করেন, এ ফোরাম এসডিজি বিষয় আলোকপাত করবে এবং সরকারকে বাস্তবমুখী ও কার্যকর সুপারিশ প্রদান করবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এসডিজি বাস্তবায়নে আরো সম্পদের প্রয়োজন। এজন্য আরো সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ (এফডিআই) প্রয়োজন। এ প্রেক্ষাপটে বর্তমান সরকার প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগের জন্য দেশের বিভিন্ন এলাকায় ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে এবং অধিকতর বৈদেশিক বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টিতে প্রয়োজনীয় সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। তিনি বলেন, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির অর্থায়নে বৈদেশিক সাহায্যের ওপর আমাদের নির্ভরশীলতার প্রবণতা ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে। যদিও বাংলাদেশের ভবিষ্যত্ সমৃদ্ধির জন্য উন্নয়ন অংশীদারদের সহযোগিতা এখনও অত্যন্ত জরুরি।
প্রধানমন্ত্রী সুষম ও পারস্পরিক উন্নয়নের জন্য আঞ্চলিক, উপ-আঞ্চলিক, দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। এক্ষেত্রে সার্ক, বিমসটেক এবং বিসিআইএম-এ বাংলাদেশের ভূমিকার কথাও তুলে ধরেন। শেখ হাসিনা বলেন, সম্প্রতি আমরা প্রতিবেশী দেশ ভারত, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে ব্যবসা বাণিজ্য ও যোগাযোগ বৃদ্ধির সুবিধার্থে এ অঞ্চলের মধ্যে অবকাঠামো উন্নয়নের কাজে হাত দিয়েছি। ইতিমধ্যে চারটি দেশের মধ্যে পণ্য পরিবহন শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, এ অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তি, জ্বালানি, বিদ্যুত্, কৃষি, ব্যবসা-বাণিজ্য, পরিবেশ ও কারিগরি খাতে পারস্পরিক ও আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধিতে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলো বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে পারে।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের উদ্যোগে ২০১০-এর পর এবারই অনুষ্ঠিত হচ্ছে বাংলাদেশ উন্নয়ন ফোরাম। এতে বাংলাদেশে অর্থায়নকারী উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিরা অংশ নিচ্ছেন। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট জিং লিকুন, এশিয়ান ডেভলপমেন্ট ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট ওয়েনকেই ঝাং, জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ডেপুটি ডাইরেক্টর জেনারেল কিংগো টয়োডা, ইউএসএইড বাংলাদেশের প্রধান জানিনা জারুজেলস্কি এবং ইআরডি’র সিনিয়র সচিব মেজবাহ উদ্দিন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।