
লিয়াকত হোসাইন লায়ন,ইসলামপুর প্রতিনিধি॥ আসন্ন সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে সারাদেশে হামলা-মামলা, গুলির ঘটনায় জনমনে সংশয় ও উৎকন্ঠা তৈরি হয়েছে। তবে কিছুটা ব্যতিক্রম চিত্র দেখা যাচ্ছে যমুনা-ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার শান্তিপ্রিয় দরিদ্র জনপদ জামালপুর-২ (ইসলামপুর) আসন। এখানে রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও ভোটারদের স্বহবস্থানে রয়েছে। এ আসনের রাজনৈতিক নেতাদের সোর্হাদ্যপূর্ণ ও ভ্রাতৃত্বপূর্ণ মনোভাব রাজনীতে ইতিবাচক হিসেবে নজির সৃষ্টি করতে পারে।
১২টি ইউনিয়ন ও এক পৌর সভা নিয়ে জামালপুর-২ আসন। ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ২১হাজার ৩১৪ জন। যমুনা-ব্রহ্মপুত্র নদনদী আসটিকে ৩ ভাগে বিভক্ত করে রেখেছে।
আওয়ামী লীগের ঘাঁটিখ্যাত জামালপুর-২ আসনে ১৯৬৯ থেকে আওয়ামী লীগের রাশেদ মোশারফ ৬ বার, জাপার আশরাফুদৌলা পাহলোয়র ১ বার, বিএনপির সুলতান মাহমুদ বাবু ২ বার ও আওয়ামী লীগের বর্তমান এমপি ফরিদুল হক খান ২ মেয়াদে এমপি হয়েছেন।
২০০১ সালে বিএনপির সুলতান মাহমুদ বাবু আওয়ামী লীগের রাশেদ মোশারফকে পরাজিত করে এমপি নির্বাচিত হন। ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনেও তিনি এমপি ছিলেন। এমপি হয়ে এলাকার উন্নয়ন করায় দলের নেতকর্মীরা তাকে ইসলামপুরের উন্নয়নের রূপকার উপাধি দিয়েছেন।
বাবুর বাড়ি ব্রহ্মপুত্র নদের পূর্বাঞ্চলে হওয়ায় আঞ্চলিকতার টানে ৪ ইউনিয়নে তার জনপ্রিয়তা রয়েছে। সফল এমপি হিসাবে জনগণের মাঝে যথেষ্ট গ্রহণযোগ্যতাও রয়েছে। এবার খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা সাবেক মন্ত্রীপরিষদ সচিব এএসএম আব্দুল হালিমসহ প্রায় হাফ ডজন নেতা দলের মনোনয়ন চাইলেও আসনটি পূনঃ উদ্ধারে বিএনপি বাবুর হাতেই তুলে দিয়েছে ধানের শীষ প্রতীক। তবে তিনি এখনো মনোনয়ন বঞ্চিত ও তার ব্যবহারে অভিমান করে থাকা নেতাকর্মীদের পাঠে নামাতে পারেনি।
২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের ফরিদুল হক খান সুলতান মাহমুদ বাবুকে হারিয়ে প্রথম ও ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ২য় মেয়াদে এমপি হন। গত ১০ বছরে ব্রহ্মপুত্র নদের উপর দুটি সেতু নির্মাণ, যমুনার বামতীর সংরক্ষণ প্রকল্প বাস্তবায়নসহ এলাকায় ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন। উন্নয়ন কাজের জন্য সর্মথকদের নিকট কর্মবীর খ্যাতিও পেয়েছেন তিনি।
এবার প্রার্থী পরিবর্তনের দাবি উঠলেও আসনটি ধরে রাখতে ফরিদুল হক খানকেই নৌকার মাঝি করে পাঠিয়েছে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ড। দলের সিদ্ধান্ত মেনে ইতোমধ্যে মনোনয়ন ও পদবঞ্চিত নেতারা নৌকার বিজয় নিশ্চিত করতে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে নৌকার পালে হাওয়া লাগাতে গণসংযোগ ও সভা সমাবেশ করেছেন। এতে নৌকার পালে সু-বাতাস বইতে শুরু করেছে। এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন সেক্টর কমান্ডার মেজর জেনারেল খালেদ মোশারফ (বীরউত্তম) এর মেয়ে সংরক্ষিত আসনের এমপি মাহজাবিন খালেদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সাবেক পৌর মেয়র জিয়াউল হক জিয়াসহ হাফ ডজন নেতা।
এদিকে আওয়ামী লীগ মহাজোটের বাইরে ১৩২ আসন জাতীয় পার্টিকে উম্মূক্ত করে দেওয়ায় নতুন ইসলামপুর গড়ার স্বপ্ন নিয়ে জাপার লাঙ্গল প্রতীকে প্রার্থী হয়েছেন বিশিষ্ঠ ব্যবসায়ী মোস্তফা আল মাহমুদ। তিনি ভোটারদের নতুন নতুন স্বপ্ন দেখাচ্ছেন। মাহমুদ যমুনার তীরবর্তী অঞ্চলের বাসিন্দা হওয়ায় ওই অঞ্চলে আঞ্চলিক ঐক্য করারও চেষ্টা করছেন তিনি।
সিপিবির সাবেক প্রেসিডেন্ট বর্ষিয়ান নেতা মনজুরুল আহসান খান দল থেকে অবসর নিলেও শ্রমিকের প্রতীক (কাস্তে) নিয়ে এবারও নির্বাচন করেছেন। তিনি এ আসনে একাধিকবার নির্বাচন করলেও বিজয়ী হতে পারেননি। জীবনের শেষ বয়সে আবারও এসেছেন ভোটের মাঠে।
এ ছাড়া ইসলামী আন্দোলনের মুফতি মিনহাজ উদ্দিন (হাতপাখা) নিয়ে নির্বাচন করছেন। তবে নির্বাচনী এলাকার ভোটাররা তাকে কখনো দেখেনি বলে জানা গেছে।
সাধারণ ভোটারা জানান, ইসলামপুর একটি দরিদ্র উপজেলা হলেও এ উপজেলার মানুষ অত্যন্ত শান্তিপ্রিয় ও ভ্রাতৃত্বপূর্ণ। অবাধ, সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে এলাকার উন্নয়নে পরীক্ষিতদের মধ্য থেকেই কাউকে আবারো এমপি দেখতে চান তারা। তাদের অভিমত, এ আসনে কর্মবীর ও রূপকারের মধ্যে লড়াই হলেও উন্নয়নের রুপকারই ধারা অব্যহত রাখবেন বলে আশা করছে।
⇘সংবাদদাতা: লিয়াকত হোসাইন লায়ন
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।