আব্দুল জলিল: নিজে পড়ালেখার সুযোগ পায়নি। স্কুলে যাবার বয়সে পেটের জ্বালা মেটাতে নামতে হয়েছে কাজের খোঁজে। যমুনার উত্তাল তরঙ্গরাশির তীব্রতার সাথে তার ভাগ্যের ব্যারোমিটার ওঠানামা করেছে ছন্দহীন তালে। একসময় যমুনার সংহার মূর্তিই তাকে সামনে চলার পথ দেখায়। ঝঞ্ঝা বিক্ষুব্ধ জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত তার কাছে সোনালি জীবনের ঈঙ্গিত। নিজের সন্তানদের জীবনে সোনালির ছোঁয়া আনতে তিনি কার্পণ্যহীন। সেই সকালে সোনা রোদ গায়ে মেখে ঘোড়ার সাথে গাড়ি জুড়ে বেরিয়ে পড়া। আর প্রতিদিনের পড়ন্ত বিকেলের মিষ্টি আভায় তার ছুটি।
তিনি
একজন
দুলাল
মিয়া।
কাজীপুরের
নাটুয়ারপাড়া
চরের
ঘোড়ার
গাড়ি
চালক। দুলাল মিয়ার ৪৫ বসন্তের প্রতিটি
মুহূর্ত
চার
সন্তানের
নিরাপদ
নিবাস
গড়ার
স্বপ্ন
বুনণে
পেরিয়ে
যায়।
সেই
স্বপ্নের
খেয়ায়
ভেসে
কখনো
উত্তরে
কখনওবা
দক্ষিনের
বালুকাময়
পথে
ছুটে
চলে
তার
ঘোড়ার
গাড়ী।
বিশ্রাম
নেই
প্রচন্ড
শীতে,
চৈত্রের
দাবদাহে,
বর্ষার
বৃষ্টিতে
কিংবা
ভারী
কুয়াশার
ভোরে।
যাত্রীদের
সেবা
দিতে
হেঁটে
চলেন
ঘোড়ার
সমান্তরালে।
থামলে
চলবে
কেন?
দুলাল
মিয়া
এই
পৃথিবীর
উপোসী
রূপটা
দেখেছে
অনেকবার।
দেখেছে
অযূত
অসুখে
ওধুষ-পথ্যহীন
জীবনের
পরিসমাপ্তি।
সব
কিছুই
তাকে
ঘোড়ার
লাগামে
নিজেকে
সঁপে
সামনের
পথে
দৌড়াতে
অনুপ্রেরণা
যোগায়।
তাইতো
নিত্যদিন
অবিরাম
পথচলা।
এই
চলায়
তিনি
পেয়েছেন
বর্তমান
সরকারের
উন্নয়ন
নীতিমালায়
তৈরি
পাকা
রাস্তা।
১৯৮৮ সালের মাঝামাঝি।
ভয়াবহ বন্যায় দুলালদের
চরগিরিশের
ঘরবাড়ি
যমুনার
পেটে
চালান
হয়ে
যায়।
সেই
সাথে
বাপ-দাদার কবরসহ ভিটে-মাটি সব। একেবারে
নিরক্ষর
কৃষক
পরিবারের
দুলাল
সংসারে
একা।
তখন
কতইবা
বয়স
তার।
কিন্তু
সেসব
ভাবার
সময়ই
মিললোনা
তার।
যমুনা
তার
সব
নিয়ে
উপহার
দিয়েছে
একরাশ
হতাশা
আর
দীর্ঘশ্বাস।
বেঁচে
থাকার
অন্যতম
শর্ত
পূরণে
খাবারের
সংস্থানে
কাজের
জন্য
জানবাজি
রেখে
রাত-দিন ছুটে চলা। প্রতিবেশী
জসিম
শেখ,
কানু
মিয়া,
টুক,
জহুরুল,
বাদশা,আলমদের
দেখাদেখি
একদিন
সে
চরের
মানুষের
যাতায়াতকে
আরামদায়ক
করতে
ঘোড়ায়
টানা
গাড়িতে
মানুষজন
বহনের
পাশাপাশি
নিজের
ভাগ্যের
চাকাও
বইতে
শুরু
করলো।
অন্যদের
মতো
তারও
হাতে
জমতে
শুরু
করে
টাকা-কড়ি।
এরপর
জীবনের
প্রয়োজনে
দুলাল
মিয়ার
ঘরে
এলো
স্ত্রী।
বছর
ঘুরতেই
প্রকৃতির
উপহার
আদুরি
নামের
এক
কন্যা।
এক
বছর
পরপর
আরো
তিনটি
কন্যা
শিশুর
মুখ
দেখলো
দুলাল-রেহানা
দম্পতি।
আদুরির
বয়স
এখন
বার।
রেহাইশুড়িবেড়
প্রাথমিক
বিদ্যালয়ের
৪র্থ
শ্রেণির
ছাত্রী।
এর
পরেরটা
দ্বিতীয়
শ্রেণিতে।
আর
দুটো
স্কুল
মুখো
হবার
অপেক্ষায়।
তার
৪৫
হাজার টাকায় কেনা গাড়ি নাটুয়ারপাড়া, রেহাইশুড়িবেড়,
পানাগাড়ি,
তেকানি,
জজিরা,
রূপসা,
গোয়ালবাথান,
নিশ্চিন্তপুরসহ
চরের
নানাস্থানে
ছুটে
চলে।
দিনের
উপার্জন
মন্দ
নয়।
প্রতি
কিলোমিটারে
একসাথে
পাঁচজন
যাত্রির
ভাড়া
একশ
টাকা।
খারাপ
আবহাওয়া,
বন্যা-বর্ষায়
একই
রকম
উপার্জন
হয়না।
সারাদিনের
আয়
প্রায়
এক
হাজার
থেকে
দেড়
হাজার
টাকা।
এর
মধ্যে
ঘোড়ার
জন্য
খইল,
ভূষি,
ঘাস,
নালী
কিনতে
ব্যয়
হয়
দুই
থেকে
আড়াইশ
টাকা।
বাকি
টাকায়
পাঁচ
সদস্যের
পরিবারের
দিন
ভালই
চলছে।
খরচা
বাদে
কিছু
টাকা
জমিয়ে
রাখছে
সন্তানদের
ভবিষ্যৎ
নির্মাণের
জন্য।
নাটুয়ারপাড়া
যমুনা
ঘাট
থেকে
আমিনা
দৌলতজামান
মানবসেবা
হাসপাতালের
পথে
যেতে
ঘোড়ার
গাড়িতে
বসে
কথা
হয়
দুলাল
মিয়ার
সাথে।
তিনি
জানান,
এই
পেশার
সবাই
মিলে
একটা
সমিতি
গড়ে
তুলেছেন।
সেখানে
জমা
রাখেন সপ্তাহে একশ করে টাকা। একটা নির্দিষ্ট সময় পরে সেই টাকা দিয়ে আরেকটি
গাড়ি
করে
ভাড়া
দেবেন।
চরের
মানুষের
যাতায়াতের
জন্য
আরো
বেশকিছু
ঘোড়ার
গাড়ির
দরকার
বলে
জানান
তিনি।
এরই
মধ্যে
গাড়ি
কেনার
সময়ে
করা
ধার-দেনা পরিশোধ
করেছেন।
মেয়েদেরকে
পড়ানোর
পাশাপাশি
বাড়িঘর
সাজিয়েছেন
নতুন
করে।
প্রতিদিন
খরচা
বাদে
কিছু
টাকা
করে
ঘরেও
সঞ্চয়
করেন।
এমনি
করে
দুলাল
মিয়ার
জীবন
এখন
পরিবর্তনমুখি।
দুলাল
মিয়ার
ইচ্ছে
মেয়েরা
উচ্চ
শিক্ষিত
হবে।
এ
পেশার
পরিবর্তন
আসবে।
জীবনে
আসবে
একটি
সুন্দর
আগামী।
কারো
কাছে
হাত
না
পেতে
সৎ
উপার্জনে
জীবনের
বাকি
দিনগুলো
পার
করতে
চান
দুলাল
মিয়া।
অতিতের
সমস্ত
গ্লানি
ভুলে
স্মৃতিময়
পৃথিবীতে
রেখে
যেতে
চান
নিজের
কিছু
সুখস্মৃতি।
⇘সংবাদদাতা: আব্দুল জলিল
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।