ঘাটাইলের নির্বাচনী মাঠ আ.লীগের দখলে, আসন পুনরুদ্ধারে মরিয়া বিএনপি

S M Ashraful Azom
0
ঘাটাইলের নির্বাচনী মাঠ আ.লীগের দখলে, আসন পুনরুদ্ধারে মরিয়া বিএনপি

ঘাটাইল প্রতিনিধি: আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) সংসদীয় আসনে ব্যাপক গনসংযোগে মাঠ দখলে রেখেছে আওয়ামী লীগ। বিপরীত দিকে বিএনপির বহুল বা দৃশ্যমান কোন কার্যক্রম দেখা যাচ্ছে না বললেই চলে। তবে উভয় দলের প্রার্থী ও নেতাকর্মীরা তাদের পক্ষে ভোট আনার কার্যক্রম সাধ্যমতো পরিচালনা করে যাচ্ছেন।

জানা যায়, অতীতে স্থানীয় আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীন কোন্দল থাকলেও আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আলহাজ্ব আতাউর রহমান খান মনোনয়ন পাওয়ায় সকল ক্ষোভ ও অভিমান ভেঙ্গে সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে নৌকাকে বিজয়ী করার লক্ষ্যে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। আওয়ামী লীগের সকল মনোনয়ন প্রত্যাশী ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ একাত্মতা প্রকাশ করে রাতদিন নৌকার পক্ষে মিছিল মিটিং ও উঠান বৈঠক করে গনসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন।

এদিকে বিএনপি প্রার্থী লুৎফর রহমান খান আজাদের পক্ষে দৃশ্যমান তেমন কোন নির্বাচনী কার্যক্রম পরিলক্ষিত হচ্ছে না। কোথাও কোথাও প্রচারণায় বাঁধা দেওয়ার অভিযোগের কথাও শোনা যাচ্ছে। এমনকি গত শুক্রবার (১৪ ডিসেম্বর) সন্ধায় ঘাটাইল উপজেলার দেউলাবাড়ী ইউনিয়নের পাকুটিয়া বাসষ্ট্যান্ডে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাকর্মীরা নির্বাচনী মিছিলকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এতে উভয় পক্ষের কয়েকজন নেতা-কর্মী আহত হন।

প্রচারনার শুরু থেকেই নৌকার প্রার্থী এ আসনের বিভিন্ন গ্রামগঞ্জে হাট বাজারে গনসংযোগে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন। এরই মধ্যে প্রতিটি ইউনিটে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের মধ্যে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করার মাধ্যমে নেতাকর্মীদের নির্বাচনে উৎফুল্য ও চাঙ্গা রেখেছেন। বিভিন্ন ধর্মীয় সভা ওয়াজ মাহফিল ও পূজা মন্ডপগুলোতে যোগ দিয়ে বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটারদের কাছে ভোট প্রার্থনা করে যাচ্ছেন।

অপরদিকে ধানের শীষে প্রচারণার মাঠে দেখা যাচ্ছে বিএনপি প্রার্থীকে। কিন্তু ঘাটাইলের নির্বাচনী এলাকায় ধানের শীষের কোন পোস্টার, ব্যানার, লিফলেট চোখে পড়ার মতো নয়। এমনকি শুরুতে মাইকিং এর কার্যক্রম থাকলেও বর্তমানে তা শোনা যাচ্ছে না। যেন নিরব থেকে অবশ্যম্ভাবী এক ভোট বিপ্লব ঘটানোর পরিকল্পনায় মেতেছেন ঘাটাইল বিএনপি নেতাকর্মীরা।

নৌকার প্রার্থী আতাউর রহমান খান একজন ক্লিন ইমেজের লোক হওয়ায় তার আচরণ ও জনপ্রিয়তায় মুগ্ধ হয়ে বিএনপির কিছু নেতাকর্মী তার হাত ধরে আওয়ামী লীগে যোগ দিচ্ছেন এমনটা শোনা যাচ্ছে। গত ১৪ ডিসেম্বর (শুক্রবার) ঘাটাইল উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বুলবুল ভূইয়ার ছেলে লিঠু ভূইয়া অসংখ্য নেতাকর্মীসহ আওয়ামী লীগে যোগদান করেছেন।

বিএনপি প্রার্থী, খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা লুৎফর রহমান খান আজাদ ইতোপূর্বে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় প্রয়াত নেতা শামসুর রহমান খানকে বিপুল ভোটে পরাজিত করে চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। পরে তিনি কয়েকটি মন্ত্রনালয়ে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেন এবং এলাকার কিছু উন্নয়ন কার্যক্রমে তার বিশেষ অবদান রয়েছে। এতে করে ঘাটাইলের সর্বস্তরের জনগণের মধ্যে তার বেশ গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। সব মিলিয়ে এবারও তাকে জনগণ ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবে বলে মনে করেন বিএনপি নেতাকর্মী ও সমর্থকরা।

এই আসনের সাধারণ ভোটারদের সাথে কথা বলে জানা যায়, নৌকার প্রার্থী আতাউর রহমান খানের ছেলে বর্তমান স্থানীয় সংসদ সদস্য হত্যা মামলায় কারান্তরিন আমানুর রহমান খান রানা এলাকায় ব্যাপক জনপ্রিয়। সেই জনপ্রিয়তা ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ হয়ে একট্টা হওয়ায় ভোটের মাঠে অনেক এগিয়ে থাকবে নৌকা। এমপি রানার জনপ্রিয়তার কথা দলীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গত ২০ ডিসেম্বর বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার বরাত দিয়ে প্রকাশ্য বলেন।

বিএনপি সমর্থকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ধানের শীষের প্রার্থী লুৎফর রহমান খান আজাদ ঘাটাইলের জনগণের মাঝে খুবই জনপ্রিয়। ঘাটাইলের নানা উন্নয়ন কার্যক্রমের জন্য ঘাটাইলবাসী তার কাছে কৃতজ্ঞ। এবারও দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ভোটাররা ধানের শীষ প্রার্থীকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করবে। তারা জানান, খালেদা জিয়া জেলে থাকায় নির্বাচনী কার্যক্রম চালাতে কিছুটা অসুবিধার সন্মুখিন হতে হচ্ছে, তবে সব সমস্যা উপেক্ষা করে ধানের শীষ প্রতীকে ভোট বিপ্লব ঘটবে।

ঘাটাইল আসনে নৌকাকে বিজয়ী করতে একাত্মতা প্রকাশ করে মাঠে রয়েছেন নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশী উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম লেবু, ঘাটাইল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম খান সামু, সাবেক যুগ্ন-সাধারন সম্পাদক শহিদুল ইসলাম খান হেস্টিং, ঘাটাইল পৌর মেয়র শহিদুজ্জামান খান শহীদ, সাবেক মেয়র হাসান আলী মিয়া, উপজেলা ভাইস-চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আরিফ হোসেন সহ ঘাটাইল উপজেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ সহ অন্যান্য অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা ৷ একট্টা হওয়ায় অতীতের তুলনায় বর্তমানে ঘাটাইল উপজেলা আওয়ামী লীগ অনেক বেশি শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে বলে দাবি তাদের।

ধানের শীষ প্রতীককে বিজয়ী করতে মাঠে রয়েছেন সাবেক এমপি মোহন খান, জেলা বিএনপির কোষাধ্যক্ষ মাইনুল ইসলাম, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রার্থী সাবেক মেয়র আব্দুর রশিদ মিয়াসহ বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মহিলা দল, শ্রমিক দল, কৃষক দলের নেতাকর্মীরা। তারা সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে একাত্ম হয়ে ধানের শীষ বিজয়ী করে আসনটি পুনরুদ্ধার করতে বধ্য পরিকর। এছাড়া বিএনপি ও অন্যান্য অঙ্গ সংগঠনের উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে শক্তিশালী কমিটি রয়েছে। এই কমিটিগুলোর মাধ্যমে নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালনায় যথেষ্ট ফলপ্রসূ সুযোগ সুবিধা রয়েছে।

শেষ পর্যন্ত মাঠ দখলে রাখতে ও আসনটি নিজেদের করে রাখতে মরিয়া স্থানীয় আওয়ামী লীগ। বিএনপি নেতাকর্মীরাও চায় আসনটি পুনরুদ্ধার করে খালেদা জিয়াকে কারামুক্ত করা। পরিশেষে হাড্ডাহাড্ডি ভোট লড়াই আশা করছে সাধারণ ভোটাররা। পাশাপাশি সহিংসতা, ভোট দিতে না পারার আশঙ্কাও কাজ করছে ভোটারদের মধ্যে।

টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) অাসনে পৌরসভা ১টি, ইউনিয়ন ১৪টি, ভোট কেন্দ্র ১১৯টি, পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৫৮ হাজার ৭৭৭ জন, মহিলা ভোটার ১ লাখ ৫৯ হাজার ৭৬৯ জন, মোট ভোটার ৩ লাখ ১৮ হাজার ৫৪৬ জন।


⇘সংবাদদাতা: ঘাটাইল প্রতিনিধি

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top