জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছে সামরিক সহায়তা চেয়েছে ফ্রান্স। প্যারিসে গত শুক্রবার হামলায় শতাধিক নিহত হওয়ার পর দেশটি নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঢেলে সাজাচ্ছে। দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, সারা দেশে সোয়া লাখ নিরাপত্তা কর্মী মোতায়েন করা হয়েছে। দেশটি এর আগে সামরিক বাজেট কাটছাঁট করার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তা থেকে সরে আসছে। এদিকে প্যারিসে হামলায় এক মার্কিন ছাত্রী নিহত হয়েছে। ফ্রান্স ছাড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়াচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত ব্রিটেনও।
ফ্রান্সের সামারিক সাহায্যের আবেদনে সাড়া দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। ইইউভুক্ত দেশগুলোর লিসবন চুক্তির পর এই প্রথম কোনো দেশ সামরিক সহায়তার আবেদন জানালো। ইইউ চুক্তির ৪২-এর ৭ অনুচ্ছেদে বলা আছে, ইইউভুক্ত কোনো দেশ যদি অন্য কোনো দেশের দ্বারা সামরিক আগ্রাসনের শিকার হয় তাহলে শিকার হওয়া দেশটিকে সামরিক সহায়তা দেয়া যাবে। ফ্রান্সের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জ্যঁ জেভস লি ড্রায়ান ইইউর কাছে সামরিক সহায়তার আবেদন জানান বলে এক টুইটার বার্তায় জানিয়েছেন। ইইউর প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এই সহায়তা চান। ইইউও ফ্রান্সের আহবানে সাড়া দিয়েছে। ইইউর পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক প্রধান ফ্রেডারিক মঘারিনি এ তথ্য জানিয়েছেন।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওঁলাদ পার্লামেন্টে দেয়া ভাষণে বলেছেন, ব্রাসেলস (ইইউয়ের সদর দপ্তর) বাজেট নিয়ে নিয়ম করে দিয়েছে তার ফ্রান্সের জন্য মেনে চলা সম্ভব নয়। কারণ আমাদের এখন দরকার কড়া নিরাপত্তা। সেই জন্য বাজেট ঘাটতি কমাতে সামরিক বাজেট কমানো সম্ভব হবে না। নিরাপত্তার ক্ষেত্রে যতো অর্থ দরকার হবে তাই খরচ করা হবে। কারণ ফ্রান্স এখন চরম বিপদের সম্মুখীন এবং বাজেট কাটছাঁট নিয়ে ভাবার কোনো সুযোগ নেই। তিনি আইএস ধ্বংসের অঙ্গীকার করেন। ২০১৯ সালের মধ্যে সামরিক বাজেট কাটছাঁট করার সিদ্ধান্ত ছিল। আইএসের নেটওয়ার্ক ভাঙতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ১৭ হাজার নিরাপত্তা তথা গোয়েন্দা কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হবে, বাড়ানো হবে নিরাপত্তা সরঞ্জাম। নতুন করে ৫ হাজার পুলিশ, ১ হাজার কাস্টমস কর্মকর্তা এবং আড়াই হাজার কারারক্ষী নিয়োগ দেয়া হবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বার্নার্ড ক্যাজেনিউভি জানিয়েছেন, দেশজুড়ে ১ লাখ ১৫ হাজার কর্মী টহল দেবে। তিনি জানান, দেশজুড়ে সন্ত্রাসীদের ধরতে ১২৮টি অভিযান চালানো হয়েছে। সিরিয়ায়ও বিমান হামলা জোরদার করা হয়েছে। তিনি জানান, হামলায় প্রধান সন্দেহভাজন সালাহ আবদেসলামকে ধরতে বড় ধরনের অভিযান চলছে। ধারণা করা হচ্ছে, আবদেসলাম সীমান্ত পার হয়ে নিজ দেশ বেলজিয়ামে চলে গেছে। বেলজিয়ামের পুলিশও তার অনেক ছবি প্রকাশ করেছে। ফ্রান্সের সীমান্তে কঠোর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে বলেও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন। প্যারিসে হামলায় নিহত ছাত্রীর নাম নোহেমি গোনজালেজ। তিনি ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির ছাত্রী। ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন জানিয়েছেন, দেশটির বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনীকে অতিরিক্ত দুই বিলিয়ন পাউন্ড দেয়া হবে। এই অর্থ দিয়ে অস্ত্র, নতুন নতুন যান এবং হেলিকপ্টারসহ অন্যান্য সামরিক সরঞ্জাম কেনা হবে। প্যারিসের হামলার পুনরাবৃত্তি রোধে সব ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও তিনি জানিয়েছেন। - বিবিসি, দ্য টেলিগ্রাফ, ডয়চেভেলে ও ডেইলি মেইল অনলাইন।