শিশুটিকে খাওয়ানো সেই তরুণীটি ছিল পুলিশ !

S M Ashraful Azom
0
শিশুটিকে খাওয়ানো সেই তরুণীটি ছিল পুলিশ !

গোলাম মোর্তবা রিজু, রাজবাড়ী প্রতিনিধি: বিভিন্ন সময়ে আলোচনা-সমালোচনায় পুলিশের খারাপ দিকগুলোই বেশি মুখরোচক হয়ে ওঠে আমাদের। পুলিশ যে জনগণের বন্ধু, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় নিরলসভাবে কাজ করার পাশাপাশি তারা যে মানবিক কাজের ক্ষেত্রেও দৃষ্টান্ত সেটি আমরা ভুলে যাই। দু-একজনের অপকর্মে পুরো পুলিশ বাহিনীকে সমালোচনায় বিদ্ধ করতে কিঞ্চিত ছাড় দেই না আমরা। তবে পুলিশ বিভাগে এমনও মানুষ আছে যাদের দেখলে মনেই হয় না তারা পুলিশ। যারা সাধারণ মানুষকে পেশাগত দায়িত্বের পাশাপাশি সহযোগিতার মতো মানবিক কাজগুলোও নৈতিক দায়িত্ব বলে মনে করেন।

তখন সময় রাত ৮টার মতো, শনিবার। থানায় পেশাগত কাজে পুলিশ পরিদর্শক ওবায়দুল হকের কক্ষে প্রবেশ করি। সাংবাদিকতার পাশাপাশি মোটামুটি কম্পিউটারে দক্ষতা থাকায় পুলিশ পরিদর্শক পাশের চেয়ারে বসিয়ে কিছু বুঝে নিচ্ছিলেন। চোখে পড়ল সেই শিশুটিকে যে গত শনিবার জামালপুর ইউনিয়নের হাতিমোহন গ্রামের বাড়ীতে ভিরু চোখে কিছু কথা বলেছিলো আমাকে। তার পাশেই বসে রয়েছে আমার অপরিচিত এক তরুণী। ওই তরুণী শিশুটিকে কিছু একটা খাইয়ে দিচ্ছিল।

কাজের পাশাপাশি তরুনীকে প্রশ্ন করলাম শিশুটি আপনার কি হয় ? সে উত্তরে বলল কিছু না, না ! কোন ভাবেই অংকটা মিলছিল না, কোন সম্পর্ক না থাকলে এমন নিবিড় সম্পর্ক হয় কি করে ? আত্মীয় হবে সম্ভবত, মেয়েটি আমাকে মিথ্যা বলেছে। কিছু সময় পরই থানার এসআই নুর মোহাম্মদ খোঁজ নিল শিশুটির জন্য আর কোন খাবার বা কোন কিছু লাগবে কি না, মাঝে মাঝে পুলিশ পরিদর্শক ওবায়দুল হক শিশুটির সাথে বন্ধু সুলভ কথা বলছিল।

ঘন্টা কেটে যায়, কাজ শেষ হলেও বসে ছিলাম অংকটা মিলানোর জন্য, হচ্ছে টা কি ? একবার তরুনীর দিকে,  একবার শিশুটির দিকে মনে হচ্ছিল আপন বোন বা খুব নিকট আত্মীয়। কোন এক সময় টিভিতে চলা গানের সাথে সুরও মিলাচ্ছিল শিশু ও তরুণীটি। শিশুটিকে তো অনেক ভয়ে থাকার কথা, তাহলে ও এত স্বাভাবিক কি করে ? দীর্ঘ সময়েও অংক মিলল না চলে গেলাম বাসায়। বাসায় এসে শুতে গিয়েও ভাবনা পিছু ছাড়ছে না শিশুটির তো আতংকে থাকার কথা তাহলে কিভাবে ও স্বাভাবিক ওই তরুনীর সাথে রয়েছে ! বা তরুণীটি বা কে ?

রবিবার সকালে আবার ছুটে গেলাম থানায়। সেই কক্ষেই বসে আছে দু’জন এবার তারা দু’জনই সকালের নাস্তা পরাটা খাচ্ছিল। তরুনী শিশুটিকে খাওয়াচ্ছে আবার মাঝে মাঝে নিজেও কিছুটা নিচ্ছে। দীর্ঘসময় পর তরুণীর কাছে সেই প্রশ্ন আমার কি হয় শিশুটি ? তখন পুলিশ পরিদর্শক ওবায়দুল হক বলল মাসুদ ভাই আপনি তাকে চেনেন না সে তো থানার পুলিশ। আমি রীতিমত হতভম্ব, আশ্চার্য্যও বটে, কিভাবে সম্ভব ! শিশুটিকে এত কাছের করল কি করে ?

কারণ ওই শিশুটি ছিল জামালপুর বসতঘরে খুন হওয়া বৃদ্ধার ১০ বছরের নাতনী পরশিয়া, তার মায়ের সাথে তাকেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসা হয়েছে শনিবার দুপুরে, আর তরুণীটি ছিল বালিয়াকান্দি থানার কনষ্টেবল।

কথাগুলো যার সম্পর্কে বলছিলাম তিনি হলেন, বালিয়াকান্দি থানার কনষ্টেবল হাসনা খানম। শিশুটি সম্পর্কে তার সাথে কথা হয় এই প্রতিবেদকের তিনি জানান, পরশিয়া ভাল একটি মেয়ে, কয়েক ঘন্টার পরিচয়ে শিশুটি বুঝতেই পারেনি ও থানায় আছে, তার পরিবার থেকে আলাদা রয়েছে। আর আমি যা করেছি আমার পেশাগত দায়িত্ব আর একজন মানুষ হিসেবে যতটুকু করার করেছি। রবিবার শিশুটিকে আদালত থেকে তার ভাইয়ের হেফাজতে দেওয়া হয়েছে, ও যখন চলে যায় তখন খুবই খারাপ লাগছিল আমার, তারপরও কিছু করা নেই এটাই বাস্তবতা। তবে একজন পুলিশ হিসেবে মানবিকতার দৃষ্টান্ত রেখেছেন বললে সেটি মানতে নারাজ হাসনা খানম।

পুলিশ পরিদর্শক ওবায়দুল হক বলেন, ‘শিশুর প্রতি হাসনা খানমের ব্যবহার দেখে আমি আশ্চার্য্য, ক্ষনিক সময়ে তাদের দু’জনের যে সম্পর্ক তৈরী হয়েছিল তাতে আমিও বিস্মিত, শিশুটির প্রতি হাসনা খানমের ভালবাসা আমাকেও অনেক ভাবিয়েছে।

বালিয়াকান্দি থানার ওসি একেএম আজমল হুদা বলেন, শুধু পেশাগত দিক নয়, দায়িত্ববোধ এবং মানবিকতার সর্বোচ্চ টুকু দিয়ে কাজ করার চেষ্টা করছি আমরা। একজন নারী কিংবা কোন শিশু কোন ভাবেই যেন বুঝতে না পারে আমি থানায় এসেছি।


⇘সংবাদদাতা: গোলাম মোর্তবা রিজু
ট্যাগস

Post a Comment

0Comments

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

Post a Comment (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top