মাদক বন্ধে বিশেষ অভিযানের পাশাপাশি প্রয়োজন সামাজিক প্রতিরোধ

S M Ashraful Azom
মাদক বন্ধে বিশেষ অভিযানের পাশাপাশি প্রয়োজন সামাজিক প্রতিরোধ

সেবা ডেস্ক: সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ‘চলো যাই যুদ্ধে, মাদকের বিরুদ্ধে’ স্লোগানকে সামনে রেখে সারা দেশব্যাপী মাদকবিরোধী অভিযানে নেমেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গত ৩১ জানুয়ারি জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাদক ও মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর বার্তা উচ্চারণ করে বলেন, মাদকের পক্ষে যারা কাজ করবে তাদেরকে ক্ষমা করা হবে না। এই জাতিও তাদেরকে কখনই ক্ষমা করবে না। মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের কথা ঘোষণা করেন তিনি। এর পর থেকেই দেশব্যাপী মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার প্রস্তুতি গ্রহণ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

এছাড়া মাদকের বিরুদ্ধে অভিযানের পাশাপাশি সমানতালে শুরু হয় মাদকের ভয়াবহতা নিয়ে জনসচেতনতামূলক কার্যক্রমও। তথ্য মন্ত্রণালয় ১ মার্চ থেকে দেশব্যাপী মাদক বিরোধী তথ্য প্রচারণামূলক কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। মাদক যেহেতু একটি সামাজিক ব্যাধি, তাই আমাদের সবাইকে নিজ নিজ জায়গা থেকে মাদকের বিরূদ্ধে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।

একটি সমাজের মূল উপাদান হচ্ছে পরিবার। তাই মাদক নির্মূলে সামাজিক প্রতিরোধের শুরুটা নিজের পরিবার থেকেই করতে হবে। নিজের পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের বিষয়ে খোঁজ খবর রাখতে হবে। বিশেষ করে পরিবারের উঠতি বয়সী ছেলেমেয়েদের বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। তারা কোথায় যাচ্ছে কাদের সাথে মিশছে, কিংবা তাদের আচার আচরণে কোনো অস্বাভাবিকতা দেখা যাচ্ছে কি না ইত্যাদি বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।

দুঃখজনক হলেও সত্য যে আমাদের পরিবারগুলোতে ছোটবেলায় বিভিন্ন ধরনের ধর্মীয় কিংবা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা দেওয়া হলেও অধিকাংশ পরিবারেই মাদকের ভয়াবহতার সম্বন্ধে কোনো শিক্ষা দেওয়া হয় না। যার ফলে উঠতি বয়সী ছেলেমেয়েরা মাদক সম্পর্কে এক ধরনের অজ্ঞতা থেকে এবং মাদকসেবন করাকে এক ধরনের আধুনিকতা কিংবা তথাকথিত স্মার্টনেস মনে করে মাদকে জড়িয়ে পড়ে।

মাদক নির্মূলে সামাজিক প্রতিরোধের অংশ হিসেবে সরকারে পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের উদ্যোগে সচেতনতামূলক সভা সেমিনার আয়োজন করে মাদকের ভয়াবহতা সম্পর্কে মানুষজনকে অবহিত করা প্রয়োজন। এই ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবেন মসজিদের সম্মানিত ইমামরা।

এছাড়া, বর্তমানে আমাদের দেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রসারের ফলে যেকোন আন্দোলন কিংবা প্রচার প্রচারণার ক্ষেত্রে এই মাধ্যমগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। তাই সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে মাদকের ভয়াবহতা কিংবা কুফল নিয়ে সচেতনতামূলক লেখা, ব্যানার ইত্যাদি প্রচার করে এই সামাজিক ব্যাধি নির্মূলে সুফল পাওয়া যেতে পারে।

আমাদের সমাজে সাম্প্রতিক সময়ে মাদকের ভয়াবহতা উপলদ্ধি করেই প্রধানমন্ত্রী মাদক নির্মূলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর হওয়ার নির্দেশ দেন। মাদকের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য অত্যন্ত স্পষ্ট। মাদকের খুচরা বিক্রেতা থেকে শুরু করে ডিলার পর্যন্ত, সে যেই হোক, তাকে এই কাজ ছাড়তে হবে। মাদকের শিকড়-বাকড়সহ তুলে নিয়ে আসতে হবে।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সমাজে মাদকের নীল ছোবলের কুপ্রভাব উপলদ্ধি করে এবং তার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তোলার লক্ষ্যে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর সর্বপ্রথম আইন করে মাদকদ্রব্য সেবন এবং বহন নিষিদ্ধ করেছিলেন। তাই সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি করে যার যার অবস্থান থেকে মাদকের বিরুদ্ধে লড়াই করে এ যুদ্ধে জয়ী হতেই হবে। এই যুদ্ধে সফল হওয়ার মধ্য দিয়েই আমরা আমাদের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে পারব।



#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top