‘জাতিসংঘ ভুল পথে হাঁটছে’

S M Ashraful Azom
0

প্যারিস জলবায়ু শীর্ষ সম্মেলনে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা কমিয়ে আনার ব্যাপারে একটি বাধ্যবাধকতা চুক্তি করতে দেশগুলোর প্রতিনিধিরা টানা আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। এর মধ্যেই হতাশার সুর তুলেছেন বিশেষজ্ঞরা।
 
নাসার সাবেক প্রধান বিজ্ঞানী জেমস হেনসেন বলেছেন, গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি দুই ডিগ্রির নিচে রাখতে জাতিসংঘ ভূল পথে হাটছে। কার্বন নি:সরন কমানো এবং জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমানোর ক্ষেত্রেও জাতিসংঘ সততার পরিচয় দিচ্ছে না বলে তিনি অভিযোগ করেছেন। জাতিসংঘের বিরুদ্ধে তিনি অভিযোগ করে বলেছেন ‘বিভিন্ন ইস্যুতে জাতিসংঘ এক পা এগুচ্ছে তো আরেক পা পেছনে ফেলছে।’ তিনি এও বলেছেন যে, বিশ্বনেতারা জলবায়ু পরিবর্তনের মতো জটিল বিষয়টি ভভিষ্যত প্রজন্মের জন্য রেখে দিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু কাজটি ভবিষ্যত প্রজন্মের আওতার বাইরে চলে যাচ্ছে। 
 
জেমস হেনসেন বলেন, বিশ্বনেতারা একে অপরের কথার ফুলঝুরি শুনে তালি দিচ্ছেন। তারা বলছেন, প্যারিস জলবায়ু সম্মেলন সফল হতে চলেছে। কিন্তু আসলে তারা ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য একটি বোঝা রেখে যাচ্ছেন যা তারা অতীতেও করেছেন।
 
এদিকে প্যারিস সম্মেলনকে ঘিরে উন্নয়নশীল দেশগুলো আশায় বুক বাঁধলেও ওয়াশিংটন পোষ্টের এক প্রতিবেদন কিন্তু উল্টোটা বলছে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, সম্মেলনকে ঘিরে অনুন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর দুশ্চিন্তার অনেক কারন আছে। গতবছর পেরুতে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে দেশগুলো তাপমাত্রা কমাতে নিজস্ব উদ্যোগ নেয়ার কথা বলেছিলো। এ লক্ষ্যে প্যারিস সম্মেলনের আগে দেশগুলো তাদের পরিকল্পনাও জমা দিয়েছে। কিন্তু এতে তাপমাত্রা কমানোর যে অংগীকার করা হয়েছে তা মোটেই সুখকর নয়।
 
জলবায়ু তহবিলে অর্থায়ন প্রশ্নে সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী ১৯২ দেশের প্রতিনিধিরা গতকাল আলোচনার শুরুতেই তর্কে জড়িয়ে পড়েন। ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও চীনের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর দাবি, যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল ও ইউরোপের উন্নত দেশগুলোর মাধ্যমে পরিবেশের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হচ্ছে। তাই এসব দেশকেই বেশি হারে কার্বন নির্গমন কমাতে হবে।
 
অন্যদিকে পশ্চিমাদের যুক্তি, চীন, কাতার ও ভারতের মতো উদীয়মান দেশগুলো পরিবেশের ক্ষতি করছে বেশি। অতএব কার্বন নির্গমন হ্রাসেও তাদেরই এগিয়ে আসতে হবে। সম্মেলনের সভাপতি ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লরা ফেবিয়াস, ইউএনএফসিসিসির নির্বাহী সেক্রেটারী ক্রিস্টিনা ফিগুইরা, জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন ও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ওলাঁদ প্যারিসে একটি চুক্তি স্বাক্ষরে সব দেশকে ঐক্যমত্যে পৌছাতে প্রভাবশালী দেশের জোটগুলোর সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছেন। 
 
অপরদিকে, গ্রিন ক্লাইমেট তহবিলের অর্থ ঋণ না অনুদান তা স্পষ্ট করেনি কেউ। এ নিয়ে শিল্পোন্নত ও স্বল্পোন্ত দেশগুলোর মধ্যে বির্তক চলছে। এ বিষয়ে পরিবেশ ও বন মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেন, এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান হচ্ছে-আমরা ঋণ চাই না- উন্নত বিশ্বকে ক্ষতিপুরণ হিসেবে এ অর্থ দিতে হবে। তিনি বলেন, জলবায়ু সম্মেলনে এবার বাংলাদেশ অর্থায়ন ইস্যুতে জোরালো দাবি তুলেছে।
 
ডারবান রোডম্যাপ ও কানকুন ফ্রেমওয়ার্কের আলোকে তৈরি প্যারিস চুক্তির রুপরেখা নিয়ে গতকালও যুক্তরাষ্ট্র, জার্মাানি, বৃটেন, ভারত, চীন, কানাডা, ব্রাজিল, ফ্রান্স, রাশিয়া, আফ্রিকান ইউনিয়ন, জি-৭৭ চায়না ও তেল সমৃদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে মতবিরোধ চলছিলো। এসব দেশের প্রতিনিধিরা বলছেন, কার্বন নিঃসরণ না কমালে শুধু অর্থ দিয়ে কোনো লাভ হবে না। তারা বলছেন, এখানে আইনি বাধ্যবাধকতামূলক চুক্তি না হলে ২০০৯ সালের কোপেনহেগেন সম্মেলনের মতো প্যারিস সম্মেলনও ব্যর্থ হবে।
ট্যাগস

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top