১২ নভেম্বর বগুড়া যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী

S M Ashraful Azom
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ১২ নভেম্বর বগুড়া যাচ্ছেন। ঐদিন সকালে বগুড়া সেনানিবাসে কর্মসূচি শেষে বিকালে শহরের আলতাফুন্নেছা খেলার মাঠে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় তার  ভাষণ দেয়ার কথা রয়েছে।
 
প্রধানমন্ত্রীর বগুড়া সফরকে ঘিরে বগুড়ায় আওয়ামী লীগ ও অন্যান্য অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের মাঝে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। ইতোমধ্যেই জেলা আওয়ামী লীগ বর্ধিত সভা করে জনসভার প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে।
 
জেলা আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বগুড়াবাসীর দীর্ঘদিনের দাবিগুলো এবার প্রধানমন্ত্রীর নিকট সরাসরি তুলে ধরা হবে। বিশেষ করে বগুড়া পৌরসভাকে সিটি করপোরেশনে উন্নীতকরণ, একটি পূর্নাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, একটি আন্তর্জাতিক মানের ফুটবল স্টেডিয়াম নির্মাণ, বগুড়া থেকে যমুনা সেতু পর্যন্ত রেল লাইন নির্মাণ এবং বগুড়া সিটি বালিকা বিদ্যালয় ও করোনেশন ইনস্টিটিউশনকে জাতীয়করণের দাবি জানানো হবে।
 
এদিকে দীর্ঘ ৭ বছর পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ১২ নভেম্বর বগুড়া সফরকালে আনুমানিক এক হাজার কোটি টাকা ব্যয় সাপেক্ষে ৫০টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন এবং ভিত্তি স্থাপন করবেন বলে জানা গেছে। তবে বগুড়ার ঐতিহাসিক আলতাফুন্নেছা খেলার মাঠে জেলা আওয়ামী আয়োজিত জনসভায় তিনি বগুড়াকে সিটি কর্পোরেশন অথবা বিভাগীয় শহর হিসেবে এবং বগুড়ায় একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের ঘোষণা দিবেন কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি ।
 
দলীয় এবং স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী ঐদিন জনসভাস্থলে স্থাপিত ডিজিটাল ইলেক্ট্রনিক বোর্ডের মাধ্যমে যে প্রকল্পগুলির উদ্বোধন এবং ভিত্তি স্থাপন করবেন সেগুলো হলো- নবনির্মিত ১০ তলা চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবন, আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, গাবতলী ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন, বগুড়া মোকামতলা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র, শিবগঞ্জ, বগুড়া, কুন্দরহাট হাইওয়ে পুলিশ আউটপোস্ট, নন্দীগ্রাম, শিবগঞ্জের আলিয়ারহাটে অবস্থিত বগুড়া এতিম ও প্রতিবন্ধী ছেলেমেয়েদের কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, বগুড়া কাহালু, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন এর নির্মাণ কাজ; নন্দীগ্রাম ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন এর নির্মাণ কাজ, দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য হোস্টেল নির্মাণ কাজ, শেরপুর রানীরহাট জিসি ভায়া পেঁচুলহাট কচুয়াবাড়ী রাস্তা উন্নয়ন, কাহালু ও নন্দীগ্রাম উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ, ডুমকান্দি বেতেরকান্দি রাস্তায় মুখসহ খালের উপর ৬০মিটার আরসিসি গার্ডার ব্রিজ নির্মাণ, সারিয়াকান্দি উপজেলাধীন কর্নিবাড়ী-কুতুবপুর-রহদহ-কামালপুর এলাকায় যমুনা নদীর ডানতীরে বিআরই বিকল্প বাঁধ নির্মাণ কাজ; অন্তরপাড়া, দড়িপাড়া এবং পার্শ্ববর্তী এলাকায় যমুনা নদীর ডান তীরে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ সংরক্ষণ কাজ, স্কিল্স ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট, শেরপুর, বগুড়া স্কিলস ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট, ভোকেশনাল টিচার্স ট্রেনিং ইন্সটিটিউট, বগুড়া সদর; মোকামতলা (বগুড়া-রংপুর জাতীয় মহাসড়ক)-সোনাতলা-হরিখালী-হাটশেরপুর-সারিয়াকান্দি সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প, লিচুতলা-কদমতলী এবং নাংলু বালিয়াদীঘি সংযোগ সড়কসহ ধুনট-নাংলু-বাগবাড়ী-কদমতলী-গাবতলী-চৌকিরহাট সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প, সারিয়াকান্দি উপজেলা মত্স্যভবন কাম ট্রেনিং সেন্টার, উপজেলা কৃষি অফিসারের কার্যালয় ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প, বগুড়া হাউজিং এস্টেটে আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্প; সারিয়াকান্দিতে নির্মিতব্য ৩৩/১১ কেভি ৫টি মোট ৫০ এমপিএ বৈদ্যুতিক উপকেন্দ্র ও সংশ্লিষ্ট উপকেন্দ্রের ৩৩ কেভি সোর্স লাইনের প্রকল্প উদ্বোধন করবেন।
 
অন্যদিকে কাহালু ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন, নন্দীগ্রাম ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন, দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য হোস্টেল নির্মাণ, ফুলবাড়ী -কুতুবপুর -কুতুবপুর জিসি রাস্তায় বাঙালি নদীর উপর ৩১৫ মি: আরসিসি গার্ডার ব্রিজ, সারিয়াকান্দি, গোসাইবাড়ী -সোনাহাটা জিসি রাস্তায় ইছামতি নদীর উপর ৭৫ মি: আরসিসি গার্ডার ব্রীজ, পন্ডিতপুকুর -কালিগঞ্জ জিসি ভায়া মারিয়া- মনিনাগ রাস্তা উন্নয়ন, সারিয়াকািন্দ ও সোনাতলা উপজেলার ৩৩ কি: মি: রাস্তা (২০টি রাস্তা) উন্নয়ন (বিশেষ প্রকল্প), আরডিএ খামার এন্ড ল্যাবঃ প্রকল্পের আওতায় আরডিএ ল্যাবঃ স্কুল এন্ড কলেজের ১০তলা একাডেমিক ভবন নির্মাণ, সারিয়াকান্দি উপজেলাধীন কর্নিবাড়ী হতে চন্দনবাইশা পর্যন্ত যমুনা নদীর ডানতীর সংরক্ষণ কাজসহ বিকল্প বাঁধ নির্মাণ, অন্তরপাড়া, দড়িপাড়া এবং পার্শ্ববর্তী এলাকায় যমুনা নদীর ডান তীর সংরক্ষণ কাজসহ বিকল্প বাঁধ নির্মাণ, অন্তরপাড়া, দড়িপাড়া এবং পার্শ্ববর্তী এলাকায় যমুনা নদীর ডান তীর সংরক্ষণ কাজসহ বিকল্প বাঁধ নির্মাণ অন্তরপাড়া, দড়িপাড়া এবং পার্শ্ববর্তী এলাকায় যমুনা নদীর ডান তীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ সংরক্ষণ, সারিয়াকান্দি উপজেলাধীন কুর্নিবাড়ী-কুতুবপুর-রহদহ-কামালপুর এলাকায় যমুনা নদীর ডান তীরে বিআরই বিকল্প বাঁধ নির্মাণ কাজ, মোকামতলা (বগুড়া-রংপুর জাতীয় মহাসড়ক)-সোনাতলা-হরিখালী-হাটশেরপুর-সারিয়াকান্দি সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প, সরকারি আজিজুল হক কলেজের স্যানিটারি, পানি সরবরাহ ও বৈদ্যুতিকসহ ৫তলা ভিত বিশিষ্ট ৪ তলা ১০০ শয্যার ছাত্রী হোস্টেল ভবন নির্মাণ, সরকারি আজিজুল হক কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক শাখায় পানি সরবরাহ ও বৈদ্যুতিকরণ সহ ৫ তলা ভিত বিশিষ্ট ২ তলা একাডেমিক ভবন নির্মাণ, তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় শিক্ষার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে নির্বাচিত বে-সরকারি কলেজ সমূহের উন্নয়ন, হাবিবপুর স্কুল এন্ড কলেজ, শিবগঞ্জ, তথ্য প্রযুক্তির শিক্ষায় মানোন্নয়নের লক্ষ্যে বগুড়া মহিলা কলেজ এর একাডেমিক ভবন নির্মানের উদ্বোধন করবেন।
 
বগুড়া-১ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল মান্নান জানান, উল্লিখিত স্থাপনাসহ প্রতিষ্ঠানগুলোর উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী জনসভা থেকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা দিবেন, যাতে বগুড়াবাসীর দীর্ঘদিনের আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটবে।
এদিকে বগুড়া-৫ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব হাবিবর রহমান বলেন, দীর্ঘদিন আবহেলিত থাকা বগুড়ার অনেক উন্নয়ন ঘোষণা আসবে প্রধানমন্ত্রীর এ সফরে। চলতি দুই মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হবার পর এটিই তার প্রথম সফর। আর তাই এই সফর অনেক গুরুত্ব বহন করবে।
এদিকে বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক মজিবর রহমান মজনু জানান, প্রধানমন্ত্রীর বগুড়া আগমন উপলক্ষে জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সকল প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। দীর্ঘদিন পর দলীয় নেত্রীকে কাছে পেতে দলীয় নেতাকর্মী উদগ্রীব হয়ে আছে। এছাড়া প্রধান মন্ত্রীর সফরকে ঘিরে দলের সাংগঠনিক তত্পরতা নিবিড় ভাবে তদারকি করছেন দলের কেন্দ্রিয় সাংগঠনিক সম্পাদক ( রাজশাহী ) আবু সাঈদ মাহমুদ আল স্বপন বলেও জানা গেছে ।
 
জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর জনসভাকে স্মরণীয় করে রাখতে প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যেই জনসভা বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করা হয়েছে। জেলা কমিটির পাশাপাশি তৃণমূল পর্যায়েও জনসভা বাস্তবায়ন কমিটি-উপকমিটি গঠন করা হয়েছে।
 
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, জনসভায় লক্ষাধিক লোকের সমাগম হবে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে । 
 
জনসভা বাস্তবায়ন উপ-কমিটি সূত্রে জানা গেছে, জনসভার জন্য একশো মাইক ভাড়া করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে বগুড়া জেলার পূর্বপ্রান্তে সীমান্ত এলাকা চান্দাইকোনা হতে রহবল পর্যন্ত মহাসড়কে দুই শতাধিক তোরণ নির্মাণ করা হচ্ছে। এছাড়া ফেস্টুন ও ব্যানার দিয়ে মহাসড়কের দুই পাশ সাজানো হচ্ছে। ইতোমধ্যেই দলীয় নেতারা নিজ নিজ উদ্যোগে ব্যানার ও ফেস্টুন টানাতে শুরু করেছেন। ইতোমধ্যেই শহরের জিরোপয়েন্ট সাতমাথা রঙ বেরঙ এর ব্যানার-ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে। শহরের বিলবোর্ডগুলো দখল করে নিয়েছে নানা রংগের ব্যানার। পুরো শহর এখন প্রধানমন্ত্রীকে জানানো শুভেচ্ছা  ব্যানার, ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে।
 
আ’লীগের একটি বিশ্বস্ত সূত্রে জানাগেছে, আলতাফুন্নেছা খেলার মাঠে লোক সংকুলান না হলে মাঠের বাইরে কমপক্ষে ৫টি এলইডি টিভির মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রচার করা হবে।
 
উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একদিনের এক সরকারি সফরে ১২ নভেম্বর বগুড়া আসছেন। তিনি ঐদিন সকাল ১০টায়  হেলিকপ্টার যোগে বগুড়া সেনানিবাসে পৌঁছবেন এবং সেনাবাহিনি আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ১২ ল্যান্সারকে ন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড (জাতীয় পতাকা) প্রদান করবেন । এরপর বেলা আড়াইটায় তিনি স্থানীয় আলতাফুন্নেছা খেলার মাঠে জেলা আওয়ামীলীগ আয়োজিত জনসভায় বক্তব্য রাখবেন। জনসভা শেষে বিকেল সোয়া ৪টায় তিনি ঢাকার উদ্দেশ্যে বগুড়া ত্যাগ করবেন।
ট্যাগস

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top