নারী ক্ষমতায়নে বাংলাদেশের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত

S M Ashraful Azom
নারী ক্ষমতায়নে বাংলাদেশের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত

সেবা ডেস্ক:  বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর’- আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল নারী ও পুরুষকে এভাবেই দেখেছেন। তবে বাংলাদেশের কর্মসংস্থানে বাংলাদেশের নারীরা কবির প্রত্যাশার চেয়ে অনেক বেশি করে ফেলেছেন।

নারী একদিন নিজেরাই ছিলেন অসহায়, অন্যের বোঝা। আর আজ তারাই স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি আত্মপ্রকাশ করেছেন উদ্যোক্তা হিসেবে। অন্যের কর্মসংস্থান তৈরি করেছেন। পরিবার ও সমাজে সম্মানিত নারী হিসেবে মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকছেন।

নারী ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ বর্তমানে অনন্য পর্যায়ে অবস্থান করছে। প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী নেত্রী, জাতীয় সংসদের স্পিকার থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পদে নারী। দিন দিন কর্মক্ষেত্রে দেশের নারীদের অবদান লক্ষণীয় মাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছে। কর্মসংস্থানের সংখ্যাগত দিক থেকে নারীর অংশগ্রহণ পুরুষদের তুলনায় বাড়ছে চার গুণেরও বেশি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ‍ব্যুরোর হিসাব মতে- দেশে প্রতি বছর নারীদের কর্মসংস্থানের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ছয় শতাংশ হারে। পুরুষের কর্মসংস্থান বৃদ্ধির হার দেড় শতাংশ। গত ১১ বছরে দেশের কর্মক্ষেত্রে নিয়োজিত নারীর সংখ্যা ৭৩ লাখ ৫০ হাজার জন।

এক সময় নারী শুধু সংসারের কাজেই নিজেকে নিয়োজিত রাখতো। ঘরের গণ্ডি পেরোতে পারতো না। সেই নারীরা এখন হচ্ছে উদ্যোক্তা। নিজেদের কাজের পাশাপাশি অন্যের কাজেরও সুযোগ করে দিচ্ছে তারা। আজ তারা প্রেরণা হয়ে দাঁড়িয়েছে অনেক নারীর। গ্রামবাংলার নারীদের হাত ধরে আমাদের দেশের ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প আজ জায়গা করে নিয়েছে বিশ্ব দরবারে।

‘৯০ দশকের পর থেকেই নারী অগ্রগতির শুরু বাংলাদেশে। পরের দশক থেকে গতিটা আরও বেড়ে যায়। এরই মধ্যে মাধ্যমিক পর্যন্ত শিক্ষায় মেয়েরা ছাড়িয়ে গেছে ছেলেদের আর উচ্চ মাধ্যমিকেও মেয়েরা ছেলেদের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে নারী কর্মসংস্থান ছিল এক কোটি ১৩ লাখের মতো। আর ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জরিপে এই সংখ্যাটি বেড়ে হয় এক কোটি ৮৬ লাখ ৫০ হাজার জন।

নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ বিশ্বের এক বিস্ময়ের নাম। রক্ষণশীল বাঙালি সমাজে তিন দশক আগে কল্পনা করা না গেলেও এখন বিচারক, সচিব, সেনা কর্মকর্তা, প্যারাট্রুপার, বিজিবির সৈনিক, পুলিশের এসপি, ট্রাফিক সার্জেন্টসহ সব ক্ষেত্রেই নারীর পদচারণা রয়েছে। লিঙ্গ বৈষম্য দূর করতে বাংলাদেশের অগ্রগতিতে প্রশংসায় পঞ্চমুখ এখন সারা বিশ্ব। জাতিসংঘও বাংলাদেশকে এখন উদাহরণ হিসেবে মানে। তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে নারীরাও এগিয়ে যাচ্ছে। ঘরে বসেই ই-কমার্স ব্যবহার করে অবদান রাখছে ব্যবসা বাণিজ্যে।

নারীদের কর্মসংস্থান হয়েছে গণপরিবহন খাতেও। বাস চালকের আসনে চলতি বছরই প্রথম নারীদের দেখা গেছে। পুরুষের চাইতে নারীদের ধৈর্য ক্ষমতা বেশি। নারীরা অনেক সময় ধরে একটা কাজ করতে পারে।

২০১৬-১৭ অর্থবছরে কৃষিতে নারী শ্রমিক কমেছে প্রায় ৮২ হাজার। এসময়ে নারী উপস্থিতি বেড়েছে শিল্প ও সেবা খাতে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে শিল্প খাতে নারী কর্মসংস্থান বেড়েছে দুই লাখ ৮৪ হাজার। সেবা খাতে বেড়েছে ছয় লাখ ৭৪ হাজার। ২০১৭ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের উচ্চপদেও নারীর কর্মসংস্থান হয়েছে চোখে পড়ার মতো। ৩৬তম বিসিএস পরীক্ষায় সারাদেশ থেকে অংশ নিয়েছিল দুই লাখ ১১ হাজার ২৮২ জন। যার এক তৃতীয়াংশ নারী।

নারী ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ বিশ্বে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। দক্ষিণ এশিয়ায় দিক থেকে নারী ক্ষমতায়নে অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশ এগিয়ে আছে। ঘরে-বাহিরে আজ নারীরা কাজ করছে সমান তালে। দেশ থেকে দূর হয়েছে লিঙ্গ বৈষম্য। এজন্যই দেশের নারীরা আজ এগিয়ে যাচ্ছে দুর্নিবার গতিতে।



#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top