সেবা ডেস্ক: তারেক রহমানের ব্যাপারে জিয়াউর রহমান কখনোই আশাবাদী ছিলেন না, বরং ছেলের অপকর্মের নমুনা তিনি অনেক আগেই বুঝতে পেরেছিলেন। আসল গল্পটি প্রয়াত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি নেতা মীর শওকত আলীর লেখা, যা তিনি লিখেছিলেন ৮০’র দশকে আনোয়ার শাহাদাত সম্পাদিত ‘আসে দিন যায়’ শিরোনামে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকায়। যার শেষাংশ বিকৃত করে আজও প্রচার করে বিএনপি। আজ জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে উঠে এল পুরোনো সেই গল্প।
৭ম থেকে ৮ম শ্রেণীতে উঠার সময়ে তারেক রহমান বিবিধ বিষয়ে ফেল করেন। জিয়াউর রহমান খালেদা জিয়াকে নিয়ে স্কুলে গেলে প্রধান জানালেন তারেককে ‘বিবেচনায় উত্তীর্ণ’ করানো হয়েছে। জিয়া বলেন, অন্য কেউ হলে প্রধান শিক্ষক পাস করাতেন কিনা। প্রধান শিক্ষক না বোধক মাথা নাড়েন এবং বললেন এমন কাউকে স্কুল থেকে বের করে দিতেন। জিয়া বললেন, তবে আমার ছেলের সাথেও তাই করুন।
খুব মহান শোনালেও উপরের গল্পটা শুধুই গল্প। বাস্তবতা ভিন্ন। আদতে জিয়ার ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং পরবর্তীতে বিএনপি নেতা মীর শওকত আলীর ভাষ্য অনুযায়ী ঘটনা এরকম- ‘ছেলের ফেলের খবর শোনার পর ক্ষুব্ধ জিয়া বলেছিলেন, আপনারা কি পড়ান যে ছেলে ফেল করে?’ জবাবে প্রধান শিক্ষক তারেক রহমানের ফাইল বের করে জিয়াকে দেখান। এর আগে ত্রৈমাসিক পরীক্ষাতেও সে ফেল করেছে। ক্লাস টেস্টেও ফেল করেছে। প্রধান শিক্ষক বললেন, আমরা গার্জিয়ানকে চিঠিও লিখেছি। আপনি সেটা দেখে স্বাক্ষরও করেছেন। আমরা আর কি করবো?’- জিয়া এই উত্তরে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন।
বিচলিত না হয়ে প্রধান শিক্ষক জিয়ার স্বাক্ষর করা কাগজ, যাতে তারেকের ফেলের বৃত্তান্ত দেয়া ছিল, তা তুলে ধরেন। চিঠি দেখে সম্ভিত জিয়া, স্ত্রী খালেদার নত মাথা দেখে বুঝে যান ঘটনা। তারেক আপন পিতারই স্বাক্ষর জ্বাল করেছে। সদ্য কিশোর একজন ছেলে এই বয়সেই শিখে গেছে জ্বাল-জালিয়াতির কারবার।
স্কুল থেকে বেরিয়ে তিনি বাসায় গেলেন। তারেককে ডাকলেন। তারেক দাঁড়িয়ে। জিয়াউর রহমান উত্তেজিত। খালেদা ছেলেকে বাঁচাতে বললেন, ‘বাচ্চা মানুষ ভুল করেছে। মাফ করে দাও, আর করবে না।’ এবার জিয়া গর্জে উঠলেন, বললেন, ‘সাট আপ। চোরের মায়ের বড় গলা।’ এরপর বিচার চলল। তারেক স্বীকার করলো যে, বাবার ভয়ে সে নিজেই জিয়ার স্বাক্ষর জাল করে স্কুলে জমা দিয়েছে। জিয়া খালেদাকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বললেন, ‘ছেলেকে সামলাও, ঠিক করো। না হলে এই ছেলে তোমাকে জেলের ভাত খাওয়াবে’।
খালেদা জিয়া আজ জেলে। খালেদার আজকের পরিণতির জন্য খালেদা এক দায়ী নন। কারণ পুত্রের লাগামহীন দুর্নীতির দায় অনেকটাই তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী থাকার কারণে তার উপরে পড়েছে। আজ ৩০ মে জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী। ছেলের ব্যাপারে করা তার এত আগের ভবিষ্যৎবাণী আজ সত্য। কবরে শায়িত জিয়া হয়ত ঠিকই জানতেন, কি ছেলে তিনি জন্ম দিয়েছেন।
সপ্তম শ্রেণীতে জালিয়াতি করে পিতার হাতে ধরা পড়া তারেক এখন দুর্নীতির বরপুত্র। দুটি মামলায় ১৭ বছরের জেল হয়েছে। লন্ডনে পালিয়ে আছেন। তার মা জেল খাটছেন পুত্রের অপকর্মেই। নিজের ছেলে সম্পর্কে জিয়া ১৯৮০ সালেই ভবিষ্যতবাণী করেছিলেন, ৩৮ বছর পর তা কি সুন্দরভাবে মিলে গেছে। জিয়া নিজেও দেখেছিলেন, বুঝেছিলেন বলেই এমন মন্তব্য নিজের ছেলে সম্পর্কে করেছিলেন।
বিএনপির রাজনীতি যেমন সত্যকে বিকৃত করা বা অর্ধসত্য বলা, তেমনি বিএনপি নেতা মীর শওকতের এই গল্পটিকেও বিকৃত করা হয়েছে। আর এভাবেই প্রতীয়মান বিএনপি এবং তাদের স্বঘোষিত চেয়ারম্যান তারেকের বৃত্তান্ত। দেশ ও দেশের মানুষের স্বার্থেই এমন বিকৃত রাজনীতিবিদ এড়িয়ে চলা নিরাপদ বলে মনে করে সচেতন রাজনৈতিক মহল।