সেবা ডেস্ক: টানা তিন দিন সুরের অন্যরকম মায়াজালে আবদ্ধ রেখে শনিবার পর্দা নামলো দেশের প্রথম আন্তর্জাতিক ফোক সংগীত উৎসব ‘ঢাকা ফোক ফেস্ট ২০১৫’ এর। মাছরাঙা ও সান ইভেন্টস আয়োজিত এ সংগীত উৎসবে গেয়েছেন ৬টি দেশের শতাধিক গুণী ফোক সংগীত-শিল্পী। রাজধানীর আর্মি স্টেডিয়ামে দর্শকও প্রাণভরে তিনটি দিন উৎসব উপভোগ করেছেন। বলা চলে, বাংলাদেশের লোকসংগীতের ইতিহাসের অন্যরকম স্মরণীয় তিন রাত ছিল এগুলো। ডিজিটাল ও প্রযুক্তির এ যুগেও লোকসংগীত যে তরুণদের মাঝে কতটা জনপ্রিয় সেটা উৎসবে তারুণ্যের ঢল দেখেই বোঝা গেছে। শেকড়ের গানের টানে তরুণ দর্শকরা ছুটে এসেছেন এখানে। তারা শুধু এসে স্টেডিয়ামে নীরব বসে থাকেননি, শিল্পীদের সঙ্গে সুর মিলিয়ে গেয়েছেন, উৎসাহ দিয়েছেন। প্রাণভরে উপভোগ করেছেন গান। আর তাইতো বিখ্যাত ফোক শিল্পী পবন দাস বাউল এ উৎসবে গান গাওয়ার পর বলেছেন, ফোকসংগীত হলো বাংলাদেশের সংগীত। এটা আবারও প্রমাণ হলো এ উৎসবের মাধ্যমে। এত ভালো দর্শক কোন শোতে পাইনি। আমি অনেক মুগ্ধ ও কৃতজ্ঞ বাংলাদেশের দর্শকদের প্রতি। উৎসবের প্রথম থেকে শেষ দিন পর্যন্ত এখানে সংগীত পরিবেশন করেছেন বাংলাদেশের ফরিদা পারভীন, মমতাজ বেগম, বারী সিদ্দিকী, রব ফকির, কিরণ চন্দ্র রায়, চন্দনা মজুমদার, শফি মণ্ডল, নাশিদ কামাল, মিনু বিল্লাহ্ ও পল্লবী ডান্স গ্রুপ, লুবনা মরিয়ম ও সাধনা ডান্স গ্রুপ, কাঙ্গালিনী সুফিয়া, আনুশেহ্ আনাদিল, অর্ণব, জলের গান, আজগর আলিম, জহির আলিম, নূরজাহান আলিম, ইসলাম উদ্দিন কিস্সাকার, লাবিক কামাল গৌরব ও ম্যাজিক বাউলিয়ানাসহ আরও অনেকে। পাকিস্তান থেকে আবিদা পারভীন ও সাঁই জহুর, ভারত থেকে পাপন, ইন্ডিয়ান ওশেন, নুরান সিস্টার্স, হামিরা থেকে মাঙ্গানিয়ারস্, অর্ক মুখার্জি, পবন দাস বাউল, পার্বতী বাউল, আয়ারল্যান্ড থেকে নিয়াভ নি কারা ও চীনের ইউনান আর্ট ট্রুপ। তিনদিনই এ উৎসব উপভোগ করেছে রেকর্ড সংখ্যক দর্শক। সব বয়সীদের উপস্থিতি থাকলেও তারুণ্যের জোয়ারই ছিল বেশি। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে স্টেডিয়ামে প্রবেশ করেছেন তরুণ-তরুণীরা। শুধু সাধারণ দর্শকই নয়, সংগীত পিপাসু অনেক মিডিয়া ব্যক্তিত্বও এ উৎসবের টানে ছুটে এসেছিলেন। তবে শেষের দিনটিতে আনন্দের পাশাপাশি উৎসবকে বিদায় জানানোর প্রাক্কালে আবেগী বনে গিয়েছিলেন দর্শক। অনেকেই অপূর্ণতার আক্ষেপ নিয়ে বলেছেন, এ উৎসবটি আরও দু-তিন দিন দীর্ঘায়িত করা উচিত ছিল। আবার অনেকেই বলেছেন, তিনটা দিন সংগীতের ঘোরের মধ্যে কাটালাম। এখন কষ্ট হচ্ছে বিদায় জানাতে। তবে কর্তৃপক্ষ কর্তৃক লোকগানের এ মহোৎসবটি নিয়মিত প্রতি বছর করার ঘোষণায় নতুন সম্ভাবনা, স্বপ্ন, প্রত্যাশা ও এক রাশ ভালোলাগা ও তৃপ্তি নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন দর্শক।
শেকড়ের উৎসবে তারুণ্যের জোয়ার : ঢাকা ফোক ফেস্ট ২০১৫
নভেম্বর ১৬, ২০১৫