আমি কানাডায় পড়তে এসেছি দুটো স্কলারশিপ নিয়ে। সুলিখ স্কুল অব ইঞ্জিনিয়ারিং ডিন’স এন্ট্রান্স স্কলারশিপ এবং প্রেসিডেন্টস অ্যাডমিশন স্কলারশিপ দুটো পেয়েছিলাম। স্কলারশিপ দুটো থাকার কারণে প্রথম বছর প্রায় বিনামূল্যে পড়ার সুযোগ পেয়েছি। এখন সেমিস্টার পরীক্ষার ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে টিউশন ফিতে স্কলার দিচ্ছে। সকাল আটটায় ক্লাস শুরু হয়। প্রতিদিনই আমাদের ক্লাসের পাশাপাশি ল্যাবে ব্যবহারিক হয়। তাই ক্লাস শেষ হতে হতে সন্ধ্যা ৬-৭টা বেজে যায়। কানাডা দিনের আলো সংরক্ষণ ব্যবস্থায় চলে। দিনে ক্লাস হয়। পরীক্ষা থাকলে তা রাতে হয়। পড়ার চাপ থাকলে ক্লাস শেষ করে লাইব্রেরিতে বসে অ্যাসাইনমেন্ট শেষ করি। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি ‘সোলার কার’ এবং ‘প্রজেক্ট নাইনটি’ নামে দুটি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত আছি। ক্লাব দুটিই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দ্বারা পরিচালিত।
সোলার কার ক্লাব গাড়িতে জ্বালানি তেলের বদলে সৌরশক্তি ব্যবহারের কাজ করে থাকে। সম্পূর্ণ গাড়ি বানানোর জন্য আমাদের নির্দিষ্ট সময় থাকে। আমরা সে কার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে থাকি। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় এ প্রজেক্টের অর্থায়ন করে থাকে। ‘প্রজেক্ট নাইনটি’ বিভিন্ন এনজিওর সাথে একত্রিত হয়ে বিশ্বব্যাপী ছোট ছোট উন্নয়নমূলক কাজ করে থাকে। এ কাজগুলো সম্পূর্ণভাবে একাডেমিক জ্ঞান কাজে লাগিয়ে করা হয়। সন্ধ্যায় পড়ার চাপ কম থাকলে খেলাধুলা করি। বন্ধুদের সাথে বাইরে খেতে যাই। রাতে ঘুমানোর আগে পড়াশোনা করা ছাড়াও রুম গোছানো, কাপড় ধোয়া এবং মাঝেমাঝে রান্নার কাজ করি।
বাংলাদেশে টার্ম পরীক্ষাগুলোর আগে কয়েক দিনের জন্য বন্ধ দেয়। এখানে সে ধরনের বন্ধ দেয়া হয় না। ক্ষেত্রবিশেষ দিনে ক্লাস নিয়ে রাতে পরীক্ষা নিয়ে নেয়। সাধারণত রাতে বাড়িতে বাবা-মার সঙ্গে কথা বলি। কথা বলার জন্য সাধারণত স্কাইপি ব্যবহার করে থাকি। বাংলাদেশের সঙ্গে কানাডার সময়ের পার্থক্য ১২ ঘণ্টা। তাই দিনের বেলা মা-বাবা ঘুমানোর আগে ভাইবার এবং মোবাইলেও কথা হয়ে থাকে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে একটি দোকানে আমি খণ্ডকালীন চাকরি করি। অবসর খুব একটা পাই না, কিন্তু ক্লাস বাদে যেটুকু সময় পাই, সে সময়টুকুর বেশিরভাগই স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাটিয়ে দিই। অনেক সময় বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে থাকি। সেসব প্রতিযোগিতা নিয়েও ব্যস্ত থাকতে হয়। বেশিরভাগ প্রতিযোগিতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে হয়। এ ছাড়া সোলার কার ক্লাবের সাথে থাকার কারণে মাঝে মাঝে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরেও প্রতিযোগিতায় অংশ নিই। সাপ্তাহিক ছুটির দিন শনিবার এবং রবিবার। দিন দুটোতে খণ্ডকালীন কাজও করি। রাতে মাঝে মাঝে বাঙালিদের গেট টুগেদার প্রোগ্রামে যাই। ক্লাবের প্রোগ্রাম থাকলে সেগুলোতেও অংশ নিই। এভাবেই কানাডার দিনগুলো কেটে যাচ্ছে।

