মেসি-রোনালদো ছাপিয়ে আলোচনায় নিরাপত্তা

S M Ashraful Azom
লিওনেল মেসির প্রত্যাবর্তনের ম্যাচ। কিংবা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর ফর্মে ফেরার ম্যাচ হতে পারতো এটা। কিন্তু সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে আজ রাতে রিয়াল মাদ্রিদ-বার্সেলোনার মহারণে ফুটবলীয় সবকিছু ছাপিয়ে বড় হয়ে দেখা দিচ্ছে নিরাপত্তার বিষয়টি। তবে তাতে ফিকে হচ্ছে না ক্রীড়া বিশ্বের সবচেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এই দ্বৈরথের আবেদন। বরং খেলার বাইরের সবকিছু মাঠের বাইরে রেখে দুর্দান্ত এক লড়াই উপহার দিতে বদ্ধপরিকর দু’দলের খেলোয়াড়রা।
সন্ত্রাসী হামলার ভয়ে পিছিয়ে না এসে এর বিরুদ্ধে একরকম যুদ্ধই ঘোষণা করেছে স্পেন। ফুটবল প্রেমীদের জন্য ‘বুলেটপ্রুফ বার্নাব্যু’ বানানোর ঘোষণা দিয়েছে তারা। স্পেনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জর্জ ফার্নান্দেজ ডিয়াজ সবাইকে আশ্বস্ত করতে এক অদ্ভুত বিবৃতি দিয়েছেন। বলেছেন, ‘আমার ছেলে ক্লাসিকোতে যাচ্ছে। এর পর আর বলার কিছু নেই।’
ফার্নান্দেজকে এই বিবৃতির পরপরই রিয়ালও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে নিরাপদ এক ফুটবল দ্বৈরথ উপভোগের। তারা জানিয়েছে, ‘পৃথিবীতে এই মুহূর্তে বার্নাব্যুর চেয়ে নিরাপদ আর কোন জায়গা নেই!’
এই ম্যাচকে ঘিরে বার্নাব্যুতে নেয়া হয়েছে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। কর্মরত থাকবেন প্রায় আড়াই হাজার পুলিশ এবং আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তা।
প্যারিসে গত সপ্তাহে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর থেকেই সমস্যার শুরু। একই সঙ্গে ফ্রান্সের রাজধানী শহরে ছয়টি হামলায় প্রাণ হারান কমপক্ষে ১২৯ জন, আহত হন প্রায় সাড়ে তিনশ’ মানুষ। এর একটি ছিল স্তাদে দি ফ্রান্সের বাইরে, যেখানে স্বাগতিক ফ্রান্স লড়ছিল জার্মানির বিরুদ্ধে।
এরপরই নিরাপত্তা ঝুঁকিতে বেলজিয়ামের বিরুদ্ধে স্পেনের ম্যাচটি স্থগিত হয়ে যায়। গত মঙ্গলবার একই কারণে বাতিল হয় জার্মানি-নেদারল্যান্ডস ম্যাচটি।
শেষ পর্যন্ত যার আঁচ লেগেছে ফুটবলের সবচেয়ে আকর্ষণীয় একই সাথে কঠিন ম্যাচ এল ক্লাসিকোতেও।
কোথায় ফুটবল নিয়ে ব্যস্ত থাকবেন, তা না করে বারবারই গণমাধ্যমের কাছ থেকে শুনতে হচ্ছে নিরাপত্তা বিষয়ক প্রশ্ন। তবে সব কিছু পেছনে ঠেলে মাঠের লড়াইয়ে মনোযোগ ধরে রাখতে বদ্ধপরিকর আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা। অধিনায়ক এবং কাতালারদের মাঝমাঠের নিয়ন্ত্রক ইনিয়েস্তা বলেন, ‘এটা লজ্জার যে, মানুষ খেলা, ফুটবল কিংবা এই দ্বৈরথ নিয়ে না ভেবে কথা বলছে অন্য কিছু নিয়ে। কিন্তু বাস্তবতা আপনাকে মেনে নিতেই হবে। এটা এড়িয়ে যাবার উপায় নেই। তবে একই সঙ্গে এটাও সত্যি যে, আপনাকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতেই হবে।’
নিরাপত্তা ঝুঁকি যদি এই ম্যাচের নেতিবাচক দিক হয় তাহলে অভাব নেই ইতিবাচক দিকেরও। সবচেয়ে বড় আকর্ষণ মেসি। দুই মাসের চোট বিরতি কাটিয়ে মৌসুমের প্রথম এল ক্লাসিকো দিয়েই আবারো মাঠে ফিরছেন মেসি। যদিও বার্সা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এখনও নিশ্চিত নন এই তালিসমান। যদি শেষ পর্যন্ত আর্জেন্টিনা অধিনায়ক মাঠে নামতে পারেন তাহলে বার্সেলোনাকে ঠেকানো কঠিন হয়ে যাবে বলে হুঁশিয়ারি দিলেন ইনিয়েস্তা, ‘লিও যদি বেঞ্চ থেকে নামে অথবা শুরুর একাদশে থাকে তাহলে আমাদের সুযোগ অনেক বেড়ে যাবে সন্দেহ নেই।’
মেসি না থাকলেও নিশ্চিতভাবেই থাকছেন নেইমার, লুইস সুয়ারেজ। দু’জনই বিশেষ করে নেইমার আছেন দুর্দান্ত ফর্মে। লা লিগায় এই মুহূর্তে সর্বোচ্চ গোলদাতাও তিনি।
বার্সেলোনা যদি অপেক্ষায় থাকে মেসির তাহলে রিয়ালের অপেক্ষা ‘আসল’ রোনালদোর দেখা পাবার। লিগের একাদশ রাউন্ড শেষে রোনালদোর গোলসংখ্যা আট। যা কিনা লিগের এই পর্যায়ে ২০০৯ সালের পর তার জন্য সর্বনিম্ন। গত মৌসুমে এই অবস্থায় তার গোল ছিল ১৯টি! উল্লেখ্য, রোনালদোর এই আট গোলের পাঁচটিই এসেছে এক ম্যাচে। অর্থাত্ চলতি মৌসুমে সাত ম্যাচে গোল পাননি এই পর্তুগীজ।
রিয়ালের জন্য ম্যাচটি পয়েন্ট টেবিলে বার্সাকে ছোঁয়ার সুযোগও। শীর্ষে থাকা সফরকারীদের চেয়ে তিন পয়েন্ট কম নিয়ে রিয়াল আছে দ্বিতীয় স্থানে।

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top