ঐতিহাসিক রণাঙ্গন ধানুয়া কামালপুর মুক্ত দিবস কাল

G M Fatiul Hafiz Babu
0
জিএম ফাতিউল হাফিজ বাবু ঃ
কাল ৪ ডিসেম্বর ঐতিহাসিক মহান মুক্তিযুদ্ধের ১১ নম্বর সেক্টর ধানুয়া কামালপুর মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালে আজকের দিনে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধের মুখে হানাদার বাহিনীর শক্তিশালী ঘাঁটি কামালপুর দুর্গের পতন হয়। তাই দিনটিকে স্বরণ করে প্রতি বছরই স'ানীয় মুক্তিযোদ্ধারা দিবসটি পালন করে আসছে। ভারতের মেঘালয় রাজ্যের তুরা জেলার মহেন্দ্রগঞ্জ ও জামালপুর জেলার পাহাড় ঘেষা বকশীগঞ্জ উপজেলার ধানুয়া কামালপুরে হানাদার বাহিনী যুদ্ধের শুরু থেকেই শক্তিশালী ঘাঁটি গড়ে তুলেছিল। উত্তর রণাঙ্গনের ১১নং সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধাদের প্রধান লক্ষ্য ছিল যে কোন মূল্যে এই ঘাঁটি দখলের। এ যুদ্ধে কামালপুর রণাঙ্গনে হানাদার বাহিনীর সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের ৮ দফা সম্মুখ যুদ্ধ হয়। ৩১ জুলাই সম্মুখ যুদ্ধে পাক বাহিনীর গুলিতে ক্যাপ্টেন সালাউদ্দিন মমতাজ বীর উত্তম শাহাদাৎ বরন করেন। ক্যাপ্টেন সালাউদ্দিন মমতাজ শহীদ হওয়ার পর মুক্তিযোদ্ধারা সেক্টর কমান্ডার মেজর আবু তাহেরের (পরে কর্নেল) পরিকল্পনা অনুযায়ী ২৪ নভেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা হানাদার বাহিনীর ধানুয়া কামালপুর ঘাঁটি অবরোধ করেন। অবরোধের প্রথম দিনই কামালপুর মির্ধা পাড়া মোড়ে সম্মুখ যুদ্ধে মর্টার শেলের আঘাতে সেক্টর কমান্ডার মেজর আবু তাহের একটি পা হারান। পরে ভারপ্রাপ্ত সেক্টর কমান্ডারের দায়িত্ব নেন উইং কমান্ডার হামিদুল্লাহ খান বীরপ্রতীক। ১০ দিন প্রচন্ড যুদ্ধের পর ৪ ডিসেম্বর সকাল ৮ টায় সেক্টর কমান্ডারের নিদের্শক্রমে বশির আহমেদ (বীরপ্রতীক) নিজের জীবন বাজি রেখে পাক ক্যাম্পে সারেন্ডার পত্র নিয়ে যাওয়ার পর সন্ধ্যা ৭টায় ৩১ বালুচ রেজিমেন্টের গ্যারিসন কমান্ডার আহসান মালিক সহ ১৬২ জন হানাদার বাহিনীর সদস্য মিত্র বাহিনীর নিকট আত্মসমর্পণ করে। শত্রু মুক্ত হয় ধানুয়া কামালপুর। ধানুয়া কামালপুর যুদ্ধে ক্যাপ্টেন সালাউদ্দিন মমতাজ (বীর উত্তম) , মুক্তিযোদ্ধা গাজী আহাদুজ্জামান, তসলিমসহ শহীদ হন ১৯৭ জন মুক্তিযোদ্ধা। গুলিবিদ্ধ হন ক্যাপ্টেন হাফিজ সহ অনেকেই।  অন্যদিকে একজন ক্যাপ্টেনসহ হানাদার বাহিনীর ২২০ জন সৈন্য মারা যায় এ যুদ্ধে। ধানুয়া কামালপুর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে ২৯ জনকে তাদের বীরত্বের জন্য বীর বিক্রম, বীরউত্তম ও বীরপ্রতীক খেতাব দেয়া হয়। শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্বরণে তৎকালীন বিডিআরের ( বর্তমানে বিজিবি) নিজস্ব অর্থায়নে ধানুয়া কামালপুর স্মৃতি সৌধ নির্মাণ করা হয়েছে।
গত বছর বীরমুক্তিযোদ্ধা বাবুল চিশতি নিজ উদ্যোগে ধানুয়া গ্রামে ৮ মুক্তিযোদ্ধার গণকবর সংরক্ষণ , শহীদ ক্যাপ্টেন সালাউদ্দিন মমতাজ বীর উত্তম স্মৃতি ক্লাব ঘরের ভবন নির্মাণ ও ১১ নম্বর সেক্টর কমান্ডার কর্নেল আবু তাহেরের স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করে দিয়েছেন। এছাড়াও বকশীগঞ্জ এনএম উচ্চ বিদ্যালয়ের পেছনে বধ্যভূমি সংরক্ষণ করেছেন তিনি।
দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে কাল ধানুয়া কামালপুর কো-অপারেটিভ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপসি'ত থাকবেন মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.ম মোজাম্মেল হক এমপি। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপসি'ত থাকবেন নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাহজাহান খান এমপি, ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান, বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম এমপি, স'ানীয় এমপি ও সাবেক তথ্যমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ ও সাবেক মন্ত্রী এমএ সাত্তার। বৃহত্তর ময়মনসিংহ এলাকার সকল মুক্তিযোদ্ধারা এখানে সমবেত হবেন। দিবসটি উপলক্ষে মুক্তিযোদ্ধাদের মিলন মেলায় পরিণত হবে।
ধানুয়া কামালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামালের সার্বিক ব্যবস'াপনায় ওই আলোচনা সভায় কেন্দ্রীয় মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অবঃ) হেলাল মোরশেদ খান বীর বিক্রম প্রধান আলোচক হিসেবে উপসি'ত থাকবেন। উক্ত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন কেন্দ্রীয় মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক মাহবুবুল হক বাবুল চিশতি। ৫ মন্ত্রী-এমপির আগমন উপলক্ষে বকশীগঞ্জ এখন সাজ সাজ রব বিরাজ করছে।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top