ওরা চলে গেল। চায়ের কাপটা টেবিলে রেখে খবরের কাগজটা হাতে নিয়ে ফয়সাল চোখ রাখে সম্পাদকীয় কলামে। সম্পাদকীয় কলামটা ফয়সালের প্রিয়। যদিও আগের মতো শব্দের ধার নেই , কথার ভার নেই কলামগুলোয় তবু পত্রিকাজুড়ে পড়ার ওই একটাই জায়গা। বাকি সবতো জানা কথা।
সয়সালের চোখ পত্রিকার পাতায়। শরীরে তিরতির ঘাম। চোয়াল শক্ত। চোখ লাল। কলাম পড়লে এমন ভাব হয় তা ফয়সালকে না দেখলে বুঝার কোন উপায় নেই। ফয়সালের বাবা অমিত সরকার এই নিয়ে প্রায়ই ছেলের সাথে একরাজ্য কাহিনী করেন কিন্তু ফয়সালের তাতে কিছু যায়-আসেনা। এতে অমিত সরকার আরও ক্ষেপে গিয়ে তাঁর স্ত্রীকে ডেকে অভিযোগ করেন, ‘‘তোমার ছেলে যদি অল্প বয়সে চোখ না খেয়েছে তখন আমাকে বলো! চুলে তো এখনই পাক ধরেছে, কয়েকদিন পরে মুখেও ভাজ পরবে। এই আমি বলে রাখলাম।” আজও একই কথা বলে গরগর করতে করতে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন অমিত সরকার।
ফয়সালের চোখ কলামের কালো অক্ষরগুলোতে। বাক্যে বিলিকেটে চলছে মাও-সে-তুং দীক্ষিত ভাবনা। এর মধ্যে একটু পরপর কাঁটার মতো মনে খোঁচা দিয়ে আবার হারিয়ে যাচ্ছে একটা বিষয়। বাহির থেকে বুঝার উপায় নেই যে, চোখ স্থির হলেও মন স্থির নেই ফয়সালের। বিষয়টা যতই দূরে রেখে ফয়সাল কলামটা শেষ করার চেষ্টা করছে বিষয়টা ততই বড় করে খোঁচা দিচ্ছে মনের ভিতর। কয়েকদিন থেকেই বিষটা এমন জ্বালাচ্ছে। কয়েকবার অবশ্য মনে মনে ভেবেছে বিষয়টা সুলতানাকে জানাবে। আবার কী ভেবে যেন আর বলা হয়নি অথবা সুলতানা শুনতে চায়নি এমন একটা কিছু। পত্রিকাটা রেখে ফয়সাল হরহর করে লুঙ্গীটা পাল্টিয়ে জিন্স আর নীল পাঞ্জাবীটা পড়ে নিল। পায়ে একজোড়া চপ্পল চাপিয়ে কাউকে কিছু না বলে বেরিয়ে পড়ল ঘর থকে।
বিভার ফোনটা হাতে ধরা। একবার হাতে তো একবার কানে। ওপারে রিং হচ্ছে। রিসিব করছে না ফয়সাল। ‘‘ধ্যাত:’’ বলেই একবার ফোনটা ছুড়ে ফেলতে গিয়েও কী যেন ভেবে আবার ছুড়ে মারল না। নিজেই নিজের উপর রাগ করলো বিভা। চার কদম সামনে যায় তো আবার ছয় কদম পিছনে আসে, ভ্রæ-কোঁচকিয়ে কিছূক্ষণ একদিকে তাকিয়ে থেকে বিরক্ত হয়ে লাল হয়ে ওঠে বিভা। ‘‘ফোন না ধরা এ কোন স্বভাব, কোন রঙের মানুষরে বাবা!’’ বলে তার সঙ্গে বাতাসে ছুঁড়ে দেয় ‘‘ধ্যাত:’’ শব্দটি। বিভা মাথা নিচু করে পায়চারি করে আর ভাবে, ‘‘ মানুষ এমন হয়! নাকি প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে পুরুষমাত্রই এমনই হয়ে যায়! এটা কি ফয়সালের গেইম নাকি আমাদের ভুল! কেন আমি সেদিন এতটা আকাশ হয়েছিলাম! সমুদ্দুর হয়ে মেলে দিয়েছিলাম সবদ্বার! ফয়সাল যদি একটা উপায় বের করতে না পারে তবে কী হবে!’’ বিভার চোখ গড়িয়ে পানি বের হয়ে আসে। একহাত দিয়ে চোখটা মুছে খোলা আকাশটার দিকে তাকায় বিভা। কতগুলো কাকা উড়ে যাচ্ছে একসাথে. . .
‘‘ এক্সকিউজ মি, এইখানে মেরি স্টোপস ক্লিনিকটা কোথায় বলতে পারবেন?’’ ফয়সাল একজন পথচারীকে জিজ্ঞেস করে।’’
‘‘১০৩/২৩এ. . .সোজা বামদিকে গিয়ে ডানে মোড় নিলেই একটা লাল দালান, তার পাশের দালানটার চার তলায়।’’ বলে লোকটা কাত হয়ে তাকিয়ে হাঁটা দেয়।
‘‘ থ্যাংক ইউ।’’ বলে ফয়সাল পকেট থেকে ফোনটা বের করে বিভাকে ফোন দিতে গিয়ে দেখে বিভার অনেকগুলো ফোন আর এসএমএস, ‘‘তোমার ফোন ধরার সময় কি হয়নি? আমি দাঁড়িয়ে আছি সেই থেকে। কি করবো কিছু বুঝতে পারছি না, শরীরের অবস্থা ভালো না ফয়সাল। আজকে তোমার মেরি স্টোপস’এ খোঁজ নেয়ার কথা ছিল। কোথায় তুমি?’’ পড়েই বিভাকে দ্রæত ফোন দেয় ফয়সাল-
‘‘ হ্যালো. . .সরি, আমি মোটেই বুঝতে পারিনি। হেঁটে হেঁটে খুঁজছিলাম তাই বাইব্রেশন বুঝা যায় নি।’’
‘‘ বুঝতে হবে না। তুমি কোথায় বলো।’’
‘‘শুনেছি কাজিপাড়ায় একটা সেন্টার আছে। এখানে এসছি। একটা ঠিকানা পেয়েছি। ওই দিকেই যাচ্ছি। তুমি ভেবো না। একটু পরেই আমি জানাচ্ছি।’’
‘‘ দ্রæত কর ফয়সাল। আমি আর ভাবতে পারছি না।’’
‘‘ আনিকার সাথে কথা বলবে বলেছিলে? কিছু জানে বলেছে? ’’
‘‘হ্যাঁ, যা যা বলেছে সব করেছি এখনও তো. . .হলো না। একমাস পেরিয়ে গেছে।’’ বলেই বিভা কাঁদতে লাগলো। এপাশ থেকে ফয়সাল শুনতে পেলো। শান্তনা ও সাহস দেয়ার চেষ্টা করে বলল, ‘‘ কিছু ক্ষণের মধ্যেই আমি আসছি। আর একটু থাকো ময়না।’’
একটা অশনি বুকের ভিতর। বুকটা ধুকধুক করলেও ফয়সাল জানে ওইদিন এমন কিছু হয়নি যাতে তিনদিন ভরা পেটে তিনটা গায়াকোনোলজি’ খাওয়ার পরও নিয়মটা স্বাভাবিক হবে না। ফয়সালের স্পষ্ট মনে আছে, সবটাই বাইরে পড়েছিল। ‘‘ ভয় পাওয়া থেকে, দুশ্চিনা থেকে, অতিরিক্ত দুর্ভাবনা থেকে অনেক সময় এমন হয়। এমন কি দুই মাসও লেইট হতে পারে।’’ বলার পরও বিভার ভেঙ্গেপড়া , হাবিজাবি চিন্তা পা’টা যেন আর চলতে চায় না। তবওু ঠিকানাটা বের করতে হবে। ফয়সাল পা বাড়ায়।
আজ শনিবার। দশটা বাজার আগেই বিভা আর ফয়সাল চলে এসেছে ১০৩/২৩এ, কাজিপাড়া, মেরি স্টোপস’এ। ডাক্টার আসবে কিছুক্ষণ পর। বিভার হাতে ব্যাগ। ফয়সালের হাতে কিছু কাগজ। বিভা এদিক ওদিক চোখ ফিরায়। তার বয়সি কেউ নেই এখানে। একপাশে দুজন মহিলা। অন্যপাশে কাউন্টারে কয়েকজন লোক। নিজেকে অকারণেই ছোট মনে হয় বিভার কাছে। নিজেকে চোর চোর মনে হয়। মনে হয় এই যেন চেনা কেউ এস পড়ছে। এই যেন কেউ এসে তাকে প্রশ্ন করছে, ‘‘ তোমার কী হয়েছে?’’ ফয়সাল বিভার কাছ থেকে উঠে, কাউন্টারে জানতে চায় –
‘‘ ভাই, ডাক্টার শারমিন কয়টায় আসবে?’’
‘‘ আসার সময় হইছে। এই তো আইসা পরবো। বসেন। আপনার সিরিয়াল নম্বর কত?’’
‘‘দুই।’’
ফয়সাল বিভার আঙ্গুলটা ধরে বসতে চায়। বিভা হাতটা সরিয়ে নেয়। ফয়সাল বিভার মুখের দিকে তাকায়। অন্য দিনের মতো বিভাকে আজ গোলাপি আভার লাগে না। বিভার গায়েল রঙটা কেমন যেন মাছের গায়ে অতিরিক্ত পানি দেয়া রঙের মতো। ‘রক্তশূন্যতা’ রোগীর মতো একটা রঙ ধরে আছে সারা মুখটায়! ফয়সালও টের পায় তারও বাম বুকটার নিচে কিত্তনের আসরে ঢোল পিটানোর মতো একটা ঢুমঢুম উঠানামা। একটা ঢকঢক শব্দ। ফয়সাল চোখটা ফিরিয়ে নেয় বিভার দিক থেকে। তারা দুজনেই চুপ করে বসে থাকে অনেকক্ষণ।
‘‘ বিভা কে, বিভা. . .?’’
‘‘ আমি।’’
‘‘ ব্যাগ, মোবাইল রেখে ৩৫নম্বর রুমে যান।’’ কাউন্টার থেকে স্বর আসে।
বিভার চোখে পানি টলটল করছে। ব্যাগটা ফয়সালের হাতে দিয়ে তার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে। ফয়সালও তাকিয়ে থাকে বিভার দিকে- ‘‘ ভয় পেয়ো না, কিচ্ছু হবে না, দেখো’’ বলে ফয়সাল বিভার হাতটা ধরে এগিয়ে দেয় ডাক্টারের দরজা পর্যন্ত। বিভা ভিতরে ঢুকে। শাদা অ্যাপ্রোণপড়া একজন মধ্যবয়সি মহিলা ভিতর থেকে দরজাটা বন্ধ করে দেয়।
পিছনে এসে ফয়সাল চেয়ারে বসে। তার মাথার ভিতরে বিক্ষিপ্ত হাজারো ভাবন. . .
সয়সালের চোখ পত্রিকার পাতায়। শরীরে তিরতির ঘাম। চোয়াল শক্ত। চোখ লাল। কলাম পড়লে এমন ভাব হয় তা ফয়সালকে না দেখলে বুঝার কোন উপায় নেই। ফয়সালের বাবা অমিত সরকার এই নিয়ে প্রায়ই ছেলের সাথে একরাজ্য কাহিনী করেন কিন্তু ফয়সালের তাতে কিছু যায়-আসেনা। এতে অমিত সরকার আরও ক্ষেপে গিয়ে তাঁর স্ত্রীকে ডেকে অভিযোগ করেন, ‘‘তোমার ছেলে যদি অল্প বয়সে চোখ না খেয়েছে তখন আমাকে বলো! চুলে তো এখনই পাক ধরেছে, কয়েকদিন পরে মুখেও ভাজ পরবে। এই আমি বলে রাখলাম।” আজও একই কথা বলে গরগর করতে করতে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন অমিত সরকার।
ফয়সালের চোখ কলামের কালো অক্ষরগুলোতে। বাক্যে বিলিকেটে চলছে মাও-সে-তুং দীক্ষিত ভাবনা। এর মধ্যে একটু পরপর কাঁটার মতো মনে খোঁচা দিয়ে আবার হারিয়ে যাচ্ছে একটা বিষয়। বাহির থেকে বুঝার উপায় নেই যে, চোখ স্থির হলেও মন স্থির নেই ফয়সালের। বিষয়টা যতই দূরে রেখে ফয়সাল কলামটা শেষ করার চেষ্টা করছে বিষয়টা ততই বড় করে খোঁচা দিচ্ছে মনের ভিতর। কয়েকদিন থেকেই বিষটা এমন জ্বালাচ্ছে। কয়েকবার অবশ্য মনে মনে ভেবেছে বিষয়টা সুলতানাকে জানাবে। আবার কী ভেবে যেন আর বলা হয়নি অথবা সুলতানা শুনতে চায়নি এমন একটা কিছু। পত্রিকাটা রেখে ফয়সাল হরহর করে লুঙ্গীটা পাল্টিয়ে জিন্স আর নীল পাঞ্জাবীটা পড়ে নিল। পায়ে একজোড়া চপ্পল চাপিয়ে কাউকে কিছু না বলে বেরিয়ে পড়ল ঘর থকে।
বিভার ফোনটা হাতে ধরা। একবার হাতে তো একবার কানে। ওপারে রিং হচ্ছে। রিসিব করছে না ফয়সাল। ‘‘ধ্যাত:’’ বলেই একবার ফোনটা ছুড়ে ফেলতে গিয়েও কী যেন ভেবে আবার ছুড়ে মারল না। নিজেই নিজের উপর রাগ করলো বিভা। চার কদম সামনে যায় তো আবার ছয় কদম পিছনে আসে, ভ্রæ-কোঁচকিয়ে কিছূক্ষণ একদিকে তাকিয়ে থেকে বিরক্ত হয়ে লাল হয়ে ওঠে বিভা। ‘‘ফোন না ধরা এ কোন স্বভাব, কোন রঙের মানুষরে বাবা!’’ বলে তার সঙ্গে বাতাসে ছুঁড়ে দেয় ‘‘ধ্যাত:’’ শব্দটি। বিভা মাথা নিচু করে পায়চারি করে আর ভাবে, ‘‘ মানুষ এমন হয়! নাকি প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে পুরুষমাত্রই এমনই হয়ে যায়! এটা কি ফয়সালের গেইম নাকি আমাদের ভুল! কেন আমি সেদিন এতটা আকাশ হয়েছিলাম! সমুদ্দুর হয়ে মেলে দিয়েছিলাম সবদ্বার! ফয়সাল যদি একটা উপায় বের করতে না পারে তবে কী হবে!’’ বিভার চোখ গড়িয়ে পানি বের হয়ে আসে। একহাত দিয়ে চোখটা মুছে খোলা আকাশটার দিকে তাকায় বিভা। কতগুলো কাকা উড়ে যাচ্ছে একসাথে. . .
‘‘ এক্সকিউজ মি, এইখানে মেরি স্টোপস ক্লিনিকটা কোথায় বলতে পারবেন?’’ ফয়সাল একজন পথচারীকে জিজ্ঞেস করে।’’
‘‘১০৩/২৩এ. . .সোজা বামদিকে গিয়ে ডানে মোড় নিলেই একটা লাল দালান, তার পাশের দালানটার চার তলায়।’’ বলে লোকটা কাত হয়ে তাকিয়ে হাঁটা দেয়।
‘‘ থ্যাংক ইউ।’’ বলে ফয়সাল পকেট থেকে ফোনটা বের করে বিভাকে ফোন দিতে গিয়ে দেখে বিভার অনেকগুলো ফোন আর এসএমএস, ‘‘তোমার ফোন ধরার সময় কি হয়নি? আমি দাঁড়িয়ে আছি সেই থেকে। কি করবো কিছু বুঝতে পারছি না, শরীরের অবস্থা ভালো না ফয়সাল। আজকে তোমার মেরি স্টোপস’এ খোঁজ নেয়ার কথা ছিল। কোথায় তুমি?’’ পড়েই বিভাকে দ্রæত ফোন দেয় ফয়সাল-
‘‘ হ্যালো. . .সরি, আমি মোটেই বুঝতে পারিনি। হেঁটে হেঁটে খুঁজছিলাম তাই বাইব্রেশন বুঝা যায় নি।’’
‘‘ বুঝতে হবে না। তুমি কোথায় বলো।’’
‘‘শুনেছি কাজিপাড়ায় একটা সেন্টার আছে। এখানে এসছি। একটা ঠিকানা পেয়েছি। ওই দিকেই যাচ্ছি। তুমি ভেবো না। একটু পরেই আমি জানাচ্ছি।’’
‘‘ দ্রæত কর ফয়সাল। আমি আর ভাবতে পারছি না।’’
‘‘ আনিকার সাথে কথা বলবে বলেছিলে? কিছু জানে বলেছে? ’’
‘‘হ্যাঁ, যা যা বলেছে সব করেছি এখনও তো. . .হলো না। একমাস পেরিয়ে গেছে।’’ বলেই বিভা কাঁদতে লাগলো। এপাশ থেকে ফয়সাল শুনতে পেলো। শান্তনা ও সাহস দেয়ার চেষ্টা করে বলল, ‘‘ কিছু ক্ষণের মধ্যেই আমি আসছি। আর একটু থাকো ময়না।’’
একটা অশনি বুকের ভিতর। বুকটা ধুকধুক করলেও ফয়সাল জানে ওইদিন এমন কিছু হয়নি যাতে তিনদিন ভরা পেটে তিনটা গায়াকোনোলজি’ খাওয়ার পরও নিয়মটা স্বাভাবিক হবে না। ফয়সালের স্পষ্ট মনে আছে, সবটাই বাইরে পড়েছিল। ‘‘ ভয় পাওয়া থেকে, দুশ্চিনা থেকে, অতিরিক্ত দুর্ভাবনা থেকে অনেক সময় এমন হয়। এমন কি দুই মাসও লেইট হতে পারে।’’ বলার পরও বিভার ভেঙ্গেপড়া , হাবিজাবি চিন্তা পা’টা যেন আর চলতে চায় না। তবওু ঠিকানাটা বের করতে হবে। ফয়সাল পা বাড়ায়।
আজ শনিবার। দশটা বাজার আগেই বিভা আর ফয়সাল চলে এসেছে ১০৩/২৩এ, কাজিপাড়া, মেরি স্টোপস’এ। ডাক্টার আসবে কিছুক্ষণ পর। বিভার হাতে ব্যাগ। ফয়সালের হাতে কিছু কাগজ। বিভা এদিক ওদিক চোখ ফিরায়। তার বয়সি কেউ নেই এখানে। একপাশে দুজন মহিলা। অন্যপাশে কাউন্টারে কয়েকজন লোক। নিজেকে অকারণেই ছোট মনে হয় বিভার কাছে। নিজেকে চোর চোর মনে হয়। মনে হয় এই যেন চেনা কেউ এস পড়ছে। এই যেন কেউ এসে তাকে প্রশ্ন করছে, ‘‘ তোমার কী হয়েছে?’’ ফয়সাল বিভার কাছ থেকে উঠে, কাউন্টারে জানতে চায় –
‘‘ ভাই, ডাক্টার শারমিন কয়টায় আসবে?’’
‘‘ আসার সময় হইছে। এই তো আইসা পরবো। বসেন। আপনার সিরিয়াল নম্বর কত?’’
‘‘দুই।’’
ফয়সাল বিভার আঙ্গুলটা ধরে বসতে চায়। বিভা হাতটা সরিয়ে নেয়। ফয়সাল বিভার মুখের দিকে তাকায়। অন্য দিনের মতো বিভাকে আজ গোলাপি আভার লাগে না। বিভার গায়েল রঙটা কেমন যেন মাছের গায়ে অতিরিক্ত পানি দেয়া রঙের মতো। ‘রক্তশূন্যতা’ রোগীর মতো একটা রঙ ধরে আছে সারা মুখটায়! ফয়সালও টের পায় তারও বাম বুকটার নিচে কিত্তনের আসরে ঢোল পিটানোর মতো একটা ঢুমঢুম উঠানামা। একটা ঢকঢক শব্দ। ফয়সাল চোখটা ফিরিয়ে নেয় বিভার দিক থেকে। তারা দুজনেই চুপ করে বসে থাকে অনেকক্ষণ।
‘‘ বিভা কে, বিভা. . .?’’
‘‘ আমি।’’
‘‘ ব্যাগ, মোবাইল রেখে ৩৫নম্বর রুমে যান।’’ কাউন্টার থেকে স্বর আসে।
বিভার চোখে পানি টলটল করছে। ব্যাগটা ফয়সালের হাতে দিয়ে তার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে। ফয়সালও তাকিয়ে থাকে বিভার দিকে- ‘‘ ভয় পেয়ো না, কিচ্ছু হবে না, দেখো’’ বলে ফয়সাল বিভার হাতটা ধরে এগিয়ে দেয় ডাক্টারের দরজা পর্যন্ত। বিভা ভিতরে ঢুকে। শাদা অ্যাপ্রোণপড়া একজন মধ্যবয়সি মহিলা ভিতর থেকে দরজাটা বন্ধ করে দেয়।
পিছনে এসে ফয়সাল চেয়ারে বসে। তার মাথার ভিতরে বিক্ষিপ্ত হাজারো ভাবন. . .
( পাঁচ বছর পর সয়সালের সাথেই বিভার বিয়ে হয় পারিবারিক ভাবে। সংসার চলে অন্য আটদশ সংসারের মতই। বিয়ের এক বছর পর থেকে বিভা-সয়সাল চেষ্টা করতে থাকে সন্তান নেয়ার। দুই বছর অতিক্রম হলেও বিভা সন্তান ধারন করতে না পারলে তারা স্মরানাপন্ন হয় এক হসপিটালের গাইনী বিভাগে। গাইনী ডাক্টার বিভার নানান পরিক্ষা-নিরীক্ষা করে অত:পর এক ভয়ানক সিদ্ধান্ত দেন যে, কোন এক সময় অতিরিক্ত ‘গায়ানোকোলজি’ সেবনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় বিভা আর কোনদিন মা হতে পারবেন না! )
ফয়সাল জানালার পাশে দাঁড়িয়ে। এখান থেকে আকাশ দেখা যায়। আজ আকাশের রঙ গাঢ় নীল।
ফয়সাল জানালার পাশে দাঁড়িয়ে। এখান থেকে আকাশ দেখা যায়। আজ আকাশের রঙ গাঢ় নীল।
জোবায়ের মিলন
পূর্ব বকস নগর, সারুলিয়া, ডেমরা, ঢাকা.
পূর্ব বকস নগর, সারুলিয়া, ডেমরা, ঢাকা.