জামালপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদের সংক্ষিপ্ত জীবনী

S M Ashraful Azom
জামালপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদের সংক্ষিপ্ত জীবনী
জামালপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ


সেবা ডেস্ক: আবুল কালাম আজাদ ১৯৩৯ সালের পহেলা মার্চ জামালপুর জেলার বকশীগঞ্জ উপজেলাধীন খেওয়ারচর উজান গ্রামের সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মরহুম সৈয়দুর রহমান এবং মাতা আলহাজ মরহুমা ছামিরন নেছা। ৮ ভাই ও ৪ বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়।

আবুল কালাম আজাদ ময়মনসিংহ জেলার গৌরিপুর রাজেন্দ্র কিশোর হাই স্কুল হতে ১৯৫৬ সালে ম্যাট্রিক এবং আনন্দমোহন কলেজ থেকে ১৯৫৮ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পর ১৯৬১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে রাষ্ট্র বিজ্ঞানে বি,এ(অর্নাস)ডিগ্রী অর্জন করেন,১৯৬৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্র বিজ্ঞানে এম এ ডিগ্রি অর্জন করেন এবং ১৯৭২ সালে ঢাকা সেন্ট্রাল ল’ কলেজ থেকে এল,এল,বি ডিগ্রি অর্জন করেন।


আবুল কালাম আজাদ ১৯৬৩ সালে প্রথম তদানিন্তন পূর্ব পাকিস্তান ওয়াটার এন্ড পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট অথরিটিতে কর্মকর্তা হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৬৯ সালে পূর্ব পাকিস্তান ওয়াপদা বিভক্ত হওয়ায় তিনি পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের অধীনে ন্যস্ত হন। তিনি এখান থেকে ১৯৭৫ সালে কলেরা রিসার্চ ল্যাবরেটরি ঢাকায় লিঁয়াজো প্রধান হিসেবে যোগদান করেন।

একই প্রতিষ্ঠানে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত পারসনাল ম্যানেজমেন্ট ব্রাঞ্চের প্রধান ও প্রশাসনিক উপ-প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে কলেরা রিসার্চ ল্যাবরেটরি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান/সংস্থা আই,সি,ডিডি,আর,বি(ICDDRB) হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। তিনি সেখানে পারসনাল ম্যানেজমেন্টের প্রধান এবং জনসংযোগ ও তথ্য কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৯১ সালের ১২ জানুয়ারি আইসিডিডিআরবি থেকে স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ করেন।

আবুল কালাম আজাদ ১৯৫৪ সাল থেকে ছাত্র রাজনীতির সহিত জড়িত ছিলেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নকালে ছাত্র রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৫৯ ও ৬০ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সলিমুল্লাহ মুসলিম হল ছাত্রলীগের হল শাখার সভাপতি ছিলেন। ডাকসুর নির্বাচনে ১৯৬১ ও ৬২ সালে সলিমুল্লাহ মুসলিম হল সংসদের প্রতিনিধি নির্বাচিত হন এবং ড্রামা ও এন্টারটেইনমেন্ট সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ঐ সময় হামিদূর রহমান শিক্ষা কমিশন রিপোর্টের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে ১৯৬২ সালে কারাবরণ করেন। তিনি ১৯৬৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সলিমুল্লাহ মুসলিম হল ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

আবুল কালাম আজাদ ১৯৯১ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে প্রথমবার জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পুনরায় ১৯৯৬ সালে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে তিনি তথ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান, সংসদীয় সরকারি হিসাব সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং সংসদীয় সরকারি প্রতিষ্ঠান কমিটির সদস্য ছিলেন। এছাড়াও জাতীয় সংসদের প্যানেল স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন।

আবুল কালাম আজাদ ১৯৮২ সালে মুম্বাই, ইন্ডিয়ায় ৯ম বিশ্ব জনসংযোগ কংগ্রেসে, ১৯৮৫ সালে আমস্টার্ডাম, নেদারল্যান্ডে ১০ম বিশ্ব জনসংযোগ কংগ্রেসে, ১৯৮৮ সালে অস্ট্রেলিয়ায় ১১তম বিশ্ব জনসংযোগ কংগ্রেসে যোগদান, ১৯৯৩ সালে নমপেন, কম্বডিয়াতে জাতীয় গণতান্ত্রিক ইন্সটিটিউট কর্তৃক পরিচালিত আন্তর্জাতিক সংসদীয় সেমিনারে, ১৯৯৬ সালে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন এবং ইউএস কংগ্রেসের ভূমিকা পর্যবেক্ষণে ইউএস ইনফরমেশন এজেন্সির ইন্টারন্যাশনাল ভিজিটর প্রোগ্রামে সেদেশে বিভিন্ন স্টেটে পর্যবেক্ষক হিসেবে এবং ১৯৯৭ সালে সার্ক সম্মেলনে ভারতে পাবলিক একাউন্সের স্থায়ী কমিটির সভায় যোগদান করেন।

 তিনি ১৯৭০ সাল থেকে জাতীয় প্রেসক্লাব ঢাকার অ্যাসোসিয়েট সদস্য এবং ১৯৮০ সাল থেকে ঢাকা ক্লাব লিমিটেডের সদস্য। তিনি ১৯৮৪ও ৮৫ এবং ১৯৮৬ ও ৮৭ সালে বাংলাদেশ জনসংযোগ সমিতির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি আইসিডিডিআরবি-এর স্টাফ ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের প্রাক্তন সভাপতি, ওয়াটার এন্ড পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড অফিসার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এবং আন্তর্জাতিক জনসংযোগ সমিতির ন্যাশনাল কো-অর্ডিনেটর ছিলেন।

 তিনি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া,কম্বডিয়া, ফ্রান্স, জেনেভা, নেদারল্যান্ডস,সুইজারল্যান্ড, মিশর, ত্রিনিদাদ ও টোবাগো, নেপাল, সৌদি আরব, দুবাই, মাকাও, বাহরাইন, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, হংকং ও ভারত ভ্রমণ করেছেন। খেলাধুলা হিসেবে সব খেলাই তাঁর পছন্দ। তবে ক্রিকেট ও ফুটবল তার সবচেয়ে প্রিয় খেলা। 

তিনি এলাকায় উন্নয়ন কার্যক্রম হিসেবে রাস্তা, ব্রিজ, কালভার্ট, বিদ্যুৎ, হাসপাতাল, স্কুল-কলেজ ভবন নির্মাণ, মসজিদ, মাদ্রাসার উন্নয়নে আর্থিক অনুদানসহ সার্বিক উন্নয়নে অসামান্য অবদান রেখেছেন।

আবুল কালাম আজাদ ১৯৬৫ সালের ৩ ডিসেম্বর কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দির এক সম্ভ্রান্ত পরিবারের মরহুম সুলতান আহমেদ চৌধুরীর মেয়ে আনোয়ারার সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তিনি বঙ্গবন্ধু পরিবারের শেখ সেলিমের ভাইরা ভাই। এম,পি অাবুল কালাম অাজাদ এক ছেলে ও এক কন্যার জনক।

আবুল কালাম আজাদ ১৯৯১ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৩৮-জামালপুর-১, দেওয়ানগঞ্জ - বকশীগঞ্জ নির্বাচনি এলাকা থেকে ৪ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং ২০০৮ সালের ২৯ শে ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী নিযুক্ত হন। বর্তমানে(২০১৪ থেকে) তিনি পরিকল্পনা মন্ত্রনালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন।

লেখক: ইসমাইল হোসেন সিরাজী



#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top