
তুরস্কের আকাশসীমায় রাশিয়ার যুদ্ধবিমান ধ্বংসের মধ্য দিয়ে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কে টানাপড়েন চলছে বেশ কয়েক দিন ধরে। যুদ্ধবিমান ধ্বংসের প্রতিশোধ হিসেবে তুরস্কের ওপর অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করেছে রাশিয়া। ইতোমধ্যে তুরস্ক থেকে পণ্য আমদানিও বন্ধ করে দিয়েছে রাশিয়া। এর প্রভাব পড়েছে রাশিয়ার অর্থনীতি থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের জীবনে। তবে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমি পুতিনের এই সিদ্ধান্তকে পূর্ণ সমর্থন দিয়েছে সাধারণ মানুষ। রাশিয়ার অর্থনীতির চাকা কিছুটা শ্লথ হয়ে গেলেও এর জন্য তারা পুতিনকে দুষছেন না।
যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার পরপর রাশিয়া তুরস্ককে ক্ষমা চাইতে বললেও তাতে অস্বীকৃতি জানান দেশটির প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোগান। প্রথম দিকে ক্ষমা চাওয়ার বদলে রাশিয়ার প্রতি পাল্টা অভিযোগ করতে শুরু করেন তিনি। একপর্যায়ে সুর নরম করে যুদ্ধবিমান ধ্বংসের কারণ ব্যাখ্যা করতে চেষ্টা করলেও মন গলেনি পুতিনের। রাশিয়ায় তুর্কি কোম্পানির কার্যক্রম পরিচালনা, তুর্কি শ্রমিকদের রাশিয়ায় কাজ করাও নিষিদ্ধ করেন পুতিন। এর ফলে রাশিয়ায় কর্মরত প্রায় এক লাখ তুর্কির চাকরি হুমকির মুখে পড়েছে। বন্ধ হয়ে গেছে দুই দেশের মধ্যে বিমান চলাচলও।
তুরস্ক থেকে আসা ফল, শাক-সবজি, মাংস এমনকি পনিরের কথা ভুলে যেতে হচ্ছে রাশিয়ানদের। তবে এর জন্য খুব একটা চিন্তিত নন সেখানকার মানুষ। গত বছর থেকেই রাশিয়ার অর্থনীতি নিম্নমুখী প্রবণতায়। রাশিয়ান মুদ্রা রুবলের মূল্যমান প্রায় অর্ধেকে এসে দাঁড়িয়েছে। পুতিনের সমালোচকরা এই বিষয়গুলোকে নিয়ে জলঘোলা করতে চাইলেও করতে পারছেন না। সমালোচকরা মনে করছেন, অর্থনৈতিক মন্দার আগুনের আঁচ লাগলেই হয়তো রাশিয়ানরা পুতিন বিরোধী আন্দোলনে যোগ দেবে। কিন্তু সমালোচকদের সেই আশাও আলোর মুখ দেখবে বলে মনে হচ্ছে না। কারণ এতো কিছুর পরও আগের মতোই রাশিয়ানদের মনজুড়ে রয়েছেন পুতিনই। রাশিয়ার স্বাধীন জরিপ প্রতিষ্ঠান লেভাডা সেন্টারের জরিপে দেখা গেছে সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহে রাশিয়ার জনপ্রিয়তা না কমে তা ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।
রাশিয়ার সাম্প্রতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে বলতে গিয়ে মস্কোভিত্তিক একটি রাজনৈতিক দলের সাথে যুক্ত এক নারী বলেন, জীবনমান নেমে গেলে সাধারণ মানুষ প্রতিবাদ জানাবে সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু রাশিয়াতে ঐ যুক্তি তেমন একটা কার্যকর হয়নি। মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ হয়তো তুরস্কের টমেটো কিনতে পারবে না, তাতে তো কোনো সমস্যা হবে না। কারণ বাজারে আরো অনেক টমেটো রয়েছে। লোকজন তাদের রেফ্রিজারেটর খুললে ঠিকই টমেটো দেখতে পাবেন। ফলে এই ধরনের বিষয় নিয়ে চিন্তা করাটা খুব একটা বুদ্ধিমানের কাজ নয় কারণ আজকের রাশিয়া খাদ্য উত্পাদনে সক্ষম।
রাশিয়ার এই অর্থনীতিক বিপর্যয়ের জন্য রাশিয়ার জনগণ পুতিনের বদলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞাকেই বড় কারণ মনে করেন। জনগণ মনে করে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের কারণে তাদের দেশ অর্থনৈতিকভাবে, রাজনৈতিকভাবে এবং সামরিকভাবে হুমকির মুখে রয়েছে। সরকার নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যমগুলোতেও বেশ জোরালোভাবেই পশ্চিমাবিরোধী প্রচারণা চালানো হয় রাশিয়ায়। দেশটির জনগণ মনে করে, এতো সব প্রতিকূলতার মধ্যেও তাদের দেশ বেশ গর্বের সাথে মাথা উঁচু করেই দাঁড়িয়ে আছে। কারো কাছে মাথা নত করার কথাও ভাবে না তারা। রাশিয়ার জনগণের শতকরা ৭০ ভাগের কাছেই মার্কিনীদের প্রতি নেতিবাচক মনোভাব কাজ করে আর ইউরোপীয় ইউনিয়নকে অপছন্দ করেন শতকরা ৬০ ভাগ রাশিয়ান।
সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর ইউক্রেন ইস্যুতেই রাশিয়ানদের মধ্যে আরো বেশি ঐক্য তৈরি হয়েছে। রাশিয়ানদের মতে, দাঁত বের করার পর কেউ ভালোবাসলে ভালো। আর ভালো না বাসলে প্রয়োজনে এমন ভঙ্গি করতে হয় যাতে অন্তত ভয় পায়। রাশিয়ান প্রেসিডেন্টের এই ধরনের আগ্রাসী ভূমিকার কারণে জনপ্রিয়তা বেড়েছে। আইএস দমনে সিরিয়ায় বিমান হামলার সিদ্ধান্তেও সমর্থন দিয়েছে সাধারণ মানুষ। ডিসেম্বরে লেভাডা সেন্টারের ঐ জরিপে দেখা যায় দেশটির শতকরা ৮৫ ভাগ মানুষ তাদের দেশের সামরিক বাহিনীকে নিয়ে গর্ব করে। বিশ্ব রাজনীতিতে রাশিয়ার নেতৃত্ব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে বলে মনে করে ৬৮ ভাগ মানুষ। আর শতকরা ৬০ ভাগ রাশিয়ানই মনে করেন অন্যান্য দেশের তুলনায় রাশিয়া অনেক ভালো অবস্থানে রয়েছে।

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।