বাঁশখালীর লোকাল হিরো তরুণ ফুটবলার ছোটনের এগিয়ে চলা

Unknown
শিব্বির আহমদ রানা, বাঁশখালী,চট্টগাম প্রতিনিধি: বাঁশখালীর এমন কোন মাঠ নেই যে মাঠে সে ফুটবল খেলেনি। তার কিছু ভক্ত রয়েছে যারা ছোটন খেলতে আসছে বললেই দর্শকরা মাঠে জমায় ভীড়। ফুটবল জগতে আসতে তার এক মাত্র প্রথম উৎসাহ দাতা হিসাবে তাকে প্রেরণা দিয়েছে এবং বর্তমানেও দিয়ে যাচ্ছে তার মেঝ ভাই শায়ের রাশেদুল ইসলাম। তরুণ এই ফুটবলারের নাম  বাঁশখালীর জনে জনে। খুব ছোট বেলা থেকে ফুটবলের প্রতি ছিলো তার একনিষ্ট মনযোগ। সে বিভিন্ন খেলায় এ পর্যন্ত পাঁচশতাধিক ক্রেস্ট সহ অসংখ্য কাপ জিতেছে।

এই ফুটবলারের প্রথম কোচ ছিলেন জাতীয় ফুটবল তারকা আসকর খান বাবু। সে দ্বিতীয় কোচ হিসাবে কাছে পেয়েছিলেন জাতীয় ফুটবল তারকা শওকত খান বাবুকে ।তা ছাড়া চট্টগ্রামের সফল কোচ আলী স্যার, আব্দুল হান্নান মিরন স্যার, টিপু স্যার, লেদু স্যার, আব্বাস উদ্দীন কালু স্যার, কাইচার স্যার, আনোয়ার স্যার, ইব্রাহীম স্যার, ঢাকা বিভাগের কোচ কামাল বাবু, আলমীর উস্তাদ, সাহাব উদ্দীন স্যার সহ অারো অসংখ্য কোচের প্রশিক্ষণ পায় তরুণ এই ফুটবলার। কোচ আসকর খান বাবু তরুণ ফুটবলার ছোটনের প্রতিভা দেখে তার সম্ভাবনাকে কাজে লাগার জন্য উৎসাহ প্রদান করেন। বাঁশখালী ছাড়িয়ে জিবনের প্রথম দোহাজারী আবাহনীতে খেলেন। এবং এখান থেকে তার নতুন এক যাত্রার শুরু হয় ফুটবল জগতে।

এক পর্যায়ে যথেষ্ট সুনাম ছড়িয়ে পড়ে তার। সে চট্টগ্রামের পুলিশ লাইন মাঠে বাঁশখালীর প্রতিনিধি হয়ে "পাইওনিয়ার ফুটবল" খেলে। ২০০৯ সালে "চট্টগ্রাম মেয়র কাপ" খেলে জামালখান ২১নং ওয়ার্ডের পক্ষে হয়ে। সে খেলায় দুই (২) গোল ছিলো তার। (২০০৯-২০১০) সালে "চট্টগ্রাম পাইওনিয়ার ফুটবল" খেলে চট্টগ্রাম ব্লুস্টার ক্লাবের পক্ষ হয়ে। এই খেলায় চ্যাম্পিয়ন হয়ে কাপ জিতে  তার দল। (২০১১-২০১২) সাল পর্যন্ত  "মুক্ত বিহঙ্গ ক্লাবে" দ্বিতীয় বিভাগে দুই বছর যাবৎ খেলে।

এর পর শুরু হয় তার ঢাকার পথে যাত্রা। যার পেছনে অবদান ছিলো জাতীয় ফুটবল তারকা শিমুল খান বাবুর । তিনি তাকে ঢাকা প্রথম বিভাগে ঢাকা ওয়ান্ডারাস ক্লাবে পাঠিয়েছিলেন। তার ঢাকার প্রথম কোচ বর্তমান ঢাকা রহমতগঞ্জ  ক্লাবের সফল কোচ কামাল বাবু। সে (২০১২-২০১৪) এর মধ্যে "ঢাকা ওয়ান্ডারাস"এ খেলে।(২০১৩-২০১৪) সালে "চিটাগাং কর্ণফুলী ক্লাব" খেলে এবং তার দল চ্যাম্পিয়ন হয়। পরে মাতার বাড়ী  মুক্তকন্ঠ ক্লাবে প্রথম বিভাগে ফুটবল খেলে। এভাবে ছোট বেলা থেকে তার কৃতি ধরে রাখে। 

বর্তমানে এই তরুণ ফুটবলার নিজের উদ্যোগে বাঁশখালীর প্রত্যন্ত অঞ্চলের ফুটবল প্রতিভা গুলোকে যুগোপযোগী প্রশিক্ষণের মাধ্যমে গড়ে তুলতে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছে। তার মতে আজকে যারা জাতীয় পর্যায়ে ফুটবল খেলছে তারা সবাই এভাবে গ্রাম থেকে উঠে এসেছে। অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশ ফুটবল জগতে এক বিরাট প্রতিভার স্বাক্ষর রাখবে বলে তার অকুণ্ঠ ধারণা। বাঁশখালী নিয়ে তার স্বপ্ন জাতীয় লীগের তারকার তৈরি করা এবং এই প্রচেষ্টায় তার গড়া "বাঁশখালী থ্রি স্টার ফুটবল একাডেমী" কাজ করে যাচ্ছে। তার দাবি বাঁশখালীতে  এটিই একমাত্র প্রথম ফুটবল একাডেমী। যেখানে নিয়মিত প্র্যাকটিস দেওয়া হচ্ছে অসংখ্য প্রশিক্ষণার্থীদের।

ফুটবল প্রেমী অনেক অভিবাবক তাদের সন্তানদেরকে প্রশিক্ষণের জন্য এই একাডেমিতে ভর্তি করান। একাডেমীর অধিনে বর্তমানে নিয়মিত অনুশীলন করে যাচ্ছে প্রায় (৮০-৯০) জন ব্যাচ আকারে । এখান থেকে চট্টগ্রাম লীগে ৩য় বিভাগে (২০১৪-২০১৫) এ ১২ জন ফুটবলার খেলে। এতে "বাঁশখালী থ্রি স্টার ফুটবল একাডেমী" থেকে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত ৪ জন ফুটবলার ছিলো স্টার ক্লাবের ৩য় বিভাগে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন। তা ছাড়া বর্তমানে কিশোর লীগ থেকে শুরু করে প্রিমিয়ারলীগ পর্যন্ত তার একাডেমীর অসংখ্য খেলোয়াড় প্রতিভার স্বাক্ষর রাখছে। তার হাতে গড়া বাঁশখালী তথা সব জায়গায় ফুটবল প্রতিভাকে ছড়িয়ে দিচ্ছে অনেকে। তার মধ্যে কয়েকজন সেরা ফুটবলার হলো- হিরো (গোল কিপার), ফুটবলার মুন্না, সাহাদাত,  নাজমুল, আমানুল, সদয়, বিপন, ফয়সাল (গোলকিপার, টিংকু, রাসেল, ইমরান,  সাদেক (গোলকিপার), পুর্ণ, বাপ্পারাজ সহ প্রমূখ। এই ফুটবলার বলেন- বর্তমানে উপজেলা লীগে বাঁশখালীর প্রতিনিধি হয়ে তার একাডেমীর অাট জন (৮)  খেলোয়াড় খেলতেছে। তার মধ্যে অধিনায়ক সহ পাঁচ জন (৫) মুল একাদশে খেলছে। বর্তমানে এই একাডেমীতে প্রশিক্ষণার্থী সংখ্যা তিন শতাধিক ছাড়িয়েছে। 

ফুটবলার ছোটন শিলকূপ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে। দাখিল পরিক্ষায় পাশ করেন জামিরজুরী রজবিয়া আজিজিয়া সুন্নিয়া ফাযিল মাদ্রাসা থেকে। পরবর্তী গাছবাড়ীয়া সরকারী কলেজ থেকে মানবিক বিভাগে এইচ এস সি পাশ করেন। হাজ্বী মোহাম্মদ মহসিন কলেজ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে অনার্স শেষ করে ২০১৪ সালে। বর্তমানে মাস্টার্সে অধ্যয়ন করছে চট্টগ্রাম সরকারী কলেজে এই ফুটবলার। পড়ালেখার পাশাপাশি ক্যারিয়ারের জন্য বেছে  নিলেন ফুটবল খেলাকে।

সহজ সরল ও নম্র স্বভাবের এই তরুণ ফুটবলারকে স্থানীয়রা ছোটন বাবু বলে ডাকে। তার আসল নাম মোজাফ্ফরুল ইসলাম। ছোটন তার ডাক নাম। তার জন্ম ৩০ শে জুলাই ১৯৯৬ সালে বাঁশখালীর শিলকূপ ইউনিয়নের মনকিচর গ্রামে। তরুণ এই ফুটবলারের অর্জিত বিভিন্ন পুরুষ্কারের সংখ্যা পাঁচশতাধিক। বাঁশখালীতে তার অসংখ্য ভক্ত আছে। জাতীয় পর্যায়ে একজন ভালো প্লেয়ার হওয়ার স্বপ্ন তার এবং তার জন্য কাজ করে যাচ্ছে এই ফুটবল প্রতিভা। একাডেমীতে প্রশিক্ষণরত ছাত্রদেরকে নিজের তদারকিতে পড়ালেখার কাজও চালিয়ে যাচ্ছে। বাড়ী বাড়ী গিয়ে তাদের দেখাশুনা করে এবং অনেককে নিজ বাড়ীতেও পড়ার সু-ব্যবস্থা করেন। সে সকলের সার্বিক সহযোগীতা ও দোয়া চায় যেন তার আখাংকিত লক্ষ্যে পৌছতে পারে। 

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top