যে কারণে বিএনপি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলো প্রতিবেশি দেশ ভারত

S M Ashraful Azom
যে কারণে বিএনপি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলো প্রতিবেশি দেশ ভারত

সেবা ডেস্ক: সম্প্রতি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এর সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করেছেন যে, ‘সরকার ভারত তোষণ নীতি নিয়ে ক্ষমতায় আছে’। বিএনপির দায়িত্বশীল অনেক নেতাই মনে করেন, আওয়ামী লীগ ভারতের মদদে এবং সমর্থনে ক্ষমতায় টিকে আছে।

অথচ ভারতীয় প্রথিতযশা প্রবীণ সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক কুলদীপ নায়ার পর্যন্ত বলেছিলেন, ‘আওয়ামী লীগের চেয়ে বিএনপিকে হ্যান্ডেল করা ভারতের জন্য সহজ। কারণ আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের স্বার্থ নিয়ে বেশি চাপ দেয়। বিএনপি, জাতীয় পার্টি বরং ক্ষমতায় থাকার জন্য ভারতকে খুশি রাখতেই ব্যস্ত থাকে।

১৯৭৫- এর পর থেকেই ভারত ‘সব ডিম এক পাত্রে না রাখার নীতি গ্রহণ করেছিল। তাই ভারত আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি দুটি দলের সঙ্গেই সুসম্পর্কের ধারা বজায় রাখতো। বাংলাদেশে যেন ভারত বিদ্বেষ এবং ভারত বিরোধী মনোভাব তীব্র না হয় সেজন্য বিএনপি এবং দক্ষিণপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বেশি মাখামাখির নীতি গ্রহণ করেছিল। এ কারণেই ১৯৯১ এ বিএনপি ক্ষমতায় আসে। ১৯৯২ সালে বেগম খালেদা জিয়া ভারত সফরে গিয়েও গঙ্গার পানি নিয়ে কোনো কথা না বলায় সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছিল।

২০০১ এর নির্বাচনের আগে তারেক জিয়াও ভারতে গিয়ে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকও করেন। সে সব বৈঠকে ভারত সন্তুষ্ট হয়। বিএনপি আবার ক্ষমতায় আসে। কিন্তু ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বিএনপি শাসনামল ভারতকে তার ডিপ্লোম্যাসি পাল্টাতে বাধ্য করে। বিএনপি থেকে ভারত মুখ ফিরিয়ে নেয়।

ভারতের কূটনীতিক এবং বিশিষ্টজনের মতে এর কারণগুলো হলো:

ক. ৭৫ এর পর থেকে সব সরকারের সময়ে বাংলাদেশ ছিল ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ঘাঁটি। এমনকি ১৯৯৬-২০০১ এ শেখ হাসিনার শাসনামলে তা কিছুটা দমলেও ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এলে, এটা রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা পায়। ভারত মনে করে বিএনপি আবার ক্ষমতায় এলে একই পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে। বিশেষ করে উলফাদের জন্য ১০ ট্রাক অস্ত্রের মতো বহু অস্ত্র ঢুকবে বাংলাদেশে। এই আশঙ্কা ভারতের সব মহলে।

খ. বিএনপির চীন নীতি। ভারত মনে করে, এই উপমহাদেশে চীন তাদের জন্য এক মাথাব্যথা। আর বিএনপি ভারতের চেয়ে চীনের প্রতিই বেশি আগ্রহী। এই কারণে চীনের আগ্রাসী যুগে ভারত নতুন বিপদ আনতে চায় না।

গ. বিএনপির সঙ্গে জামায়াত এবং দক্ষিণপন্থীদের মাখামাখি, জোট বিএনপি-ভারত দূরত্বের একটি বড় কারণ।

ঘ. ভারত মনে করে, বিএনপি পাকিস্তানপন্থী একটি দল। বিএনপির ভাবী নেতা তারেক জিয়ার সাথে লন্ডনে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই- এর গোপন বৈঠকে ভারত ক্ষুব্ধ। তার সঙ্গে জঙ্গি এবং বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সম্পর্ক রয়েছে বলেও মনে করে ভারত।

২০১২ সালের ২৮ অক্টোবরও শেষবার বেগম জিয়া এক সপ্তাহের সফরে ভারতে গিয়েছিলেন। তিনি ঢাকায় ফেরার আগে বৈঠক করেছিলেন ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির সঙ্গে৷ বৈঠকে বাংলাদেশের মাটিকে ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ব্যবহার করতে না দেয়ার আশ্বাসও দিয়েছিলেন। কিন্তু ভারত বিএনপির ওপর আস্থা রাখতে পারেনি। তাই ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপি না আসলেও ভারত কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায়নি, এমনকি আগামী নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নিলেও ভারত খুব আপত্তি করবে না বলেই কূটনীতিক মহলের ধারণা।



#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top