সেবা ডেস্ক: দ্বিপাক্ষিক সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চলতি বছরের মে মাসের মধ্যে সৌদি আরব যাচ্ছেন। সফরকালে দু্’দেশের মধ্যে বিনিয়োগ, সংস্কৃতি ও শিক্ষাখাতে সহযোগিতার বিষয়ে বেশ কয়েকটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হতে পারে। আর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে গভীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছেন সৌদি নেতৃত্ব। বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ তাঁকে অভ্যর্থনা জানাতে পেরে আনন্দিত হবেন বলে জানানো হয়েছে। বুধবার রিয়াদে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলীর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠককালে সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল বিন আহমেদ আল জুবায়ের তাঁর সরকারের এই আগ্রহের কথা জানান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চলতি বছরের মার্চ ও এপ্রিলের মধ্যে সৌদি আরব সফরের ব্যাপারে মাহমুদ আলীর প্রস্তাবের পর সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কথা বলেন। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকায় প্রাপ্ত এক বার্তায় এ কথা বলা হয়েছে।
এদিকে আরব নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থার বিরুদ্ধে সৌদি আরবের সঙ্গে একজোট হয়ে লড়াই করবে বাংলাদেশ। সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী এ বিষয়ে দৃঢ় প্রত্যয়ের কথা জানান। বৈঠকে দুই মন্ত্রী বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের মধ্যকার পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করেন। পাশাপাশি আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিষয় মতবিনিময় করেন। এছাড়া সংস্কৃতি, শিক্ষা, কৃষিসহ বিভিন্ন খাতে দু’দেশ একসঙ্গে কাজ করবে বলেও মত দেন তাঁরা।
ঢাকায় প্রাপ্ত খবরে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী সৌদি আরব সফরের প্রাক্কালে বিনিয়োগ, সংস্কৃতি ও শিক্ষা বিষয়ে সহযোগিতা চুক্তি নিয়ে কাজ করতে উভয়পক্ষ সম্মত হয়েছে, যাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সৌদি আরব সফরকালে চুক্তিগুলো স্বাক্ষরিত হতে পারে। উভয় দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখার জন্য সৌদি আরবে বসবাসকারী বাংলাদেশিদের প্রশংসা করে সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশ থেকে ডাক্তার ও নার্সসহ আরো দক্ষ ও আধা-দক্ষ শ্রমিক নিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেন। বাংলাদেশি হেলথ প্রফেশনালদের নিয়োগের জন্য সৌদি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিনিধিদলের বাংলাদেশ সফরে এসে মেডিক্যাল ডিগ্রি ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পরিদর্শনের বিষয়ে উভয় মন্ত্রণালয় সম্মত হয়েছে।
দু’দেশের মধ্যে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত যৌথ কমিশনের বৈঠকের কথা উল্লেখ করে মাহমুদ আলী বাংলাদেশের সাম্প্রতিক উন্নয়নের পাশাপাশি বাংলাদেশের দক্ষ শ্রমশক্তি এবং আরএমজি ও ওষুধ সামগ্রীর মতো বিশ্বমানের পণ্য সৌদি আরবে রফতানির সম্ভাবনা সম্পর্কে অবহিত করেন। সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আগ্রহ ব্যক্ত করে বলেন, সৌদি ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সুযোগ-সুবিধা কাজে লাগাতে পারেন এবং তারা ওষুধ শিল্পের সুযোগ-সুবিধা প্রত্যক্ষ করতে বাংলাদেশ সফরে যেতে পারেন। সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের বিজনেস ভিসা দিতে ঢাকায় তাদের দূতাবাস কর্মকর্তাদের পরামর্শ দেয়ার জন্য বৈঠকে উপস্থিত মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন। উভয়পক্ষ সৌদি আরবে বাংলাদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংকের শাখা চালুর ব্যাপারে সম্মত হয়েছে। এতে উভয় দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ জোরদার হবে।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী উভয় দেশের বেসামরিক প্রশাসনের প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটগুলোর মধ্যে সহযোগিতার প্রস্তাব দেন। সৌদি পক্ষ এ প্রস্তাবকে স্বাগত জানায়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী রিয়াদ, জেদ্দা ও দাম্মামে বাংলাদেশ কমিউনিটি স্কুলের জন্য ভূমি বরাদ্দে সহযোগিতা দেয়ার জন্য সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে অনুরোধ জানান। সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জবাবে বলেন, বিষয়টি সৌদি শিক্ষা মন্ত্রণালয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানালে সৌদি মন্ত্রী আমন্ত্রণ গ্রহণ করেন এবং উভয়পক্ষের সুবিধাজনক সময়ে তিনি ঢাকা সফরে আগ্রহের কথা জানান। বৈঠককালে সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন বিভাগের উপমন্ত্রীরা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসিহ, মিশনের উপ-প্রধান নজরুল ইসলাম এবং কনসাল জেনারেল জেদ্দার শহিদুল করিমসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে আরব নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সমপ্রতি তেহরানে সৌদি আরবের দূতাবাসে হামলার নিন্দা জানান বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি এই হামলাকে ভিয়েনা কনভেনশনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বলেও মন্তব্য করেন। আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী একটি দেশে অবস্থান করা অন্য দেশের কূটনীতিক ও কনস্যুলারদের নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্ব ওই দেশের সরকারের। এ সময় সৌদি বাদশাহ সালমানের প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শুভেচ্ছা পৌঁছে দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। গত মঙ্গলবার তিনদিনের সফরে রিয়াদ যান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।