নতুন উদ্যমে আবার চালু হচ্ছে দেশের পাট শিল্প

S M Ashraful Azom
নতুন উদ্যমে আবার চালু হচ্ছে দেশের পাট  শিল্প

সেবা ডেস্ক: পাট বাংলাদেশের ঐতিহ্য। পাট বাঙালি সংস্কৃতির একটি অপরিহার্য অংশ। এ দেশের কৃষকদের নগদ অর্থ উপার্জনে, কর্মসংস্থানে, বৈদেশিক অর্থ আহরণে ও সর্বোপরি জাতীয় অর্থনীতিকে শক্তভাবে নির্মাণে পাটের অবদান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান বিশ্ববাজারে পাটের চাহিদার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশে পাটের উৎপাদন বাড়ানোর যে অমিত সম্ভবনার দুয়ার উন্মোচিত হয়েছে তাকে কাজে লাগানো হচ্ছে পরিকল্পিতভাবে।

পাটকে বাংলাদেশে সোনালী আঁশের সাথে তুলনা করা হয়। পাট বিদেশে রপ্তানি করে বিপুল পরিমাণের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে থাকে বাংলাদেশ। এ মুদ্রা সহায়তা করে আমাদের অর্থনীতি প্রবৃদ্ধিতে। পাট চাষের উপর নির্ভর করে জীবনযাপন করছে দেশের অনেক কৃষক। দেশের ০৮ থেকে ১০ মিলিয়ন কৃষক প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে পাট উৎপাদনের সাথে জড়িত। দেশে বর্তমানে প্রায় ৮ লাখ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয় যা থেকে প্রায় ৮০ লাখ বেল পাট আঁশ উৎপন্ন হয়। বছরে উৎপাদিত এ পাটের শতকরা ৫১ ভাগ পাট ভারী পাটকলে ব্যবহার করা হয়, প্রায় ৪৪ ভাগ কাঁচাপাট বিদেশে রপ্তানি হয় ও মাত্র ৫ ভাগ দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যবহারে কাজে লাগে। গত ৭০ ও ৮০ দশকের তুলনায় পাটের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য সরকার কর্তৃক বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে এবং আশাতীত ভাবে তা বাড়ছে।

কাঁচাপাট ও পাটজাত দ্রব্য বাংলাদেশে রপ্তানির ক্ষেত্রে রাজস্ব আয়ের একটি উল্লেখযোগ্য উৎস। বাংলাদেশের মোট শ্রমশক্তির প্রায় শতকরা ১২ ভাগ পাট চাষ এবং পাটশিল্প প্রক্রিয়াকরণ, আঁশ বাঁধাই, গুদামজাতকরণ, স্থানান্তর ও বিপণনের সাথে জড়িত। পাটের আঁশ পচার পর আঁশ ছাড়ানো, ধোয়া ও শুকানো কাজে কৃষক পরিবারের মহিলা সদস্যদের ও অবদান রয়েছে।

পাটের আঁশ বিক্রির টাকা গ্রামীণ অর্থিনীতিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে সামাজিক উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, কুটির শিল্প, নারী উদ্যোক্তা, নারীর ক্ষমতায়ন, গ্রামের আধুনিকায়ন, অর্থনীতি শক্তিশালীকরণ পাটের উপর নির্ভরশীল। এছাড়া পাটকে বহুগুণী ফসলও বলা হয়। পাট মাটির উর্বরতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। কিছু জনগোষ্ঠীর পুষ্টি চাহিদা মিটাতে সক্ষম এই পাট।

পাট পরিবেশবান্ধব বহুমুখী ব্যবহারযোগ্য আঁশ। পাটের আঁশের প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে অন্য অনেক আঁশের সাথে মিশ্রণ করে ব্যবহার করা যায় অনায়াসে। এজন্য পাটের আঁশ প্রচলিত বয়ন শিল্পে সুতা, পাকানো সুতা, বস্তা, চট, পর্দার কাপড়, কুশন কভার, কার্পেট, কুটিরশিল্প, ঘরোয়া উপকরণ তৈরিতে পাটের অবদান রয়েছে। গরম কাপড়সহ বিভিন্ন ধরনের কাপড় তৈরির জন্য উলের সাথে মিশানো হয় পাট আঁশ। কৃষিপণ্যের মোড়ক, অন্যান্য দ্রব্যাদি বস্তাবন্দি ও প্যাকিং করার জন্য ব্যাপকভাবে পাট ব্যবহার করা হয় ।

পাট একটি পরিবেশবান্ধব বস্তু। এজন্য সরকার ২০১০ সালে সরকার পাটজাত মোড়কের ব্যবহার বাধ্যতামূলক। বর্তমানে মোট ১৭টি পণ্যে পাটজাত মোড়ক ব্যবহার করা হচ্ছে। বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে পাট পণ্যের চাহিদা প্রায় ৭.৫০ লাখ মেট্রিক টন এবং এর মধ্যে যা বাংলাদেশ রপ্তানি করে ৪.৬০ লাখ মেট্রিক টন। যা প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকেও বেশি। পাট থেকে উন্নতমানের ভিসকস সুতা উৎপাদন হয়। যার সুতি কাপড় থেকে ও বাজার মূল্য বেশি। বর্তমানে পাট থেকে তৈরী হচ্ছে চা। পাটখড়ি জ্বালানির প্রধান উৎস হলে গত কয়েক বছর ধরে পাটখড়ির চারকোল বিদেশে রফতানি হচ্ছে আয় হচ্ছে হাজার কোটি টাকা।

পাট বাংলাদেশের ঐতিহ্য। দেশের মোট বৈদেশিক মুদ্রার প্রায় ৩ শতাংশ পাট থেকে আসে এবং দেশের জিডিপিতে এর অবদান প্রায় শতকরা ৩ ভাগ। বর্তমান সরকার পাটের উৎপাদন বৃদ্ধিতে বিভিন্ন রকমের পদক্ষেপ নিয়েছে। এজন্যই পাট ও পাটজাত দ্রব্য আবার আশার আলো দেখছে। সুদিন ফিরবে আবার এই অর্থকরী ফসলে। সরকারের উদ্যোগে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় ২০১৬ সাল থেকে প্রতি বছর পাটজাত দ্রব্যের একটি সুসজ্জিত প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ করা হয়। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় বিকাশ ঘটছে পাট ভিত্তিক কলকারখানার। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গোড়ার লক্ষ্যে পাটের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে দিতে বর্তমান সরকার প্রস্তুত।


ট্যাগস

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top