সেবা ডেস্ক: কৃষিজমি ধ্বংসের লাগামহীন প্রবণতা কোনোভাবেই রোধ হচ্ছে না। শস্য ভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকার কৃষিজমি ভরাট করে গড়ে উঠছে দালানকোঠা। কয়েক বছর আগেও যে জমিতে আউশ, আমনসহ রবি মৌসুমের বিভিন্ন জাতের ফসল চাষাবাদ হতো, সে জমিতে এখন শোভা পাচ্ছে আবাসিক, বাণিজ্যিক আর বহুতল ভবন। রাস্তার ধারে আবাদি কৃষিজমি ভরাট করে অপরিকল্পিতভাবে বসতঘর, রাস্তাঘাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। অব্যাহত হারে ভরাট হওয়ায় কৃষিজমি হ্রাস পাওয়ার কারণে ভবিষ্যতে খাদ্য নিরাপত্তার হুমকি আর পরিবেশ বিপর্যয়েরও আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
জানা যায়, প্রতিবছর দেশে এক শতাংশ হারে কৃষিজমি হ্রাস পাচ্ছে। তবে ভূমির শ্রেণি পরিবর্তন তথা লাগামহীনভাবে কৃষিজমি ধ্বংসের যে প্রবণতা তাতে এর পরিমাণ আরো বেশি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। মৌলভীবাজারে আবাদি কৃষিজমির মধ্যে দু ফসলি এমনকি তিন ফসলি জমিও রয়েছে। এই জেলার কৃষি ভাণ্ডার হিসাবে খ্যাত কমলগঞ্জে এক সময়ে প্রচুর খাদ্যশস্য উত্পাদন হতো। কিন্তু কৃষিজমি কমে যাওয়ায় পূর্বের সেই রমরমা অবস্থা এখন আর নেই। তবে উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, বর্তমান সময়েও মৌলভীবাজার জেলার সব কটি উপজেলার মধ্যে কমলগঞ্জেই সবচেয়ে বেশি শস্য উত্পাদন হচ্ছে। গত কয়েক বছর যাবত্ প্রবাসী, চাকরিজীবী ও ব্যবসায়ীরা রাস্তার ধারের আবাদি কৃষিজমিতে আলিশান দালানকোঠা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করেই চলেছেন। এ ছাড়া সরকারিভাবে বিভিন্ন প্রকল্পের অর্থায়নে কৃষিজমির ওপর দিয়ে রাস্তা নির্মাণ করা হচ্ছে। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা গোপাল দেব বলেন, মৌলভীবাজারের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রবাসীদের আয়ের একটি বড় অংশ বাসা-বাড়ি, দালান, অট্টালিকা নির্মাণে ব্যয় করা হচ্ছে যার মধ্যে শতকরা পঁচাত্তর ভাগই নির্মিত হচ্ছে রাস্তার ধারের আবাদি কৃষিজমিতে। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আব্দুন নবী জানান, কমলগঞ্জে প্রতিবছর দশমিক ২৫ শতাংশ বা ৪৫ হেক্টর পরিমাণ কৃষিজমি হ্রাস পাচ্ছে। অর্থাত্ বছরে ৪৫ হেক্টর কৃষিজমি চলে যাচ্ছে অকৃষি খাতে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, কমলগঞ্জে মোট কৃষিজমির পরিমাণ ৩৭ হাজার ৩৫২ হেক্টর। এর মধ্যে ফসলি জমির পরিমাণ ৩২ হাজার ৭২৮ হেক্টর। আবাদযোগ্য পতিত জমি ২৬ হেক্টর। কৃষক নেতা কবি শহীদ সাগ্নিক, লেখক-গবেষক আহমদ সিরাজসহ স্থানীয় সচেতন মহল বলে, আবাদি কৃষিজমি ধ্বংসের যে লাগামহীন প্রবণতা শুরু হয়েছে তাতে দেশের ভবিষ্যত্ প্রজন্ম অনিবার্য বিপর্যয়ের সম্মুখীন হবে। এখনই এটি রোধ করা প্রয়োজন। তারা বলেন— বন্যা, ঝড়, খরা, নদীভাঙনসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে এমনিতেই কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে খাদ্য ঘাটতির সম্মুখীন হচ্ছে। আর জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে অপরিকল্পিতভাবে কৃষিজমি ভরাট করে বসতবাড়ি, কলকারখানা, আবাসন ও রাস্তাঘাটসহ নানা রকম স্থাপনা যত্রতত্র গড়ে ওঠার কারণে খাদ্য ঘাটতি আরো তীব্র আকার ধারণ করেছে। কৃষিজমিতে গৃহ নির্মাণে নীতিমালার অভাবে যে যার খুশিমতো অট্টালিকা গড়ে তুলছেন। এর ফলে খাদ্য ঘাটতির পাশাপাশি পরিবেশ বিপর্যয়েরও যথেষ্ট আশঙ্কা রয়েছে।
এ ব্যাপারে কমলগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শামছুদ্দীন আহমদ বলেন, মানুষের সচেতনতার অভাব ও নীতিমালা কার্যকর না থাকায় কিছু সংখ্যক মানুষ আবাদি কৃষিজমি ভরাট করে দালানকোঠা গড়ে তুলছে। তবে এসব বিষয়ে সরকারি উদ্যোগে জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম চলছে।

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।