‘অবৈধ বাংলাদেশি’ খুঁজে তালিকা করছে আসাম

Seba Hot News
সেবা ডেস্ক:  খোদ মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে এখন আসামের বহু জেলার প্রশাসক বা পুলিশ প্রধানদের রাতের ঘুম হারাম হয়েছে। কারণ রোজ তাদের দুই ঘণ্টা করে ‘বাংলাদেশি’ খুঁজতে হচ্ছে। শুধু খোঁজাই নয়, কোথায় কতো ‘অবৈধ বিদেশি নাগরিক’ মিলল, তা শনাক্ত করে সেই অনুযায়ী রেজিস্টার আপডেট করে তা পাঠাতে হচ্ছে রাজধানী গুয়াহাটিতেও। ফলে মাত্র দু’তিন দিনেই ত্রাহি-ত্রাহি রব পড়ে গেছে ডিব্রুগড়-তিনসুকিয়া-জোড়হাট-শোণিতপুরের মতো জেলাগুলোতে।
আসলে ভারতে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্য আসামে বিজেপি যে এই প্রথমবারের মতো ক্ষমতায় এসেছে– সেখানে তাদের প্রধান প্রতিশ্রুতিই ছিল বাংলাদেশ থেকে আসামে অনুপ্রবেশ রুখবে ও অবৈধভাবে থাকা বিদেশিদের ফেরত পাঠাবে। কাজটা বলা যতটা সহজ, করাটা মোটেই ততো সহজ নয়– কিন্তু ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বিজেপি প্রমাণ করতে চাইছে, অনুপ্রবেশ রোখার কাজে তাদের আন্তরিকতায় কোনও ঘাটতি নেই। বিজেপির নবীন মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোওয়াল প্রায় রোজই অনুপ্রবেশ রোখার নামে নতুন নতুন ফরমান দিচ্ছেন, আর তাতে ঘুম ছুটছে রাজ্য প্রশাসনের।
গত পরশুই যেমন মুখ্যমন্ত্রী এসেছিলেন আপার আসামের ডিব্রুগড় শহরে। ডিব্রুগড় সার্কিট হাউসে তিনি উজানি আসাম, মধ্য আসাম ও আপার আসামের ১২টি জেলার জেলা প্রশাসক (ডিএম) ও পুলিশ প্রধানদের (এসপি) নিয়ে দীর্ঘ বৈঠক করেন। সেই বৈঠকেই তিনি নির্দেশ দেন, সুপ্রিম কোর্টের রায়ে গোটা আসাম জুড়ে যে ন্যাশনাল রেজিস্টার অব সিটিজেনস তৈরির কাজ চলছে তাতে আর কোনও ঢিলেমি বরদাস্ত করা হবে না। গোটা প্রশাসনকে ঝাঁপিয়ে পড়ে তালিকা আপডেট করতে হবে।
‘আপডেট তো কাগজে কলমে– আসলে এই নির্দেশের মানে হলো প্রত্যেক জেলায় অবৈধ বাংলাদেশি খোঁজা। যারা ভারতের বৈধ নাগরিক, তাদের চিহ্নিত করে তালিকায় নাম তোলার অর্থই হলো রাজ্যের বাসিন্দাদের একটা বড় অংশ সেই তালিকা থেকে বাদও পড়বেন। তালিকা আপডেট করার নামে আসলে সেই অবৈধদেরই খুঁজতে চাইছে সরকার’, আপার আসামের একটি জেলার ডিএম নাম প্রকাশ না করার শর্তে এভাবেই বিষয়টি ব্যাখ্যা করলেন বাংলা ট্রিবিউনকে।
কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ নড়চড় হওয়ার উপায় নেই। তাই মঙ্গলবার থেকেই জেলার নানা প্রান্তে সমীক্ষক দল পাঠিয়ে সকাল দশটা থেকে বেলা বারোটা পর্যন্ত জোর কদমে তালিকা আপডেট করা শুরু করেছেন বিভিন্ন জেলার ডিএমরা। এই দলগুলো এক একদিন এক একটা এলাকায় গিয়ে বাসিন্দাদের বৈধ নাগরিকত্বের প্রমাণপত্র যাচাই করে দেখতে শুরু করেছেন।
আসাম চুক্তি অনুযায়ী ১৯৭১ সালের মধ্যে যারা বাংলাদেশ থেকে আসামে এসেছিলেন তারাই কেবল বৈধ ভারতীয় নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি পাচ্ছেন। বাকিদের কিন্তু চরম আশঙ্কা আর উৎকণ্ঠার মধ্যে দিন কাটাতে হচ্ছে।
মুখ্যমন্ত্রী যদিও ভরসা দিয়েছেন, বৈধ ভারতীয় নাগরিকদের ভয় পাওয়ার কিছু নেই– তাদের কোনওভাবেই হেনস্থা করা হবে না। কিন্তু মুশকিল হলো ১৯৭১ বা তারও আগে থেকে আসামে এসে বসত করছেন এমন বহু পরিবারেরই কিন্তু সেটা প্রমাণ করা খুব কঠিন। অনেক ক্ষেত্রে তাদের কাগজপত্র হয়তো বন্যায় ভেসে গেছে বা হয়তো বহুদিনের পুরনো সে সব নথি নষ্ট হয়ে গেছে, হারিয়ে গেছে। কাজেই সরকারের নির্দেশে সমীক্ষকরা যখন বাড়ি বাড়ি ঘুরে তালিকা আপডেট করতে যাচ্ছেন, তাদের মুখে হাসি থাকার কোনও কারণ দেখা যাচ্ছে না।
সমস্যাটা সবচেয়ে বেশি আসামের বাংলা ভাষাভাষী মুসলিম পরিবারগুলোতেই। তালিকা আপডেট করার নামে তাদের বাংলাদেশি বলে হেনস্থা করা হবে, নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার অল্পদিনের মধ্যেই এই ভয়টা তাদের মধ্যে চেপে বসেছে। আসামের বরাক উপত্যকায় শিলচরের এমপি ও কংগ্রেস নেত্রী সুস্মিতা দেবও অভিযোগ করেছেন, ‘সত্যিকারের ভারতীয়দের’ হেনস্থা করার প্রক্রিয়া কিন্তু শুরু হয়ে গেছে।
তবে ডিএম-এসপিরাই বা আর কী করবেন, তাদেরও যে হাত পা বাঁধা। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে নির্দেশ আসার পর প্রতিদিন তাদের নিয়ম করে দুই ঘণ্টা যে ‘বাংলাদেশি’ খুঁজে বেড়াতেই হচ্ছে!
বাংলাট্রিবিউন থেকে নেয়া।
ট্যাগস

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top