ফুটবলার শফিকুল ইসলাম চৌধুরী

S M Ashraful Azom
0
ফুটবলার শফিকুল ইসলাম চৌধুরী
ফুটবল খেলোয়ার শফিকুল ইসলাম চৌধুরী 


মো. শাহ্ জামাল ॥ এক সময়ের সাড়াজাগানো ফুটবলার, অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্মকর্তা মো: শফিকুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার মালঞ্চ হাইস্কুল বর্তমানে এম.এ. গফুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। 

ছাত্রজীবনে ৯ম শ্রেণি থেকে ১৯৭৫ সালে ভিপি নির্বাচিত হন। পরের বছর ১০ম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়ে বিপুলভোটে জিএস নির্বাচিত হন। ৮০৯ ভোটের মধ্যে তিনি পান ৭৭৫ ভোট । তাঁর নিকটতম প্রতিদ্ধন্ধি ছিলেন-মামাভাগিনা গ্রামের রফিক উদ্দিন ভূইয়া। 

ওই বছরই কৃতিতের সাথে এসএসসি পাশ করেন। খেলোয়াড় কোঠায় শ্রেষ্ঠ ফুটবলার হিসেবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। তাঁর পূর্ন নাম শফিকুল ইসলাম চৌধুরী হলেও স্কুল জীবনে চৌধুরী হিসেবেই সবার পরিচিত মুখ। স্কুলজীবনে খেলা-ধুলায় তিনি শ্রেষ্ঠ ক্রীড়াবিদ তথা সেরা ফুটবলার পুরস্কার, ক্রেস্ট পান। ফুটবলের জগতে তিনি প্রেসিডেন্ট পদকও অর্জন করেন।

ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ স্টেডিয়াম মাঠে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিপক্ষে ফুটবল খেলে একাই ৭গোল করেন। তাঁর খেলার নৈপুণ্য দেখে তৎকালীন উচ্চ পদস্থ সেনাকর্মকর্তাদের নজর কাড়েন। একই সাথে খেলা-ধুলা কোঠায় চৌধুরীকে সেনাবাহিনীতে যোগদানের জন্য নিয়োগপত্র ইস্যু করেন। ঘটাকরেই সেনাবাহিনীতে চাঞ্চ পাওয়া তাঁর জীবনে একটা বড় সফলতা। এ ব্যাপারে তাঁর অনুভূতি ব্যক্ত করে বলেন-সেরা খেলোয়াড় হিসেবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে আমার চাকরী জীবন এক বর্ণিল, গর্বিত এবং শ্রেষ্ঠ জীবনের অধ্যায়। ১৯৯২ সালে সেনাবাহিনী থেকে অবসর গ্রহণ করি। একমাত্র খেলা-ধুলার জন্য সেনাবাহিনীতে সিপাহী থেকে ল্যান্স নায়েক (বর্তমান ল্যান্স কর্পোরাল থেকে কর্পোরাল) নায়েক পদোন্নতি হয়। অবসর জীবনে জামালপুর ত্রাণ ও পূণর্বাসন অফিসের ড্রাইভার হিসেবে কর্মরত আছি।

খেলার ও পড়ার সাথীদের মধ্যে বালুয়াটা গ্রামের ডা. মির্জা নজরুল ইসলাম বর্তমানে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, রেলওয়ের সহকারি প্রকৌশলী আজিজুল ইসলাম, বাংলাদেশ ব্যাংকের জাহাঙ্গীর আলম, নিরাপত্তা বাহিনীর হানিফ, ইসলামপুরের নরেশ বাবু, হামিদুল, খুরশেদ, ফুলকোচার ফুটবলার ছোট মন্টু, বড় মন্টু, নান্দিনার পাচু গাড়ো, সরিষাবাড়ি ভাটারার রেহান আলী মাস্টার, জালালপুরের মুক্তিযোদ্ধা মজিবুর রহমান ফারাজী, মালঞ্চ’র হানিফ, হেলাল, পোস্টমাস্টার জিয়াউল হকের কথা বেশী মনে পড়ে।

ছাত্রজীবনের স্মৃতি রোমন্থনে বলেন-মালঞ্চ স্কুলের প্রধান শিক্ষক খালেক স্যারকে খুব শ্রদ্ধা করতাম। ভয়ও করতাম। টেস্ট পরিক্ষা ফাঁকি দিয়ে সরিষাবাড়ি বাংলাদেশ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে টিম খেলতে যাই। খেলায় উত্তীর্ণ হই। সেরা খেলোয়াড় হিসেবে আমাকে সংবর্ধনা ও ক্রেস্ট দেয়া হয়। পরদিন টেস্ট পরিক্ষা দিতে গেলে আমাকে খালেক স্যার এলাও করলেন না। আমি হতাশ। শেষ পর্যন্ত আমাকে এসএসসি পরিক্ষায় অংশ গ্রহণের সুযোগ নাদিতে হেড স্যার অটল। ম্যানেজিং কমিটি, আমার প্রিয় জলিল স্যার, নলেরচরের মৌলভী স্যার ওসমান গণি, বাঘাডোবার ছক্কুর স্যার, মাসুদ স্যার হেড স্যারকে বল্লেন-টেস্ট পরিক্ষা নাদিলেও সমস্যা কিসের? আমাদের ছাত্র ঐতিহাসিক খেলায় অংশ নিয়েছে। জিতেছে। সংবর্ধনা-ক্রেস্ট পেয়েছে। এটা আমাদেরই গৌরব। তাছাড়া চৌধুরী ছাত্র হিসেবে এত নরমাল নয়। তাকে এসএসসির ফরম পূরণ করতে দিন। তার প্রতি আমাদের দোয়া আছে। সে পাশ করবেই। এরপর খালেক স্যার আমাকে এসএসসি পরিক্ষা দেয়ার সুযোগ করে দেন। ইনশাল্লাহ পরিক্ষা পাশও করি। আমিও বেঁচে আছি। কিন্তু নেই শুধু আমার পরম শ্রদ্ধার খালেক স্যার।

স্বাধীনতার যুদ্ধচলাকালে জালালপুরের আ: বারেক চেয়ারম্যান, বীরমুক্তিযোদ্ধা মজিবর রহমান ফারাজী, মহিরামকুলের মিজান, এবং ক্যাপ্টেন সালাহ উদ্দিনসহ অনেক মুক্তিযোদ্ধাদের গোপনে খাদ্য-পানীয় সরবরাহ করতাম। পাকবাহিনীরা টের পেয়ে আমাকে মেলান্দহ রেলস্টেশন থেকে গ্রেপ্তার করে দেওয়ানগঞ্জ পাকসেনা ক্যাম্পে নিয়ে যায়। দেওয়ানগঞ্জে রেলক্রসিংয়ের সময় কৌশলে পাকসেনাদের চোখে ফাঁকি দিয়ে পালিয়ে জীবনে রক্ষা পাই।

এরপর সেনাবাহিনীতে থাকাকালে তৎকালীন জিয়াউর রহমানের আমলে অনেক সেনাই আটক ছিলেন। সাভার ক্যান্টমেন্ট আটকৃতদের খাদ্যসরবরাহ করতাম। ওই সময় আটকৃত ক্যাপ্টেন সালাহ উদ্দিন আমাকে চিনে ফেলেন। আমাকে নাম ধরে ডাকেন। আমার বাড়ি মেলান্দহে সেটাও বলেন। যুদ্ধকালে আমি তাঁকে খাদ্য-পানীয় সরবরাহ করেছি। তাও বলেন। কিন্তু সেই দু:সময়ের কারণে সালাহ উদ্দিনের কাছে পরিচয় গোপন রেখেই সেবা দিয়েছি। শফিক বঙ্গবন্ধুর সমর্থক। বর্তমানে মেলান্দহ পৌর শ্রমিক লীগের সিনিয়র সহসভাপতি নির্বাচিত হয়ে আলোচনায় আসেন।
⇘সংবাদদাতা: মো. শাহ্ জামাল

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top