প্রচারণা চলছে ইশারা ইঙ্গিতে চলছে ভোটের মৌখিক হিসাব : বকশিগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচন- ২০১৭

S M Ashraful Azom


কাফি পারভেজ:  রাত পোহালেই বকশিগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচন। প্রচারণা চলছে ইশারা ইঙ্গিতে। প্রচারণার তুখোড় শব্দের ফাঁকে ভোটের অংক কষছেন দীর্ঘদিনের নাগরিক সুবিধা বঞ্চিত পৌর এলাকার ভোটাররা। কোন প্রার্থী, কিভাবে, কত ভোট পেতে পারেন চলছে তার মৌখিক হিসেব-নিকেশের সমীক্ষা। ভোটের প্রতিদ্বন্ধিতায় কোন প্রার্থীদের মধ্যে তুলনামূলক কমবেশি প্রতিযোগিতা হবে। তবে, তৃণমূলের কিছু ভোটারের বিশ্বাস, ‘ভোটের অংক বড় কথা নয়। প্রতিদ্বন্ধিতার ভোট হলেও সরকারি দলের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জয়ী হবে।’ রাজনীতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ভোটারদের এমন কথা নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে পারে। ভোটাররা ভোট প্রদানের উৎসাহ হারিয়ে ফেলতে পারে।

বুধবার পৌর এলাকার কয়েকটি ওয়ার্ডের ভোটারদের সাথে কথা বলে শোনা গেছে কোথাও সরল আবার কোথাও কঠিন ভোট অংকের কথা। তবে আভাস পাওয়া যাচ্ছে ত্রিমুখী তীব্র প্রতিদ্বন্ধিতার। কে বেরুতে পারে ? কে হাসবে শেষ হাসি ? কে হবেন পৌর মেয়র ? তুমুল অংক কষেও ভোট সমীক্ষার শেষ ফলাফল বের করা যাচ্ছে না। নিজস্ব ভোটের বিন্যাসে বিজয়ের আশা করছেন ছয় মেয়র প্রার্থীর সমর্থকরা। এ নির্বাচনটি দলীয় প্রতীকের। পৌরসভার প্রথম নির্বাচনে ৬ জন প্রার্থী মেয়র পদে, ৩টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে ২১ জন ও ৫৮ জন ৯টি সাধারণ কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

পৌর উন্নয়নের যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দিয়ে নির্বাচন করবেন ভোটাররা। এ জন্য অপেক্ষা করতে হবে ২৮ ডিসেম্বর প্রায় রাত ১০টা পর্যন্ত। কে হবেন এই পৌর পিতা ? যাই হোক  ভোটাররা তাদের যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত মেয়রকে বরণ করতে প্রস্তুত। ভোট সুষ্ঠ হলে সব প্রার্থীই ফলাফল মেনে নিয়ে নির্বাচিত মেয়রকে স্বাগত জানাবেন বলে জানিয়েছেন গণমাধ্যমকে।

এদিকে গোটা পৌর এলাকার ভোটাররা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করার জন্য সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোট দেয়ার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে রয়েছেন। কোথাও কোথাও বিশৃঙ্খলার সংশয় দেখা দিলেও নির্বাচনী আমেজে তা ফুটে ওঠেনি। প্রত্যেকের কাছে লক্ষ্য করা গেছে ভোট উৎসব।
পৌর এলাকার ৯টি ওয়ার্ডে ১২টি ভোট কেন্দ্রে ভোট হবে। বুথের সংখ্যা ৮৪টি। মোট ভোটার সংখ্যা ৩০ হাজার ৫শ’ ৯১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১৫হাজার ৭০জন ও মহিলা ১৫হাজার ৫শ’ ২১জন ভোটার গোপন ব্যালটে পছন্দের দল, প্রতীক কিংবা প্রার্থীকে নিজ নিজ ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমেই ভোটের রায় স্থিরতা পাবে। সংশয় ভেঙে ব্যালটে সিল মেরে পক্ষ নেবেন ভোটারা।

বকশিগঞ্জ পৌর উন্নয়ন উত্তরণে জনতার ভোটের রায় কোন পক্ষে গিয়ে দাঁড়াবে ? এই প্রশ্নটি সামনে রেখে অপেক্ষায় বকশিগঞ্জসহ সাড়া জেলার উৎসাহী জনগণ। দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হচ্ছে। প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী শাহিনা বেগম নৌকা প্রতীক, বিএনপির মনোনীত মেয়র প্রার্থী ফকরুজ্জামান মতিন ধানের শীষ প্রতীক, আওয়ামী লীগের তিন বিদ্রোহী মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম সওদাগর জগ প্রতীক, আনোয়ার হোসেন তালুকদার বাহাদুর নারিকেল গাছ, এ এম নুরুজ্জামান মোবাইল প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ ছাড়াও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সোলায়মান হক কম্পিউটার প্রতীক নিয়ে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

২০১৩ সালের ৫ই ফেব্রুয়ারি বকশিগঞ্জ পৌরসভা অনুমোদন লাভের পর ২৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বকশিগঞ্জ পৌরসভার প্রথম নির্বাচন। তৃতীয় শ্রেণির এই পৌরসভায় ৯ টি সাধারণ ওয়ার্ড ও ৩টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড নিয়ে মোট ২৩ দশমিক ৮০ বর্গ কিলোমিটার আয়তন। এই পৌরসভা গঠনের পর থেকে প্রশাসক নিয়োগের মাধ্যমে চলে আসছে এর কার্যক্রম।

আওয়ামী লীগের প্রার্থী শাহীনা বেগমের সমর্থকরা নিজস্ব ভোট ব্যাংক সামলাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। তারা নিজস্ব ভোটের বিন্যাসে বিজয়ের আশা করছেন। তারা মনে করেন, তাদের প্রার্থী শাহীনা ‘ইলেকশন উইন্যাবল হিরো’। বকশিগঞ্জের দৃশ্যমান উন্নয়ন এসেছে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়। তাই বকশিগঞ্জ পৌরবাসী একজোট হয়ে উন্নয়নের পক্ষে রায়  দেবেন।
এদিকে, বিএনপির ফকরুজ্জামান মতিনের সমর্থকরা মাঠেও প্রচন্ডভাবে তৎপর রয়েছেন। তাদের কথা জনতার বিপুল ভোট তাদের ঝুড়িতেই আসবে। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে ধানের শীষ প্রতীকের বিজয় নিশ্চিত বলে মনে করছেন ।

অন্যদিকে, আওয়ামী লীগের তিন বিদ্রোহী প্রার্থীর একজন নজরুল ইসলাম সওদাগরের সমর্থকরা বলছেন, এবার তাদের জগ মার্কার পক্ষে ভোটের জোয়ার পুরো পৌর এলাকায়। নজরুল ইসলাম সওদাগর ইমেজ ভোটের মাঠে পজেটিভ প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করেছে। যা বিজয়ের জন্য সহায়ক হবে। এবার তার পক্ষে নীরব ভোট বিপ্লব হবে। ২৮ ডিসেম্বর সারাদিন ভোট গ্রহণের পর মধ্য রাতে ঘোষিত ফলাফলই বলে দেবে শেষ হিসেব।

জামালপুরের রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, বকশিগঞ্জ পৌর নির্বাচন হবে জনপ্রিয়তার ‘ব্যারোমিটার’। এ পৌর নির্বাচনে যে দল জয়ী হতে পারবে পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনে সেই দলের প্রার্থীর পক্ষে ইতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি হবে।

দীর্ঘদিনের নাগরিক সুবিধা বঞ্চিত দারিদ্র্যক্লিষ্ট মানুষের জীবন যাপন চলছে অতিকষ্টে। চলাচল অনুপযোগী বেহাল সড়ক ব্যবস্থা, জলাবদ্ধতা, ময়লা-আবর্জনার স্তুপ, বিশুদ্ধ পানির অভাব, বেকারত্বসহ পদে পদে সমস্যায় জর্জরিত। কোন সমস্যাটি বড়, কোনটি ছোট সেই বিচারে না গিয়ে নাগরিক সমস্যায় পৌরবাসীর প্রয়োজন একজন দায়িত্বশীল ও উদ্যোগী  মেয়র। হয়তো সেই লক্ষ্যেই সম্ভাবনার এই পৌরসভাতে স্বপ্নের ভোট দিতে গিয়ে আজ পাওয়া না পাওয়া, আশা-নিরাশার দোলায় দুলতে দুলতে স্বপ্ন এবং প্রত্যাশা চোখে রেখে ভোটাররা বেছে নেবেন একটি রাজনৈতিক দল, প্রতীক ও তার মেয়র প্রার্থীকে। তারপর  দেবেন ভোটের রায়।

অন্যদিকে সুষ্ঠুভাবে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন করার জন্য সব রকম প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রিটার্নিং অফিসার মোহাম্মদ মঞ্জুরুল আলম। তিনি জানান, নির্বাচনে ১২জন প্রিজাইডিং অফিসার, ৮৪ জন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ও ১৬৮ জন পোলিং এজেন্ট থাকবেন। বুধবার দুপুর ১টা থেকে নির্বাচনী সরঞ্জাম প্রিজাইডিং অফিসারদের কাছে বিতরণ করা শুরু হয়েছে। নির্বাচনে ১২টি ভোট কেন্দ্রের সবকটি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এজন্য থাকছে বিজিবি, র‌্যাবের সমন্বয়ে ভ্রাম্যমাণ ও স্ট্রাইকিং ফোর্স। প্রতিটি ভোট কেন্দ্রের নিরাপত্তায় ১০জন পুলিশ ও ১৫জন আনসার ভিডিপি সদস্য থাকবেন। ৯টি ওয়ার্ডের ১২টি কেন্দ্রে  মোট ১৮জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও একজন জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট থাকবেন। এ ছাড়াও ৩০জন করে ২ প্লাটুনে থাকছে বিজিবি সদস্যরা। তিনি আরো জানান, নির্বাচনের দিন ভোট গ্রহনের শুরুর ১ঘন্ট পূর্বে প্রতিটি কেন্দ্রে ব্যালট পেপার সরবরাহ করা হবে। এ ছাড়াও বহিরাগতদের অবস্থান নিষিদ্ধ করে সতর্কবার্তাও জারি করা হয়েছে বলে জানান। 

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top