বগুড়ার প্রবীণ রাজনীতিবিদ মমতাজ উদ্দিন আর নেই

S M Ashraful Azom
0
 বগুড়ার প্রবীণ রাজনীতিবিদ মমতাজ উদ্দিন আর নেই
নিজস্ব প্রতিবেদক, বগুড়া : উত্তর জনপদের প্রবীণ রাজনীতিবিদ, বগুড়ায় স্বাধীনতার প্রথম পতাকা উত্তোলনকারী, বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ¦ মমতাজ উদ্দিন সিআইপি আর নেই। তিনি রবিবার ভোর ৫টায় বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবৃস্থায় হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাহে রাজেউন)।

মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর। তিনি স্ত্রী, ২ ছেলে, ২ মেয়ে, নাতি নাতনি, আত্মীয় স্বজনসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। মমতাজ উদ্দিন শনিবার বিকেলে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (শজিমেক) ভর্তি হয়েছিলেন। তার শ্বাসকষ্ট, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ ছিল। ভোর রাতে হঠাৎ করেই তার অবস্থার অবনতি হয়।

তাঁর মৃত্যু বগুড়ায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তাকে শেষ বারের মত দেখতে মানুষের ঢল নেমেছিল শহরের কালিতলার কাটনারপাড়া হটু মিয়া লেনের নিজ বাসভবনে। বর্ষিয়ান এ রাজনীতিবিদের মৃত্যুতে শুধু আওয়ামী লীগ নয়, বগুড়াবাসীও তাদের একজন অভিভাবককে হারালো।

বাদ যোহর শহরের আলতাফুন্নেছা খেলার মাঠে মরহুমের প্রথম জানাযা নামাযে হাজার হাজার মানুষ অংশগ্রহণ করেন। জানাযা নামাযের পূর্বে বক্তব্য রাখেন মরহুমের ছেলে বগুড়া চেম্বার অব কমার্স সভাপতি মাসুদুর রহমান মিলন।

এর আগে মমতাজ উদ্দিনের মৃত্যুতে সাত দিনের শোক শোক কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। রোববার থেকে শুরু হয়ে সপ্তাহব্যাপী এই কর্মসূচির অংশ হিসেবে জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়নের দলীয় কার্যালয়গুলোতে কালো পতাকা উত্তোলন করা হবে। এছাড়া, এ সাত দিন কালো ব্যাচ পরবেন নেতাকর্মীরা। এই শোক কর্মসূচি ঘোষণা করেন সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু সুফিয়ান শফিক।

তাঁর জানায়ায় অংশগ্রহণ করেন রাজশাহী সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এমপি, বগুড়া-১ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল মান্নান, বগুড়া-৫ আসনের এমপি আলহাজ্ব হাবিবর রহমান, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মজিবর রহমান মজনু, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ডা. মকবুল হোসেন, জেলা বিএনপির সভাপতি ভিপি সাইফুল ইসলামসহ আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জাসদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

জানাযা শেষে ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন করেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে শোকসন্তপÍ পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান। এ সময় বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এর আগে তাঁকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়।

জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক সুলতান মাহমুদ খান রনি জানান, তিনি স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য কয়েকদিন আগে কোলকাতা গিয়েছিলেন। সেখান থেকে বুধবার ভোরে বগুড়ায় আসেন। শনিবার সন্ধ্যার দিকে তিনি অসুস্থবোধ করলে তাকে প্রথমে বগুড়া ডায়াবেটিক হাসপাতালে এবং পরে শজিমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রাত ৩টার দিকে তাকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। সেখানেই ভোর ৫টার দিকে তিনি ইন্তেকাল করেন।

বাদ যোহর শহরের আলতাফুন্নেছা খেলার মাঠে লাশের প্রথম জানাযা, বাদ আছর গ্রামের বাড়ি মানিকচক হাইস্কুলে ২য় জানাযা নামায শেষে সদর উপজেলার শাখারিয়া ইউপির কদিমপাড়া গ্রামে বাবা-মা’র কবরের পাশে মরহুমের দাফন সম্পন্ন করা হয়।

এর আগে বেলা ১২টার দিকে মরহুমের মরদেহ বগুড়া প্রেসক্লাবে নিয়ে আসলে সেখানে তাঁকে শ্রদ্ধা জানিয়ে বক্তব্য রাখেন ক্লাবের সভাপতি মোজাম্মেল হক লালু, সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল আলম নয়ন।

তিনি স্থানীয় দৈনিক পত্রিকা প্রভাতের আলোর সম্পাদক ছিলেন। সেই সুত্রে বগুড়া প্রেসক্লাবেরও সদস্য ছিলেন।

প্রেসক্লাব থেকে মমতাজ উদ্দিনের মরদেহ শহরের টেম্পল রোডে দলীয় কার্যালয়ের সামনে রাখা হয়।
বর্ষিয়ান রাজনীতিবিদ বীর মুক্তিযোদ্ধা মমতাজ উদ্দিন দীর্ঘসময় ধরে বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বিএনপি জামায়াতের ঘাটি খ্যাত বগুড়ায় আওয়ামী লীগ সুসংগঠিত করতে নিরলসভাবে কাজ করেছেন। গড়ে তুলেছেন শক্তিশালী সাংগঠনিক কাঠামো।

 রাজনীতির পাশাপাশি ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতৃত্ব দিয়েছেন। বগুড়া চেম্বার অব কমার্সের সভাপতিসহ এফবিসিসিআই এর পরিচালক ছিলেন তিনি। সিআইপি নির্বাচিত হয়েছেন একাধিকবার। ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন তিনি। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রিয় নির্বাহি কমিটির সিনিয়র সদস্য আলহাজ্ব মমতাজ উদ্দিন বগুড়া করোনেশন স্কুলের ছাত্র থাকাকালীন সময়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যোগদান করেন। ১৯৬৯ সালে বৃহত্তর বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। স্বাধীনতা যুদ্ধে মুজিব বাহিনীর প্রথম ব্যাচ হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ এবং বগুড়ার কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ৭২ সালে যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক, ৭৫ পরবর্তী বঙ্গবন্ধু হত্যার পর দুঃসময়ে বগুড়ায় আওয়ামী লীগের হাল ধরেন তিনি। প্রথমে প্রচার সম্পাদক, তারপর সাংগঠনিক সম্পাদক পরবর্তী সময়ে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৮২ সালে কাউন্সিলের মাধ্যমে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৯২ সালে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন, মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।

২০১৮ সালে ২০তম জাতীয় কাউন্সিলে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের অন্যতম সদস্য নির্বাচিত করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক হিসেবে ১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ আলতাফুন্নেছা খেলার মাঠে স্বাধীনতার প্রথম পতাকা উত্তোলনকারী মমতাজ উদ্দিন বগুড়া সদরে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের নির্বাচনে ৭৪ হাজার ৭০০ ভোট পেয়েছিলেন।


⇘সংবাদদাতা: সেবা ডেস্ক

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top