রাজধানীসহ সারা দেশে নিবন্ধনহীন যেসব মোটরসাইকেল আছে সেগুলো আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নিবন্ধন করতে হবে। সম্প্রতি নিবন্ধনহীন মোটরসাইকেল ব্যবহার করে অপরাধ সংঘটনের হার বেড়ে গেছে। তা ঠেকাতেই এমন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। তা ছাড়া সড়ক দুর্ঘটনা রোধ ও সড়কে গাড়ির সঠিক পরিসংখ্যান সংরক্ষণের জন্যও মোটরসাইকেল নিবন্ধনের আওতায় আনা হচ্ছে।
অন্যান্য যানবাহনের মতো মোটরসাইকেলেও ডিজিটাল নম্বর প্লেট সংযোজন করতে হবে ডিসেম্বরের মধ্যে। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সূত্র এই তথ্য জানিয়েছে।
সম্প্রতি রাজধানীর কূটনৈতিক পাড়ায় ইতালির নাগরিক তাবেলা সিজার ও রংপুরে জাপানের নাগরিক কুনিও হোশিসহ বিভিন্ন হত্যাকাণ্ডের পর দেখা গেছে, এসব ঘটনায় হত্যাকারীরা মোটরসাইকেল ব্যবহার করেছে। পুলিশ ও বিআরটিএ সূত্রও বলছে, নম্বরহীন মোটরসাইকেল বা ভুয়া নম্বরের মোটরসাইকেল ব্যবহার করে অপরাধ কর্মকাণ্ড ঘটানো হচ্ছে। এসব মোটরসাইকেলে ডিজিটাল নম্বর প্লেটও নেই। এ কারণে রাজধানীতে এসব গাড়ির চলাচলের পথ শনাক্ত করা যাচ্ছে না।
সূত্র জানায়, ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে অনিবন্ধিত মোটরসাইকেলগুলোর নিবন্ধন নিশ্চিত করতে ফি ৪০ শতাংশ কমানোর প্রস্তাব করেছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। কয়েক দিন আগে এ প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ের সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এম এ এন ছিদ্দিক বলেন, এই প্রস্তাব অনুমোদন হলে আমরা পরবর্তী ব্যবস্থা নেব। আমরা ফি বর্তমান হারের চেয়ে ৪০ শতাংশ কমানোর প্রস্তাব করেছি।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ইফাদ অটোসের বাস উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও বলেছেন, ‘ডিসেম্বর পর্যন্ত নিবন্ধনের সময় দেওয়া হবে। এ জন্য ফি কমানোর চেষ্টা চলছে। এ নিয়ে আমি অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি।’
তাঁর মতে, মোটরসাইকেল হচ্ছে নতুন উপদ্রব। দেশের বিভিন্ন স্থানে এ ধরনের যানে চারজন যাত্রীও পরিবহন করা হচ্ছে।
জানা গেছে, ২০১৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে মোটরসাইকেলের নিবন্ধন ফি ৪০ শতাংশ বাড়ানো হয়। ওই হার অনুসারে, ৮০ সিসি মোটরসাইকেলের নিবন্ধন খরচ ১৩ হাজার ৯১৩ টাকা। ১০০ সিসির মোটরসাইকেল নিবন্ধনের খরচ ১৯ হাজার ৬৬৩ টাকা। ১০০ সিসির বেশি মোটরসাইকেলের নিবন্ধন খরচ পড়ে ২১ হাজার ২৭৩ টাকা। এর মধ্যে ডিজিটাল নম্বর প্লেটের ফিও রয়েছে।
জানা গেছে, ডিসেম্বরের মধ্যে অনিবন্ধিত মোটরসাইকেলের নিবন্ধন নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) এ-সংক্রান্ত ফি ৪০ শতাংশ কমানোর সুপারিশ করে একটি প্রস্তাব সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছিল। এরপর এ নিয়ে গত ৩০ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা হয়। ওই বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা জানিয়েছিলেন, বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে। তারপর প্রস্তাবটি যাচাই-বাছাই করে পাঠানো হয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ে।
রাজধানীতে চলাচলরত গাড়ির তথ্য সংরক্ষণের জন্য বিআরটিএ ২০১৩ সালের জুনে ১২টি স্থানে বেতার তরঙ্গ শনাক্তকরণ ডিভাইস (আরএফআইডি) স্টেশন স্থাপন করে। এসব স্টেশনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ কক্ষে বসেই গাড়ির ওপর নজরদারি করছে সংস্থাটি। গাড়ি নির্দিষ্ট এলাকা অতিক্রম করলেই তার তথ্য সংরক্ষিত হয়ে যাচ্ছে বিআরটিএর সার্ভারে। সংগ্রহ করা তথ্য থেকেই চুরি যাওয়া গাড়ির গতিপথ জানা সম্ভব হচ্ছে। কোনো গাড়ি ব্যবহার করে অপরাধী শনাক্ত করা বা অপরাধের তথ্য জানাও সহজ হচ্ছে। এই প্রযুক্তি কার্যকর করতে প্রতিটি গাড়িতে রেট্রো-রিফ্লেকটিং বা ডিজিটাল নম্বর প্লেট ও তাতে আরএফআইডি ট্যাগ লাগানো বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।